Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লজ্জার হার তুলে দিল ‘ক্লার্ক হঠাও’ আওয়াজ

সময় কত দ্রুত সব পাল্টে দেয়। অ্যাসেজ শুরুর আগে ইংরেজ অধিনায়ককে নিয়ে ব্রিটিশ ক্রিকেটমহলে নানা রকম কথা হত। অধিনায়ক হিসেবে তিনি যথেষ্ট প্রো-অ্যাক্টিভ নন, ইংলিশ ক্রিকেটের তাঁকেই অধিনায়ক রেখে দেওয়া উচিত কি না, এ জাতীয় কথাবর্তা কম হয়নি। মার্ক বুচার থেকে শেন ওয়াটসন, কেউ ছাড়েননি।

কাজ শেষ। ইংল্যান্ডকে টেস্ট জিতিয়ে ফিরছেন ইয়ান বেল। অ্যাসেজে ১-২ পিছিয়ে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। ছবি: রয়টার্স।

কাজ শেষ। ইংল্যান্ডকে টেস্ট জিতিয়ে ফিরছেন ইয়ান বেল। অ্যাসেজে ১-২ পিছিয়ে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০৪:৩২
Share: Save:

সময় কত দ্রুত সব পাল্টে দেয়।

অ্যাসেজ শুরুর আগে ইংরেজ অধিনায়ককে নিয়ে ব্রিটিশ ক্রিকেটমহলে নানা রকম কথা হত। অধিনায়ক হিসেবে তিনি যথেষ্ট প্রো-অ্যাক্টিভ নন, ইংলিশ ক্রিকেটের তাঁকেই অধিনায়ক রেখে দেওয়া উচিত কি না, এ জাতীয় কথাবর্তা কম হয়নি। মার্ক বুচার থেকে শেন ওয়াটসন, কেউ ছাড়েননি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভাল করার পরেও কুকের ক্যাপ্টেন্সি দর্শন নিয়ে অবিরাম প্রশ্ন উঠেছে। কারও কারও এটাও মনে হয়েছিল, এটাই না অধিনায়ক কুকের শেষ অ্যাসেজ হয়ে যায়।

শুক্রবার এজবাস্টনে মাত্র তিন দিনে অস্ট্রেলিয়াকে কচুকাটা করে দেওয়ার পর টিভি ক্যামেরার সামনে যে অ্যালিস্টার কুক এলেন, তাঁর মুখচোখ দেখলে মনে হবে না ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে কোনও রকম দুর্যোগ তাঁকে এখনও তাড়া করছে বলে। কুক বললেন, ‘‘এটা একশো চল্লিশ অলআউটের উইকেট ছিল না। জিমি আর ফিন আসলে দুর্দান্ত বল করেছে।’’ কুক বললেন, ‘‘ফিনের জন্য এটা বড় পরীক্ষা ছিল। কিন্তু খেলা তো এ রকমই। পরীক্ষা নেয়, আবার পুরস্কৃতও করে।’’ কুক যেন বুঝতে পারছিলেন তাঁর উপর প্রাক-অ্যাসেজ দুর্যোগের মেঘটা একটু সরে গিয়েছে। সরে গিয়েছে কাছেই আর একজনের মাথার উপর।

মাইকেল ক্লার্ক।

যাঁকে নিয়ে এখন ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলছে ক্রিকেটবিশ্বে। অস্ট্রেলীয় মিডিয়া বলাবলি করছে, আর কত দিন? কেউ কেউ সূক্ষ্ম প্রশ্ন গুঁজে দিচ্ছেন আলতো করে— ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে ক্লার্ককে টস করতে যেতে দেখা যাবে তো?

সময় শুধু দ্রুত পাল্টে যায় না, সময় সময় তা অসম্ভব নিষ্ঠুরও হয়। তিন দিনে অস্ট্রেলিয়ার হারার কথা ছিল। অস্ট্রেলিয়া তিন দিনেই হেরেছে। গত কাল তিন উইকেট হাতে পড়েছিল। লিড ছিল মোটে তেইশ রানের। আজ সেটা ১২৩ হল। ইংল্যান্ডের ওই পুঁচকে টার্গেট তুলতে দু’টোও গেল না। কিন্তু বলাবলি চলছে, এটা আর হার কোথায় হল? এটা তো মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়ার সম্মানকে এজবাস্টন বাইশ গজে মিশিয়ে চলে যাওয়া হল! ক্লার্ক যার জন্য অধিকাংশে দায়ী। একে তো এমন ভয়াবহ এজবাস্টন উইকেট দেখেও কোন যুক্তিতে তিনি টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন, সেটা দুনিয়ায় একমাত্র মাইকেল ক্লার্কই জানেন। বলা হচ্ছে, ব্যাটিং ফর্মকে জঘন্য বললেও কম বলা হয়। স্লিপে সহজ ক্যাচ ছাড়ছেন। শেন ওয়ার্ন পর্যন্ত ওই ক্যাচ ফেলা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।

এজবাস্টন দর্শক— তারাও তো ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াকে ছেড়ে কথা বলল না। দ্বিতীয় ইনিংসে ইয়ান বেল (৬৫ অপরাজিত) যখন জয় নিশ্চিত করছেন, স্টেডিয়াম থেকে বিদ্রুপ ভেসে এল, ‘সিট ডাউন...ইফ ইউ আর টু-ওয়ান ডাউন!’ তৃতীয় দিন সকাল থেকে যাদের চুপচাপ দেখিয়েছে। কারণ ততক্ষণে অবিশ্বাস্য ভাবে হাফসেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছেন মিচেল স্টার্ক। পিটার নেভিলকেও নড়ানো যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া ৯২-৫ থেকে দু’শো পেরোচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দু’জনেই হাফসেঞ্চুরি করে ফিরে গেলেন। নেভিল ৫৯, স্টার্ক ৫৮। অস্ট্রেলিয়ার অলীক স্বপ্নেরও ওখানেই সমাধি।

ম্যাচ হেরে মাইকেল ক্লার্ক বলে গেলেন, ‘‘চার নম্বরে আমার ফর্ম আমাকে সত্যিই দুশ্চিন্তায় রেখেছে। ইংল্যান্ড ভাল খেলেছে। প্রথম দিন ভাল বল করেছে, এটা বলতে পারি। এর বাইরে কী বলব, জানি না।’’

কে জানে, ক্রিকেটে কোনও কোনও বিষয় হয়তো সত্যিই ব্যাখ্যার বাইরে থাকে। এক বছর আগে এই এজবাস্টন ড্রেসিংরুমের বাইরে অঝোরে কেঁদে ফেলেছিল যে ছেলেটা, সে-ও কি ভাবতে পেরেছিল এক বছর পরে সেই এজবাস্টনেই এমন এক সোনার সময় আসবে? পেস, গতি সব গিয়েছিল। মিডলসেক্সে বল করতে হত ফার্স্ট চেঞ্জ হিসেবে। সেখান থেকে এজবাস্টন। সেখান থেকে ম্যাচে আট উইকেট।

স্টিভ ফিনের ক্রিকেট-জীবনটাও কি ব্যাখ্যাতীত নয়?

অ্যান্ডারসন ‘কাঁটা’

চতুর্থ অ্যাসেজ টেস্টে নেই জেমস অ্যান্ডারসন। কোমরের পেশির চোটে তিনি ছিটকে গিয়েছেন। এজবাস্টন টেস্ট জয়ের পরও তাই একটা কাঁটা থাকছে ইংল্যান্ড শিবিরের জন্য। তৃতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ছ’উইকেট নিয়ে একাই অস্ট্রেলিয়ার বোলিংকে গুড়িয়ে দিয়েছেন অ্যান্ডারসন। তাই চতুর্থ টেস্টে তাঁর না থাকা ইংল্যান্ডের জন্য বড় ধাক্কা। অ্যান্ডারসন নিজে অবশ্য ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে নামার ব্যাপারে আশাবাদী। ‘‘মেডিক্যাল টিম আমার চোট পরীক্ষা করে, হাঁটাচলা দেখে খুশি। খুব গুরুতর চোট বলে তো মনে হচ্ছে না।’’ চতুর্থ টেস্ট শুরু হবে ৬ অগস্ট। আর সিরিজের শেষ টেস্ট ২০ অগস্ট। ইংল্যান্ড বোর্ডের তরফে যদিও জানানো হয়েছে অ্যান্ডারসনের পঞ্চম টেস্টে নামার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে চোট পরীক্ষার পর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE