Advertisement
E-Paper

ডং ধ্বনিতে খুলে গেল লাল-হলুদের লিগ দরজা

যত কাণ্ড শিলিগুড়িতে নাম দিয়ে সঞ্জয় সেন একটা গল্প লিখতেই পারেন আই লিগের পরে।মোহনবাগানকে নিয়ে কত কাণ্ডই না হল শেষ তিন দিনে!

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৭
নায়কের আনন্দাশ্রু। র‌্যান্টির অভিনন্দন।-উৎপল সরকার

নায়কের আনন্দাশ্রু। র‌্যান্টির অভিনন্দন।-উৎপল সরকার

ইস্টবেঙ্গল-২ : মোহনবাগান-১

(ডং-পেনাল্টি সহ ২) (কাতসুমি)

যত কাণ্ড শিলিগুড়িতে নাম দিয়ে সঞ্জয় সেন একটা গল্প লিখতেই পারেন আই লিগের পরে।

মোহনবাগানকে নিয়ে কত কাণ্ডই না হল শেষ তিন দিনে!

ডার্বি খেলতে আসার দিন প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে বিমান-বিভ্রাটে পড়েছিল সঞ্জয়ের দল।

শুক্রবার বড় ম্যাচের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার আগে কাতসুমিদের টিম বাস চলে গিয়েছিল অনেক দূরের অন্য মাঠে।

শিলিগুড়ি এসেও টিমের হৃদপিণ্ড সনি নর্ডি চোটের জন্য মাঠে নামতে পারলেন না। বান্ধবী নিয়ে বসে রইলেন হোটেলেই।

কোচ সঞ্জয় সেন তো সাসপেন্ড হয়ে এমনিতেই মাঠের বাইরে। তাঁকে ডার্বি দেখতে হল স্টেডিয়ামের একটা খুপরি ঘরে বসে টিভিতে। খো-খো সংস্থার অফিসে।

ইস্টবেঙ্গলের বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে ডু ডংয়ের গোলের পর আর এক কাণ্ড। সঞ্জয়ের সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীকেও রেফারি সন্তোষ কুমার লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দিলেন মাঠ থেকে। চতুর্থ রেফারির সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগে। মাঠের ভিতর বাগান পুরোপুরি অভিভাবকহীন থাকল বড় ম্যাচে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। প্রায় ৬৬ মিনিট। কলকাতা ডার্বিতে যা কখনও ঘটেনি।

আর শনিবার বাগানে সর্বশেষ কাণ্ডটি ঘটালেন দেশের এক নম্বর স্ট্রাইকার জেজে। ফুটবলজীবনের সোনালি বছরেই কিনা জঘন্যতম পেনাল্টি নষ্ট করে বসলেন! এবং সেটা মোক্ষম সময়ে। একেবারে খেলার শেষ মূহূর্তে। নইলে ম্যাচ ড্র প্রায় অবধারিত ছিল। নিজের টিমকে তো ডোবালেনই জেজে। সঙ্গে আই লিগ ডাবলের পথেও বিছিয়ে দিলেন বড় কাঁটা।

কেন ওই রকম প্রেশার কুকার পরিস্থিতিতে পেনাল্টি মারতে গেলেন জেজে? কেন মারলেন না পেনাল্টি বিশেষজ্ঞ লুসিয়ানো কিংবা কর্নেল? যা নিয়ে ম্যাচের পর কাঞ্চনজঙ্ঘায় বাগান ড্রেসিংরুম উত্তাল। টিম হোটেলও। জেজেই নাকি জোর করে নিজে মারতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন সবাই।

ব্যর্থদের কখনও কেউ মনে রাখে না। ইতিহাস মনে রাখে অসাধারণ কামব্যাককে। মনে রাখে তাঁকে, যিনি নাটকীয় ভাবে ফিরে আসেন সঠিক মঞ্চ বেছে নিয়ে।

জেজের ‘ভিলেন’ হওয়ার দিনে তাই ইস্টবেঙ্গলের ডু ডংয়ের দিকেই যাবতীয় সার্চলাইট।

কলকাতা লিগের প্রথম ডার্বিতে অসাধারণ জোড়া ফ্রি-কিক গোলের পর তো হারিয়েই গিয়েছিলেন লাল-হলুদের কোরিয়ান মিডিও। প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। আর নিঃশব্দে বাড়ি ফিরে যেতেন। রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখায় কোচের সঙ্গে ঝামেলা করেছেন। ড্রেসিংরুমে ঝামেলা পাকিয়েছেন। দিনের পর দিন টিমে জায়গা হয়নি। এ দিনও তো তাঁকে পরিবর্ত হিসেবে নামানো হয়েছিল। কোচ-কর্তা, দু’তরফই তাঁকে প্রায় বাতিলই করে দিয়েছিলেন। সেই কোণঠাসা অবস্থা থেকে কী অসাধারণ প্রত্যাবর্তন! ফিনিক্স পাখির মতো উত্থান। ডুবতে ডুবতে ছিটকে ওঠা। খাদের কিনারা থেকে ফেরা। কোন উপমাটা আজকের ডংয়ের নামের পাশে জুতসই? হয়তো প্রতিটাই!

কেউ কেউ আবার ডং-উপাখ্যানের সঙ্গে তুলনা করছেন তিয়াত্তরের সুভাষ ভৌমিককে। ইস্টবেঙ্গল যখন আই লিগ খেতাব জয়ের লড়াইয়ের হাইওয়েতে ওঠার জন্য মরিয়া তখনই ডার্বিতে ডংয়ের জোড়া গোল। হোক না তার একটা বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে। পরিস্থিতি বিচারে পেনাল্টি কিক মারাটাও তো তীব্র চাপের ছিল ডংয়ের কাছে। র‌্যান্টি-মেন্ডিরা নিজে কিক না মেরে ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। ম্যাচের পর র‌্যান্টি বলছিলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত ছিলাম ও পারবেই। তাই ওকে মারতে পাঠিয়েছিলাম। জানেন, প্রচুর পরিশ্রম করেছে ডং। জানতাম ও নিজের ফর্মে ফিরবেই।’’

সেই সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে কী হাসি শনিবাসরীয় ডার্বির মহানায়কের। ডংয়ের হাসিটা অবশ্য আরও চওড়া হয়েছিল যখন তাঁর এতদিনের তীব্র সমালোচক কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলে দিলেন, ‘‘ডং প্রমাণ করেছে ফ্রি কিক ছাড়াও গোল করতে পারে। ওর এই জেদটাই টেনে বার করতে অনেক রকম টোটকা ব্যবহার করেছি। তার ফসল উঠল।’’

ডং-ধ্বনিতে ইস্টবেঙ্গল জুড়ে ফের পূর্ণিমার আলো। অন্ধকার কাটিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ে প্রবল ভাবে ফিরে এল বিশ্বজিতের দল। ম্যাচের শেষে স্টেডিয়াম জুড়ে লাল-হলুদ সমর্থকদের ডার্বি জয়ের উৎসব তো চললই। উত্তরবঙ্গের প্রধান শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটও লাল-হলুদ পতাকায় ঢাকা। ভোটের মুখে মশাল জ্বালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, তাই গ্যালারিতে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার মোবাইলের আলো। উচ্ছ্বাস প্রকাশের নতুন হাতিয়ার হয়ে। উড়ল থোকা-থোকা লাল, হলুদ আবির। টিম বাসের দিকে পাগলের মতো ছুটলেন সমর্থকরা। শিলিগুড়িতে ইস্টবেঙ্গল জিতলে যা-যা প্রত্যাশিত আর কী।

কিন্তু যেটা অপ্রত্যাশিত সেটাও তো ঘটল! ডার্বির চাপ থেকে বেরিয়ে দু’দলই জেতার জন্য মরিয়া মনোভাব দেখাল খেলায়। ফলে ম্যাচটা বেশ উপভোগ্য হল। পেন্ডুলামের মতো প্রায় প্রতি মুহূর্তে এ-বক্স থেকে ও-বক্স দুলল। উত্তেজক-হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে ঠিকই, কিন্তু মোহনবাগানও এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট পেতে পারত। জেজের পেনাল্টি মিস ছাড়াও গ্লেনের একটা শট গোললাইন থেকে ফেরান বেলো রজ্জাক। সনির মতো তারকা স্ট্রাইকার নেই, মাঠে কোনও কোচ নেই। তা সত্ত্বেও ০-২ পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েননি কাতসুমিরা।

বড় ম্যাচ জিততে না পারলে খেতাবের লড়াই থেকে কার্যত ছিটকে যেত বিশ্বজিতের টিম। সে জন্য বাগানের তুলনায় অনেক বেশি মরিয়া ছিল ইস্টবেঙ্গল। সেটা মাঠে তাদের ফুটবলারদের শরীরী ভাষা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অঙ্ক কষা ফুটবলের বদলে মেহতাবদের মধ্যে জিততেই হবে-র মরণপণ তাগিদটা বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরাল। সে জন্য রক্ষণে প্রচুর ফাঁকফোকর, মাঝমাঠে ভাল পাসারের অভাব সত্ত্বেও ম্যাচটা ডং-র‌্যান্টিরা শেষমেশ জিতে গেলেন। এর পরেও বাগান তীব্র চাপ থেকে বেরিয়ে যদি শেষ পর্যন্ত আই লিগ জেতেও, তা হলেও তাদের আক্ষেপ কিন্তু থেকেই যাবে মরসুমে একটাও ডার্বি না জেতারট্রফি জিতলেও ডার্বি না জেতাটা যে এক গামলা দুধে এক ফোঁটা চোনা। অন্তত বঙ্গ ফুটবলে।

ইস্টবেঙ্গল: ব্যারেটো, রাহুল, অর্ণব, বেলো, রবার্ট, অবিনাশ (ডু ডং), মেহতাব, লোবো (শেহনাজ), সঞ্জু (রফিক), র‌্যান্টি, মেন্ডি।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, প্রীতম, লুসিয়ানো, কিংশুক, ধনচন্দ্র, মণীশ (প্রবীর), কাতসুমি, লেনি (শৌভিক), প্রণয়, জেজে, গ্লেন।

derby east bengal mohun bagan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy