Advertisement
E-Paper

‘প্রতিভা থাকলে কাউকে আটকে রাখা যায় না’

বাংলার ক্রিকেট অনুরাগীরা তাঁকে বলেন, ‘নৈছনপুর এক্সপ্রেস’। তিনি অশোক ভীমচন্দ্র ডিন্ডা। পূর্ব মেদিনীপুরের নৈছনপুরের অশোকের মন্ত্র লড়াই। কথা বললেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়বাংলার ক্রিকেট অনুরাগীরা তাঁকে বলেন, ‘নৈছনপুর এক্সপ্রেস’। তিনি অশোক ভীমচন্দ্র ডিন্ডা।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪২
গতিময় বাংলার অন্যতম সফল পেসার অশোক ডিন্ডা। নিজস্ব চিত্র

গতিময় বাংলার অন্যতম সফল পেসার অশোক ডিন্ডা। নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: আপনার প্রথম ক্রিকেট কোচ কে? ক্রিকেটে এলেন কী করে?

উত্তর: আমার প্রথম কোচ অটল দেব বর্মন। ১৯৯৯ সালে প্রথম কলকাতায় আসি। আমার মামা রঘুনাথ মণ্ডল তখন টালিগঞ্জে থাকতেন। তাঁর হাত ধরেই ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। আমি গ্রামের ছেলে। প্রথম বার কলকাতা দেখে খানিক ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে টালিগঞ্জ অগ্রগ্রামীর প্রশিক্ষণ শিবিরের সামনে আসি। সেই প্রথম ডিউস বল দেখা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে আমি মামাকে বলি, আমি কিন্তু এদের থেকেও জোরে বল করতে পারি। তারপর মামা আমার দাদার সঙ্গে কথা বলে আমাকে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যান। সেখানেই অটল দেব বর্মনের সঙ্গে আলাপ।

প্রশ্ন: তারপর? গেলেন, দেখলেন আর জয় করলেন?

উত্তর: না, না। বরং ব্যাপারটা খানিক উল্টো। প্রথম দিন খালি পায়ে গিয়েছিলাম বলে নামতে দেয়নি। আমি তো গ্রামে খালি পায়েই খেলি। তারপর মামা আমায় এলগিন রোডে নিয়ে গিয়ে সাত নম্বরের কেডস কিনে দেয়। সেই পরে মাঠে নামি। প্রথমে ডিউস বল পাইনি। বলল, আগে সিন্থেটিক বলে খেলো। আমি এত জোরে বল করছিলাম যে কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। তারপর অটল স্যার ডিউস বল দিয়ে বড়দের বল করতে বলেন। যে কটি বল উইকেটে ছিল হয় বোল্ড হয়েছে নয়তো এলবিডব্লু। তারপর অটল স্যার আমার মামাকে আলাদা ডেকে বলেছিলেন, এই ছেলের মধ্যে খেলা আছে।

প্রশ্ন: ছোটবেলায় খেপ খেলেছেন?

উত্তর: প্রচুর খেলেছি। নৈছনপুর বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলতাম। আমার পাড়ার ক্লাব।

প্রশ্ন: খেলতে গিয়ে কোনও দিন মার খেয়েছেন?

উত্তর: আমি আমার বড় দাদার বৌভাতের দিনে খেলতে চলে গিয়েছিলাম। দুপুর তিনটের সময় বাড়ি ফিরে মার খেয়েছিলাম। তখন মনে হয় এইটে পড়ি।

প্রশ্ন: ছোটবেলায় কী ভাল লাগত?

উত্তর: যে কোনও ধরনের খেলা।

প্রশ্ন: আপনার টার্নিং পয়েন্ট কী?

উত্তর: আমি ‘পেস বোলিং হান্টিং’ প্রতিযোগিতায় ইস্ট জোন থেকে প্রথম হয়েছিলাম। তারপর মুম্বইয়ে ফাইনালে যুগ্ম বিজয়ী হয়েছিলাম।

আরও পড়ুন: সচিন, সাকলিনের রেকর্ড ভাঙলেন রশিদ

প্রশ্ন: আর কারও কাছে ঋণী?

উত্তর: কলকাতায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়েই কোলাঘাট ক্রিকেট এইট্টি বলে একটি দলে লাট্টুদার (কৌশিক ভৌমিক) তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করতাম। লাট্টুদার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। কোলাঘাটের হয়ে অনেক জায়গায় খেলতেও গিয়েছি। এখনও জেলায় ফিরলে কোলাঘাটে যাই।

প্রশ্ন: বাড়ি ফিরতে পারেন?

উত্তর: দু’মাসে একবার তো যাই বটেই। বাড়িতে মা, দাদা, বৌদি, ভাইপো থাকেন।

প্রশ্ন: তোমার অনুপ্রেরণা?

উত্তর: গোটা পরিবার বিশেষ করে আমার মা ও স্ত্রী।

প্রশ্ন: পড়াশোনা?

উত্তর: পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রাখাল আদর্শ বিদ্যাপীঠে পড়ি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি রাজনগর এস পি হাইস্কুল।

প্রশ্ন: বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব কবে?

উত্তর: অনূর্ধ্ব ২২ দলে প্রথম খেলি।

প্রশ্ন: আপনার সেরা অস্ত্র ইয়র্কার। ছোটবেলায় টেনিস বলে খেলতে খেলতেই কি ইয়র্কারে হাতেখড়ি?

উত্তর: টেনিস এবং ডিউস বল দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা। তবে প্রাথমিক ভাবে টেনিস বলেই ইয়র্কার দিতে শেখা এটা বলাই যায়।

প্রশ্ন: কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা?

উত্তর: অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার হয়ে বাছাই শিবিরে গিয়েছিলাম। আমি তখন কলকাতার স্পোর্টিং ইউনিয়নে খেলি। তবে তখনও বাংলার হয়ে খেলেনি। ওই শিবিরে এক কোচ আমায় ডেকে বলেছিল, আমি যদি তাঁর কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি হই। তবেই আমাকে জেলা দলে সুযোগ দেওয়া হবে। তারপর আমি মেদিনীপুর জেলার হয়ে আর খেলিনি। পরের বছর হাওড়া জেলার হয়ে খেলতে নেমে মেদিনীপুরকে ৩৫ রানে অল আউট করে দিয়েছিলাম। আমি ৭টা উইকেট নিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে ওই কোচের সঙ্গে দেখা হয়েছিল? কিছু বলেননি?

উত্তর: হয়েছিল। লোকটার সঙ্গে একবার সিএবি-তে দেখা হয়েছিল। সে দিন সম্ভবত জেলা ক্রিকেট নিয়ে সিএবি-র কোনও বৈঠক ছিল। আমিও কোনও একটা কারণে ইডেনে ছিলাম। লোকটা আমায় ডেকে বলেছিল, কি রে চিনতে পারছিস না? আমি বলেছিলাম, ‘‘তোমায় চিনতে পারব না হয় কি করে! যত দিন বেঁচে থাকব তোমায় মনে থাকবে।’’ জগমোহন ডালমিয়া সে দিন সিএবিতে ছিলেন। আমি তাঁকে জানিয়েছিলাম, এর জন্য আমি জেলা দলে সুযোগ পাইনি।

প্রশ্ন: জেলা দলে না নেওয়ার ভুল কি মেদিনীপুর পরে শুধরেছে?

উত্তর: শুনতে খারাপ লাগবে, কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে বলছি, মেদিনীপুর ডিএসএ থেকে একটা ফুলের তোড়াও দেয়নি। যোগাযোগও করেনি।

প্রশ্ন: এর কারণ কী হতে পারে?

উত্তর: জানি না। তবে আমি কোলাঘাটের হয়ে মেদিনীপুরের দলগুলোকে হারাতাম। হয়তো সেই কারণেই....তবে জেলার মন্ত্রী শুভেন্দুদা (অধিকারী), বিধায়ক দিব্যেন্দুদার (অধিকারী) সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক।

প্রশ্ন: বাইরে নিজেকে মেদিনীপুরের ছেলে বলে পরিচয় দাও?

উত্তর: অবশ্যই। মেদিনীপুরের মানুষ আমাকে খুবই ভালবাসা দিয়েছে। নিজের জেলাকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চাই। তাই পূর্ব মেদিনীপুরে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করার ভাবনা রয়েছে। সেই নিয়ে শুভেন্দুদা ও সৌরভদার (গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গে প্রাথমিক কথাও হয়েছে। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা আরও অনেকের সঙ্গে হয় এটা আমি জানি। সেটাকে ভাঙাই আমার লক্ষ্য।

প্রশ্ন: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ?

উত্তর: অনূর্ধ্ব ২২ বাংলা খেলার সময়ে প্রথম আলাপ। সেই শুরু। এখন তো দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক।

প্রশ্ন: যদি কোনও দিন বাংলার কোচ হও, জেলার ছেলেদের জন্য ভাববে?

উত্তর: এখন যাঁরা বাংলা খেলছেন, তাঁদের বেশিরভাগই তো জেলার। আমি চাইব, জেলা থেকে আরও ছেলে তুলে আনতে। প্রতিভা একটু কম থাকলে তৈরি করে নেওয়া যাবে। কিন্তু মাঠে নেমে একশো শতাংশ দিতেই হবে।

প্রশ্ন: কিন্তু জেলার ছেলেদের তো সিএবি পর্যন্ত আসতে হবে?

উত্তর: আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি, কারও প্রতিভা থাকলে আটকে রাখা যাবে না। সুযোগ সে পাবেই।

Ashoke Dinda Cricket Cricketer Celebrity Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy