Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Praveen Kumar

Tokyo Paralympic 2020: এক লাফে আমার জগৎ বদলে গিয়েছে: প্রবীণ

২.০৭ মিটার লাফিয়ে রুপোর পদক প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এশীয় রেকর্ডও গড়েছেন দিল্লির মতিলাল নেহরু কলেজের এই স্নাতক স্তরের ছাত্র।

গর্বিত: টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে হাই জাম্পে রুপো জয়ের পরে প্রবীণের উচ্ছ্বাস। শুক্রবার।

গর্বিত: টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে হাই জাম্পে রুপো জয়ের পরে প্রবীণের উচ্ছ্বাস। শুক্রবার। ছবি পিটিআই।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:০৪
Share: Save:

জন্ম থেকে তিনি আর পাঁচজনের মতো নন। বাঁ পা ডান পায়ের তুলনায় ছোট। নয়ডার গোবিন্দগড় গ্রামের সেই ১৮ বছরের ছেলে প্রবীণ কুমার শুক্রবার টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে হাই জাম্পে(টি৬৪) রুপো পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ২.০৭ মিটার লাফিয়ে রুপোর পদক প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে এশীয় রেকর্ডও গড়েছেন দিল্লির মতিলাল নেহরু কলেজের এই স্নাতক স্তরের ছাত্র।

প্রশ্ন: জীবনের প্রথম প্যারালিম্পিক্সে এসে পদক নিয়ে ফিরবেন, তা ভাবতে পেরেছিলেন?

প্রবীণ: পদক পাব কি না, তা আগাম বলা বা ভেবে ফেলা মুশকিল। তবে এটা আমার প্রথম প্যারালিম্পিক্স হলেও প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নয়। চলতি বছরেই দুবাইয়ে বিশ্ব প্যারা-অ্যাথলেটিক্স গ্রঁ প্রি-তে সোনা জেতার পরে এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে টোকিয়োতে নেমেছিলাম যে, দেশকে হতাশ করব না। তবে পদক অপেক্ষা করছে কি না, বা তার রং কী, এ সব নিয়ে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবনাচিন্তা করিনি।

প্র: দুবাইয়ে যে প্রতিযোগিতার কথা আপনি বলছেন বা দু’বছর আগে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে হাই জাম্পে আপনার রুপো প্রাপ্তি কিংবা বিশ্ব ক্রমপর্যায়ে আপনার তিন নম্বরে থাকা, সবই তো টি৪৪ বিভাগে। কিন্তু প্যারালিম্পিক্সে তো আপনাকে নামতে হয়েছে টি৬৪ বিভাগে। এতে অসুবিধা হয়নি?

প্রবীণ: সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কৃত্রিম পায়ের (ব্লেড রানার) সাহায্য নিয়ে যাঁরা লাফ দেন, তাঁরা টি-৬৪তে নামেন। যাঁরা কৃত্রিম পায়ের সাহায্য নিয়ে লাফ দেন না, তারা টি৪৪। প্যারালিম্পিক্সে এই দুই ধরনের প্রতিযোগীদের নিয়েই টি৬৪ বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়। সুতরাং আমার কোনও অসুবিধা হওয়ার ছিল না। আমাকে কেবল দেশের জন্য পদক আনতে সেরা লাফটা দিতে হত।

প্র: জীবনের প্রথম প্যারালিম্পিক্স থেকে রুপো আনার পরে আপনার অনুভূতিটা জানতে চাই।

প্রবীণ: এই আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না! আমার বাবা অমরপাল এক জন ক্ষুদ্র কৃষিজীবী মানুষ। আমার জন্য অনেকের কাছে গিয়েই এক সময়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। আজ পদক জয়ের দু’ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ফোন করে আশীর্বাদ করলেন। আমার জেবর এলাকার বিধায়ক বাড়ি গিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করে বলেছেন আমার নামে উত্তরপ্রদেশে এ বার একটা স্টেডিয়াম বানিয়ে দেবেন। মনে হচ্ছে চারপাশের জগৎটাই আমার একটা লাফে বদলে গিয়েছে!

প্র: বাড়িতে কথা হল? বাবা কী বললেন?

প্রবীণ: হ্যাঁ, কথা হয়েছে। বাবা খুব খুশি। আশীর্বাদ করলেন আরও এগিয়ে যাওয়ার। বরং খারাপ লাগছিল আমার। বাবাকে সোনার পদকটা দেখাতে পারব না ভেবে। বাবাকে কথা দিয়েছিলাম, টোকিয়ো থেকে সোনা নিয়ে ফিরব। তিন বছর পরে প্যারিস প্যারালিম্পিক্সে এই কথা আমাকে রাখতেই হবে।

প্র: আগের সপ্তাহেই ভারতীয় এক প্যারা-হাই জাম্পার বলেছিলেন, বৃষ্টি হচ্ছিল বলে তাঁর অসুবিধা হয়েছে সেরা লাফ দিতে। আপনার হয়নি?

প্রবীণ: হয়েছে তো বটেই। তবে আমি সাফল্য পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিলাম আজ। বৃষ্টির মধ্যে প্রথম লাফটা তাই ভাল হয়নি। ১.৮৩ মিটার দিয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় লাফে ১.৯৭ মিটার লাফিয়ে এ দিনের সোনাজয়ী ব্রিটেনের জোনাথন ব্রুম-এডওয়ার্ডস ও ব্রোঞ্জ জয়ী পোলান্ডের মাচি লেপিয়াতোর সঙ্গে সেরা তিনে চলে এলাম, তখন নিজেকে নিজেই বলি, আজ যা হওয়ার হবে। এই জায়গা থেকে পিছিয়ে গেলে চলবে না। পদক চাই। শেষের দিকে ২.১০ মিটার উচ্চতায় লাফিয়ে উঠেও ঠিক ভাবে নামতে পারিনি। তা হলে আজ সোনাটাই নিয়ে ফিরতাম!

প্র: আপনি তো ভলিবল খেলতেন। সেখান থেকে হাই জাম্পে চলে এলেন কী ভাবে?

প্রবীণ: আমার জন্ম থেকেই বাঁ পা ডান পায়ের চেয়ে ছোট। তা সত্ত্বেও আমি ছোট থেকেই খেলতে ভালবাসি। স্কুলে চুটিয়ে ভলিবল খেলতাম। ওটা আমার প্রিয় খেলা ছিল এক সময়ে। আন্তঃ জেলা স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেই এক বার হাই জাম্পে নাম দিয়ে প্রথম তিনে না থাকায় মুখ ভার করেছিলাম। তখন একজন শিক্ষক বলেন, আমি প্যারা-অ্যাথলেটিক্সে গেলে ভাল করব। তাঁর কথা শুনে পরের দিনই গুগল করে জানতে পারি, এ রকম খেলা রয়েছে। তার পরেই আমি প্যারা-হাই জাম্পেই মন দিই। আমাদের স্কুলের অধ্যক্ষা দীপ্তি শর্মা, সে সময়ে আমাকে খুব উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন।

প্র: মন তো দিলেন। কিন্তু নয়ডার গ্রামের বাড়ি থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এলেন কী ভাবে?

প্রবীণ: জেলার প্রতিযোগিতাতেই এই খেলার এক কর্তা আমাকে বলেছিলেন দ্রোণাচার্য কোচ সত্যপাল সিংহের সঙ্গে দেখা করতে। বাবাকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলাম স্যরের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি আমাকে দেখার পরে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে বলেন। সেটা ২০১৮ সালের শেষের দিকের ঘটনা। ২০১৯ সালের শুরু থেকেই আমি সত্যপাল স্যরের কাছে নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করি। সাই, পরিবার এবং ওঁর জন্যই আজ আমি এখানে।

প্র: কোচ সত্যপাল আপনাকে প্রথম দিকে কী বলে প্রেরণা দিতেন?

প্রবীণ: স্যর আমাকে কখনও দুর্বলতা নিয়ে বেশি বলতেন না। তিনি আমাকে সব সময়ে বলেছেন পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। আমার উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। হাই জাম্পে শুরুর দিকে এই নিয়ে আমি হীনমন্যতায় ভুগতাম। কিন্তু স্যর প্রথম দিনেই আমাকে বলেছিলেন, আমার ডান পা বেশ পেশিবহুল। ঠিক ভাবে পরিশ্রম করলে আমি এই উচ্চতাতেই ভাল ফল করতে পারি হাই জাম্পে। কোচের এই কথাগুলো আমাকে প্রথম দিকে দারুণ প্রেরণা দিয়েছিল। এ ছাড়া তিনি আমাকে রোজ পাঁচ-ছয় ঘণ্টা অনুশীলন করানোর সময় বলতেন, প্রশিক্ষণ পর্বে খাটলে প্রতিযোগিতার সময়ে আত্মবিশ্বাস বা উদ্যমের অভাবে ভুগতে হবে না।

প্র: ২০১৯ সালে শুরু করে দু’বছরের মধ্যে প্যারালিম্পিক্সের পদক। তার মধ্যে দু’বছরে অতিমারির সময় পেরোতে হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন কী ভাবে?

প্রবীণ: গত বছর করোনার জন্য এক সময়ে অনুশীলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। খুব মুষড়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম সব সাধনার সমাপ্তি। তাও মনের জোরে কোচকে গোবিন্দগড় গ্রামে এনে বাড়ির সামনে মাটি খুঁড়ে বিশেষ ‍জায়গা তৈরি করে অনুশীলন চালিয়েছিলাম। তিন-চার মাস এ ভাবে চলার পরেই কোচের আবেদনে সাই সাড়া দিয়ে আমাকে ফের দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়। আর এ বছরে করোনার দ্বিতীয় পর্বের সংক্রমণে তো আমি নিজেই আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক দিন অনুশীলন করতে পারিনি। কিন্তু মনের জোরেই এই সব প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ সাফল্য পেয়েছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Praveen Kumar Tokyo Paralympics 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE