Advertisement
E-Paper

বিশ্বজিৎ দেখালেন রিজার্ভ বেঞ্চও তৈরি

ভিড়ের মধ্যে তাঁকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন স্যামি ওমোলো। লাল-হলুদের সহকারী কোচের গলা আবেগে অবরুদ্ধ, ‘‘মিশন সফল। এ বার আই লিগ।’’ তবু তিনি নিরুত্তাপ।

প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৯
লিগের রং লাল-হলুদ। বৃহস্পতিবার বারাসতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

লিগের রং লাল-হলুদ। বৃহস্পতিবার বারাসতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ইস্টবেঙ্গল-২ (প্রহ্লাদ, রফিক)

সাদার্ন সমিতি-১ (ভিকি)

ভিড়ের মধ্যে তাঁকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন স্যামি ওমোলো। লাল-হলুদের সহকারী কোচের গলা আবেগে অবরুদ্ধ, ‘‘মিশন সফল। এ বার আই লিগ।’’

তবু তিনি নিরুত্তাপ।

মাঠের ভিতরে উদ্দাম নাচ চলছে ফুটবলারদের। গ্যালারিতে আবির, লাল আর হলুদ। হাতে মশাল। আকাশে বেলুন। আতসবাজির শব্দ আর ঢাকের বাদ্যিতে যেন এক মাস আগেই শারদোৎসবের বোধন বারাসতে। ইতিহাসের লিগ জয়ের সরকারি ট্রফি আজ, সমরেশ-সুভাষদের রাজ-সিংহাসনে বসার সুযোগ আজ।

তবু তিনি নিরুত্তাপ।

ডাগ আউটের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে। স্যামি থেকে শুরু করে অ্যালভিটো ডি’কুনহা, ফুটবলাররা, সবাই এক-এক করে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে ঢোকার জন্য টানাটানিও করছেন কেউ কেউ। কিন্তু বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য নড়লেন না। কিছু বললেন না। অবাক দৃষ্টিতে শুধু স্টেডিয়ামের চার দিকটা একবার দেখে ঢুকে গেলেন ড্রেসিংরুমে।

প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পর্শ করার দিনে (অপরাজিত থেকে লিগ জয়) কী হল লাল-হলুদ কোচের? এত আবেগহীন, এত নিরুত্তাপ তিনি? প্রশ্নটা করতে অদ্ভুত একটা জবাব দিলেন বিশ্বজিৎ, ‘‘জীবনে এত চড়াই-উতরাই দেখেছি যে, আবেগের বহিঃপ্রকাশ হয় না এখন। লিগ জিতেই পরের মিশন নিয়ে চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম। বড় ক্লাবে কোচের পদ হল দিল্লি কা লাড্ডুর মতো। হট সিট। আর অপমানিত হয়ে এই চেয়ার হারাতে চাই না।’’

অপরাজিত থাকার চেয়ারটা তো আর একটু হলে বৃহস্পতিবার চলে যাচ্ছিল। এ দিন প্রথম টিমের বেশির ভাগ প্লেয়ারদের খেলাননি ইস্টবেঙ্গল কোচ। দাদাদের বদলে নামলেন ভাইরা, খারাপ করেননি। ‘দামি’ জিনিসে দাগ লাগতে দেননি। কিন্তু মনে রাখার মতো ফুটবলও উপহার তাঁরা দেননি। ‘অপরাজিত’ ট্যাগ নিয়ে কলকাতা লিগ ক্লাবের ট্রফি ক্যাবিনেটে ঢুকল ঠিকই, কিন্তু বারাসত একটা প্রশ্নও তুলে দিল। অ্যান্টনি সোরেন, জিতেন মুর্মুরা তাঁদের ক্ষমতা অনুযায়ী ঠিকঠাক। কিন্তু বিদেশিরা? ডু ডংকে একটা সাদার্ন ম্যাচ দিয়ে বিচার করা মূর্খামি। বিরিয়ানির পর শুক্তো খেতে কার-ই বা ভাল লাগে। কিন্তু র‌্যান্টি মার্টিন্স? এখনও পুরনো র‌্যান্টির ধারেকাছে নেই। বেলো রজ্জাক ডার্বিতে ডুডুকে আটকেছেন। কিন্তু এ দিন একটা গোল খাইয়ে দিলেন। শেষাক্ত দু’জনকে নিয়ে আইলিগ অভিযানের আগে খুচরো টেনশন তাই থাকছেই।

লাল-হলুদ কোচকে দেখা গেল, এটা নিয়েও নিরুত্তাপ। বিদেশিদের ব্যাপারে ঢুকলেন না। বরং বলে গেলেন, ‘‘অনেকের অভিষেক হল এ ম্যাচে। তবে আমার দলের কোনও ফুটবলারই সিস্টেমের বাইরে নয়। এই ম্যাচে এরা যে ফুটবল খেলেছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট।’’ স্বদেশীদের নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়াও যায়। যেমন বাবু মণ্ডল। যেমন অভিনব বাগ। দু’জনেই এ দিন প্রথম নামলেন, আর লেটার দেওয়া না গেলেও প্রথম ডিভিশনে পাশ। অনামী প্রহ্লাদ, মাঝারি রফিকরাও বেশ ভাল। বিশেষ করে রফিক। এটিকে তাঁকে এ বার টিমে রাখেনি। কিন্তু রফিক এ দিন বোঝালেন, কেন তিনি স্পেশ্যাল। মেহতাবদের অনুপস্থিতি টের পেতে দিলেন না। বাড়তি দায়িত্ব নিলেন। গোল করলেন। বোঝালেন, ইস্টবেঙ্গলের প্রথম এগারো যতটা তৈরি, তেমন তৈরি লাল-হলুদের রিজার্ভ বে়ঞ্চও। আশ্চর্য লাগে যখন রফিকের মতো প্রতিভারা আইএসএল থেকে মুছে যান। রফিকের নিজেরও বোধহয় কাটা ঘা সময় নামক ওষুধে মিলিয়ে গিয়েছে। বলে ফেলেন, ‘‘এটিকে-র কথা মাথায় এলে সবার প্রথমে আমার কথাই মনে পড়বে। ফাইনালের গোলটা তো আর মুছে ফেলা যাবে না। আর মোছা যাবে না ফুটবলার হিসেবে যতটুকু যা করে যাব।’’ সবই ঠিক। শুধু ওই বিদেশিদের নিয়ে মৃদু খচখচানিটা না থাকলেই বোধহয় ভাল হত। মধুরেণ সমাপয়েৎ হত।

কে জানে, সেটা ভাবাও আবার ঠিক কি না। বৃহস্পতিবারের বারাসত হয়তো ছিল একটা অন্য রকম দিন। প্রতিষ্ঠার বেদিতে নতুন প্রতিভার বিচ্ছুরণের দিন!

ইস্টবেঙ্গল: অভ্র, রাহুল, অভিনব, বেলো, বাবু, সোরেন, অভিনাশ, রফিক, ডং (র‌্যান্টি), জিতেন (জগননাথ), প্রহ্লাদ।

East Bengal CFL Southern Samity kolkata football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy