Advertisement
E-Paper

ভল্টিং হল টি২০ ম্যাচ, দীপার ভাগ্য তাই ওই দিনটায়

ইলাহাবাদের বছর পঁচিশের ছেলে জিমন্যাস্টিক্সে দেশকে এনে দিয়েছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক পদক। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে। ভল্টে রুপো ও ফ্লোর এক্সারসাইজে ব্রোঞ্জ। ২০১০ গুয়াংঝৌ এশিয়ান গেমসে ফ্লোর এক্সারসাইজে ব্রোঞ্জ। যা এশিয়ান গেমসে ভারতের একমাত্র জিমন্যাস্টিক্স পদক।দীপা কর্মকারের প্র্যাকটিসের জায়গাতেই দুপুর দেড়টা নাগাদ পাওয়া গেল তাঁকে! ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়াম! ইনি দীপার ঘনিষ্ঠ ভারতের পয়লা নম্বর পুরুষ জিমন্যাস্ট। জিমন্যাস্টিক্সে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক পদক এঁর গলাতেই ঝোলে। কমনওয়েলথ আর এশিয়ান গেমসে। গত ছয় বছর ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের নক্ষত্র আশিস কুমার কথা বললেন এবিপি-র সঙ্গে...

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১০
.

.

দীপা কর্মকারের প্র্যাকটিসের জায়গাতেই দুপুর দেড়টা নাগাদ পাওয়া গেল তাঁকে! ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়াম! ইনি দীপার ঘনিষ্ঠ ভারতের পয়লা নম্বর পুরুষ জিমন্যাস্ট। জিমন্যাস্টিক্সে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক পদক এঁর গলাতেই ঝোলে। কমনওয়েলথ আর এশিয়ান গেমসে। গত ছয় বছর ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের নক্ষত্র আশিস কুমার কথা বললেন এবিপি-র সঙ্গে...

প্রশ্ন: আজকের দিনটাকে কী বলবেন?
আশিস: বলব ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা দিন।

প্র: মিঠাই বিতরণ করার যোগ্য?
আশিস: মিঠাই মানে! ডেকে ডেকে! দীপার কাছে ঋণী হয়ে থাকল ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স। আমার শুধু মনে হচ্ছে দীপার জন্য আমি আর আমার কোচ অজমের শরিফে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলাম। সেটা তা হলে সার্থক।

প্র: রেজাল্টটা কাল রাত্তিরেই জেনেছিলেন?

আশিস: ছটফট করছিলাম রেজাল্টটা জানার জন্য। স্টার টিভিতে আনইভেন বার দেখিয়েছে। দীপার একটা ভল্টও। কিন্তু দু’নম্বর ভল্টটা দেখায়নি। কিছুই জানতে পারছিলাম না। শেষমেশ গভীর রাতে জিমন্যাস্টিক্সের ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে রেজাল্টটা পেলাম যে ও ফাইনালে গিয়েছে। দুর্দান্ত। আমাদের দেশে ভাবাই যায় না, ক্রিকেট ছাড়া আর কোনও খেলার রেজাল্ট দেশবাসীকে যে আনন্দ দিতে পারে। সে দিক থেকে দীপার কনট্রিবিউশন দুর্ধর্ষ হয়ে থাকল!

প্র: আমরা এখনই সব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেলছি। ফাইনালটা কিন্তু এখনও দূরে।
আশিস: হোক না। কালকের রাতটা তো থেকেই গেল।

প্র: রোববারের ফাইনাল কী মনে হচ্ছে?
আশিস: প্রেডিক্ট করা কঠিন।

প্র: এটা তো যে কেউ বলতে পারে। গোটা দেশ সাবধানী উত্তর নয়, আকুল ভাবে জানতে চাইছে যথেষ্ট আশা কি করা যায়?
আশিস: দেখুন ফাইটটা খুব কঠিন এটা বলতে পারি। সিমোন বাইলস আছে। যে টু গুড। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দুর্ধর্ষ স্কোর করেছে। ১৬। দীপা করেছে ১৪.৮৫০। আরও তিন-চারটে মেয়ে আছে যারা প্রত্যেকে পদক পেতে পারে। কাগজে-কলমে আপনি বলতে পারবেন না যে দীপা এদের আগে।

প্র: তা হলে তো বোঝা যাচ্ছে পদক পাওয়ার স্বপ্ন নৈরাশ্যবাদী হয়ে শুরু করা ভাল?
আশিস: আমায় শেষ করতে দিন। ভল্টিং এমন একটা ইভেন্ট ঠিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো। ওই বিশেষ দিনে কে কেমন ফর্মে থাকবে তার উপর গোটাটা নির্ভর করে। জিমন্যাস্টিক্সের অন্য ইভেন্টের তুলনায় ভল্টিংয়ে অঘটনের মাত্রা বেশি। দু’টো তো ভল্ট। তাতে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। জাস্ট একটা ভল্ট খারাপ করে ফেভারিট হেরে যেতে পারে আনকোরার কাছে। একটা স্ল্যাশ তার পর সব শেষ! আমি আশা করে থাকব যে এদের মধ্যে যারা তথাকথিত ফেভারিট তাদের দু’একজন সে দিন প্রথম ভল্টটা ধ্যাড়াবে। আর সেই সুযোগটা নিয়ে নেবে দীপা। না নিতে পারার কোনও কারণ নেই। সত্যি ও ট্যালেন্টেড আর দারুণ খেটেওছে।

প্র: তার মানে ব্রোঞ্জের উপরে আশা না করাই ভাল?

আশিস: ইউ নেভার নো। ভল্টিংয়ে আসল জিনিস হল ল্যান্ডিং। সব কিছু তার উপর নির্ভর করে থাকে। দীপা সে দিন ওটা দারুণ করে সবাইকে যে চমকে দেবে না কে বলতে পারে!


বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন

প্র: পুরো ব্যাপারটাই টেকনিক্যাল? নাকি মনের জোরও ফ্যাক্টর?
আশিস: মনের জোর খুব ইম্পর্ট্যান্ট। একটা কনফিডেন্স থাকবে যে পৃথিবী উল্টে যাক, আমি ঠিকঠাক ল্যান্ড করব। মোটিভেশন আমাদের স্পোর্টে খুব বড় ব্যাপার। আজকেই যেমন আমি অনেক পজিটিভ মাইন্ড নিয়ে ট্রেন করলাম যে, দীপা এত ভাল করল। আমিও সামনের কথা ভাবব না কেন?

প্র: কমনওয়েলথ, এশিয়া, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এগুলোতে পদক জেতার পর আপনি সত্যি অলিম্পিক্সে নেই কেন?
আশিস: তার জন্য আমি দায়ী নই। দায়ী আমার দেশের ফেডারেশন। কিন্তু কালকে রাত্তিরের দীপা আমাকে সাহস জুগিয়েছে যে, হাল ছেড়ে দেওয়ার মানে হয় না। বরং ভাবা উচিত যে, আমার বয়স যখন মাত্র পঁচিশ এবং প্রথম জিমন্যাস্টিক্সে ভারতের হয়ে পদক আমি এনেছি তখন পরের টোকিও অলিম্পিক্স অবধি নিজের রোডম্যাপ নিয়ে আশাবাদী থাকব না কেন?

প্র: দীপা?
আশিস: দীপা তো আমার চেয়ে দু’বছরের ছোট। ও এখান থেকে কোথায় যেতে পারে, ভাবতে পারছেন! আজকে একটা মেয়ে জিমন্যাস্ট গোটা দেশে আনন্দের হাওয়া এনে দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে কী চলছে, ভাবা যায় না। অথচ সাধারণ ভাবে জিমন্যাস্টিক্স নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথাই ছিল না। আমি যেমন টুর্নামেন্টে পদক জিতেও বছরের পর বছর ন্যাশনালস খেলতে পারিনি যেহেতু আমার টিম রেলওয়েজ জাতীয় সংস্থা ছাড়া কারও অধীনে টিম পাঠাতে রাজি ছিল না। মিডিয়া এ সব দিকে নজরও দেয়নি। দীপার একটা রাত্তিরের পারফরম্যান্স ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সে প্রথম আলোর দিন আনল।

প্র: দীপার সাফল্য পুরোটা নিজের জন্য? নাকি কোচেরও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে?
আশিস: কী বলছেন! কোচ ছাড়া একজন জিমন্যাস্ট হল এক চোখওয়ালা মানুষ। একজন জিমন্যাস্টকে গাইড করা, তার ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়া, তার সামনে টার্গেটগুলোকে ঠিক করে দেওয়া সবই তো কোচ! দীপার কোচ খুব ইম্পর্ট্যান্ট মানুষ!

প্র: কালকের রাতটায় ফিরে আসি!
আশিস: ইয়েস পদক আসার আগেই ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের স্বপ্নের রাত এসে গিয়েছে। আজ সারা দেশের সমাজের বিভিন্ন সব ক্ষেত্র বলিউড হোক কী ক্রিকেট, কী রাজনীতিবিদ— সবাই দীপাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। একজন দেশীয় জিমন্যাস্টের দিকে এতগুলো অটোগ্রাফের খাতা আর সেলফি আসছে। মিষ্টি বাঁটতে তো এ জন্যই বললাম!

Ashish Kumar Dipa Karmakar Rio Olympics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy