ভরসা: দুরন্ত ছন্দে ভারতের গোলরক্ষক নীরজ কুমার। টুইটার
এক বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তাঁরা ছিলেন ভারতীয় ফুটবলের মুখ। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার উত্তেজনার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল উৎকণ্ঠাও। রবিবারও একই রকম মনের অবস্থা অভিজিৎ সরকার ও রহিম আলির। দুই বাঙালি বিশ্বকাপার উত্তেজিত আজ, সোমবার কুয়ালা লামপুরে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে। যে ম্যাচের উপরেই নির্ভর করছে আগামী বছর পেরুতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের ভবিষ্যৎ।
এই মুহূর্তে গোয়ায় ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হয়ে আই লিগের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত অভিজিৎ ও রহিম। কিন্তু তাঁদের মন পড়ে রয়েছে কুয়ালা লামপুরে। রবিবার গোয়া থেকে ফোনে অভিজিৎ বললেন, ‘‘আশা করব, দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে আমরা ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারব।’’
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও পর্যায়ে জিততে পারেনি ভারতীয় ফুটবল দল। এই প্রতিযোগিতেও দুরন্ত ফর্মে তারা। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে ১২ গোল করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ভারতীয় ফুটবল দলের এক সদস্য কুয়ালা লামপুর থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়া দুর্ধর্ষ দল। ঝড়ের গতিতে আক্রমণে উঠে গোল করে। ওদের বিরুদ্ধে অঙ্ক করে খেলতে না পারলে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে।’’
অভিজিৎ-রহিম অবশ্য অতীত নিয়ে ভাবতে চান না। তাঁদের কথায়, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ শক্তিশালী দল ঠিকই। কিন্তু অপরাজেয় নয়। ইরানও তো ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তা সত্ত্বেও ওরা আমাদের হারাতে পারেনি। আমরা জিততেও পারতাম। তাই আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে ভাবলে চলবে না। নতুন ভাবে শুরু করতে হবে।’’
অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের ফুটবলারদের উজ্জীবিত করার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অভিজিৎ। নিয়মিত কথাও বলছেন তাদের সঙ্গে। কী বললেন উত্তরসূরিদের? বাংলার প্রতিশ্রুতিমান স্ট্রাইকার বললেন, ‘‘ফোনে ওদের অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। ওদের বলেছি, প্রতিপক্ষ কে তা মাথায় রাখলে চলবে না। মনে করবে, মাঠে তোমরাই সেরা। কখনও হাল ছাড়বে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করবে। দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলেই বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত। ইতিহাস গড়ার এই সুযোগ হাতছাড়া কোরো না।’’
অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্দেসও একই কথা বলে উদ্বুদ্ধ করছেন নীরজ কুমার, বিক্রম প্রতাপ সিংহ-দের। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা জানি, দক্ষিণ কোরিয়া এই প্রতিযোগিতার ফেভারিট। আমরা আন্ডারডগ হিসেবেই শুরু করেছিলাম অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে। তাই আমাদের কিছু হারানোর নেই। বাড়তি কোনও চাপও নেই।’’ এর পরেই ভারতীয় দলের কোচের হুঙ্কার, ‘‘দক্ষিণ কোরিয়া যদি ভাবে, আমাদের সহজেই হারিয়ে দেবে, ভুল করবে।’’
দক্ষিণ কোরিয়া কোচ কিম জুং সো অবশ্য জানিয়ে দিলেন, ভারতকে একেবারেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, ‘‘যোগ্য দল হিসেবেই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছে ভারত। এই পর্যায়ে যারা পৌঁছয়, তারা সবাই খেতাবের দাবিদার।’’ ভারতীয় দলের রক্ষণেরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কোচ। তিনি বলেছেন, ‘‘গ্রুপ লিগে ভারত কোনও গোল খায়নি। ওদের রক্ষণকে তো গুরুত্ব দিতেই হবে।’’
গত বছর আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত সরাসরি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের যুব বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে হলে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠতেই হবে ভারতীয় দলকে। অথচ ভারতীয় রক্ষণের প্রধান ভরসা বিকাশ উমনামকেই ছাড়াই বিবিয়ানোকে সোমবার দল নামাতে হবে। ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে কার্ড দেখেছিল বিকাশ। দ্বিতীয় কার্ড দেখে ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে অবশ্য বিকাশকে নিয়ে ভাবতে চান না বিবিয়ানো। বলছেন, ‘‘বিকাশ নেই বলে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসার কোনও মানে হয় না। বাকিরা যারা আছে, তারা বিকাশের অভাব পূরণ করবে বলেই আমার আশা।’’ ভারতীয় দলের ডিফেন্ডার গুরকিরাত সিংহের কথায়, ‘‘লড়াইয়ের জন্য আমরা তৈরি।’’ অধিনায়ক বিক্রমের বার্তা, ‘‘নিজেদের একশো শতাংশেরও বেশি দেওয়ার জন্য তৈরি। ম্যাচের ৯০ মিনিট আমাদের কাছে অগ্নিপরীক্ষা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy