শোকস্তব্ধ: প্রয়াত প্রিয় নায়ক। বাঁধ মানে না চোখের জল। ছবি রয়টার্স।
বুধবার সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। বছরখানেক আগে দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা নিজের একটা সাদা-কালো ছবিতে স্বাক্ষর করে আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। সমুদ্রসৈকতে প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে বসে আছেন ফুটবল ঈশ্বর। আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।
বসার ঘরেই সেই অমূল্য উপহারটা সাজিয়ে রেখেছিলাম। সারা রাত ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি। অবশ্য আমি একা নই, গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ কাঁদছেন। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের চলে গিয়েছিলাম মারাদোনার বাড়ির সামনে। হাজার হাজার মানুষ সারা রাত ধরে সেখানে রয়েছেন। কেউ কেউ মারাদোনার ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। বছর পঁয়ষট্টির এক বৃদ্ধাকে দেখলাম, পরম মমতায় মারাদোনার ছবি মুছছেন। অনেকেই ফুল নিয়ে এসে ‘ঈশ্বরের’ বাড়ির দরজার সামনে রেখে দিচ্ছেন।
শোকের আবহে একটা দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম। আর্জেন্টিনা ফুটবলে বোকা জুনিয়র্স বনাম রিভার প্লেট মুখোমুখি হওয়া মানেই ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দু’দলের সমর্থকেরা একে অপরকে চিরশত্রু মনে করেন। বোকা জুনিয়র্স বনাম রিভার প্লেট ম্যাচ মানেই শহরে অশান্তি অনিবার্য। যে দল হারবে, তার সমর্থকেরা ক্ষোভে গাড়ি, দোকান ভাঙচুর করবে। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে সংঘাত তো লেগেই রয়েছে। এই দু’দলের ম্যাচ মানেই রক্তারক্তি কাণ্ড। ছোটবেলায় বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেটের ম্যাচ থাকলে আমাকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হত না।
বৃহস্পতিবার সকালে দেখলাম এক মধ্যবয়সি বোকা জুনিয়র্স সমর্থকের বুকে মাথা রেখে শিশুর মতো কাঁদছেন এক রিভার প্লেট সমর্থক। আর এক জন বোকা জুনিয়র্স সমর্থক তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন! মারাদোনার পক্ষেই সম্ভব এ ভাবে দুই যুযুধান দলকে মিলিয়ে দেওয়া। এমনই চৌম্বক আকর্ষণ তাঁর! সকাল ছ’টা নাগাদ মারাদোনার দেহ ওঁর বাড়ি থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হল দেশের প্রেসিডেন্টের বাড়িতে। বিকেল চারটে পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য দরজা খোলা থাকবে। যখন এই লেখা পাঠাচ্ছি, এখানে প্রায় বিকেল তিনটে। বাইরে লক্ষাধিক মানুষের ভিড়। প্রিয় নায়ককে দেখতে যে রকম মানুষের ঢল নেমেছে, সারা রাত দরজা খোলা থাকলেও সকলে দেখতে পাবেন কি না সন্দেহ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy