ছক সাজাতে ব্যস্ত মলিনা। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে অনবরত হাবাসের তুলনা হয় এখানে। জানেন?
মলিনা: এর মধ্যেই তুলনা! সবে তো চারটে ম্যাচ হল। আমি জানি হাবাস কলকাতাকে এক বার চ্যাম্পিয়ন করেছে। এক বার সেমিফাইনাল তুলেছে। আমাকেও সময় দিন। এ বারের আইএসএল শেষ হলে দেখবেন মলিনা কে?
প্র: এটিকে-তে হাবাসের সাফল্যের চাপ আপনাকে তাড়া করে না মাঠে নামলে?
মলিনা: চাপ? কীসের? সে সব স্পেনে রেখে এসেছি। ফুটবল জীবনে লা লিগার মতো টুর্নামেন্টে ৪১৮টা ম্যাচ খেলেছি। প্রচুর ট্রফি জিতেছি। চাপ শব্দটা আমার অভিধানে নেই। আর যে লোক ক্যানসারকে হারিয়ে মাঠে ফেরে, কোনও চাপই তার কাছে চাপ নয়।
প্র: হাবাসকে আপনি চেনেন? কখনও দেখা বা কথা হয়েছে?
মলিনা: চিনি মানে? কলকাতা সম্পর্কে তো প্রথম হাবাসের কাছেই শুনেছিলাম। তিন বছর আগে। স্পেনেই। জানেন, মাদ্রিদে আমরা একই বাড়িতে থাকতাম। ও তখন কলকাতার কোচ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইএসএল আর এটিকে নিয়ে আমাদের মধ্যে মাঝেসাঝেই আলোচনা হত।
প্র: এখানকার ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আপনার টিমের খেলার সঙ্গে হাবাসের সময়ের টিমের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। আপনি একমত?
মলিনা: আমরা দু’জনেই স্প্যানিশ। খেলার স্টাইল কোথাও হয়তো এক রকম লাগতে পারে। কিন্তু এটিকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে আমি হাবাসের সময়ের প্রত্যেকটা ম্যাচের ভিডিও দেখেছি। আমার তো মনে হয় মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। ওর খেলানোর স্টাইল আর আমার টিমের খেলার স্টাইলের মধ্যে অনেক পার্থক্য। তা ছাড়া কোনও কোচের স্টাইল অন্য কোচের ফটো কপি হতে পারে না।
প্র: কারও কারও মনে হচ্ছে, হাবাসের মতো আপনি আক্রমণাত্মক মনোভাবের নন। একটু নরমসরম!
মলিনা: নরম মানে কি মারামারি করব? বিপক্ষ কোচের দিকে তেড়ে যাব বা ফুটবলারকে মারব? যখন প্রয়োজন হবে তখন দেখবেন আমি কী রকম! কোচেদের সব সময় মারমুখী মেজাজে থাকতে নেই। ঠান্ডা থাকতে হয়। এটা ঠিক, খেলোয়াড় জীবনে গোলকিপার খেলার সময় আমি মাঠে যতটা চড়া মেজাজ দেখাতাম, কোচ হয়ে এখন তেমনটা মোটেও নেই। (হেসে) আসলে ক্যানসার সারিয়ে ফেরার পর আমি মনে হয় একটু নরম হয়েছি। তিন মাস হাসপাতালে কাটানোর সময়, তার পরে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে নিতে বারবার ভাবতাম যদি কোনও দিন সুস্থ হয়ে উঠতে পারি তা হলে জীবনকে উপভোগ করব। সেটা এখন করছি। তবে আবার বলছি, প্রয়োজনে জোসে মলিনা কী হতে পারি সেটা তার ড্রেসিংরুম আর বেঞ্চ জানে।
প্র: তা হলে কি হাবাসের পুণের সঙ্গে ম্যাচে অন্য মলিনাকে দেখা যাবে?
মলিনা: উল্টো দিকের বেঞ্চ কী মনোভাব দেখায় সেটার উপর সব কিছু নির্ভর করছে।
প্র: কিন্তু আপনার টিম তো জিততেই পারছে না? চারটে ম্যাচের তিনটে ড্র!
মলিনা: কিন্তু হারিনি তো! আমরা আর দিল্লি-ই কেবল এখনও অপরাজিত। আর আমাকে বলুন তো আইএসএলে এ বার কোন টিমটা ধারাবাহিক? এ বারের টুর্নামেন্ট প্রচণ্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক। এক নম্বরের সঙ্গে আট নম্বরেরও বিরাট কিছু পার্থক্য নেই।
প্র: পরের ম্যাচ দিল্লির সঙ্গে শনিবার। জিততে পারবেন?
মলিনা: আমাদের ড্র করা ম্যাচগুলোও তো জিততেই চেয়েছিলাম। সব কোচ সব ম্যাচ জিততে চায়। পারে কি? আশা করছি দিল্লির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে এটিকে সমর্থকদের এ বারের প্রথম জয়ের স্বাদ দিতে পারব।
প্র: দিল্লির ইতালিয়ান কোচ জামব্রোতার সঙ্গে আগে কখনও দেখা হয়েছে আপনার?
মলিনা: ওর বিরুদ্ধে তো আমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছি। বোধহয় ২০০৪-এ। জামব্রোতা তখন এসি মিলানে। আমি দেপোর্তিভোতে। তবে কোচ হিসেবে এ বার মুখোমুখি হব।
প্র: আপনার টিম কিন্তু গোল দিয়ে গোল খাচ্ছে!
মলিনা: মাদ্রিদে প্রি-সিজন ক্যাম্পে ছ’জন ফুটবলারকে পাইনি। সেটা বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। যারা ছিল না তাদের আমার খেলার স্টাইল বা ট্যাকটিক্সের সঙ্গে একাত্ম হতে সময় লাগছে। তার জন্য ম্যাচে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমরা সেটা সমাধানের চেষ্টা করছি। গোল শুধু ডিফেন্সের ভুলেই খাচ্ছি না। গোল খাওয়ার জন্য পুরো টিম দায়ী।
প্র: আপনার টিম প্রচুর চোট-আঘাত। মার্কি পস্টিগা বসে আছেন। কবে ফিরবেন তিনি?
মলিনা: চোট ফুটবল খেলার অঙ্গ। চোট পাওয়া প্লেয়ারকে জোর করে মাঠে নামানোয় আমি বিশ্বাসী নই। হিউম-দ্যুতির মতোই পস্টিগা টিমের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। আশা করছি নর্থ-ইস্ট ম্যাচ থেকে ওকে পাব। দেখা যাক!
প্র: আপনার দীর্ঘ কেরিয়ারে স্মরণীয় দিন কোনটা?
মলিনা: যে দিন যে টুনার্মেন্ট চ্যাম্পিয়ন হয়েছি সেটাই স্মরণীয় দিন। যদি কলকাতাকে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন করতে পারি সে দিন অবশ্য বিশ্বের সবথেকে সুখী মানুষ হব।
প্র: তা হলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন?
মলিনা: টার্গেটের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন শব্দটা তো থাকবেই। চ্যাম্পিয়ন করতেই তো কলকাতাকে কোচিং করতে আসা। তবে এখনই সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এখন দিল্লি ম্যাচ জেতা। আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাই। এটাই আমার বরাবরের স্ট্র্যাটেজি। যেখানে কোচিং করিয়েছি এই ভাবনা নিয়ে এগিয়েছি।
প্র: বিশ্ব ফুটবলে কিপার-কোচেরা সে ভাবে সফল নন। আপনি পারবেন?
মলিনা: গোলকিপার হলে কেউ ভাল কোচ হতে পারবে না এটা কোথায় লেখা আছে? খেলা ছাড়ার পর কোচিং শিখেছি। পড়াশোনা করেছি। তার পর এই কাজে এসেছি। লা লিগা টিমকে কোচিং করিয়ে আপনাদের এখানে এসেছি। মরসুমটা শেষ হতে দিন, তখন না হয় বোঝা যাবে কিপার-কোচ সফল হয় কি না!
প্র: প্রথম এক মাসে কলকাতার কী কী দেখলেন?
মলিনা: বছরখানেক আগে কিতচি এফসির কোচ হয়ে যখন ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ খেলতে কলকাতায় এসেছিলাম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখেছিলাম। গত সপ্তাহে আবার ওখানে গিয়েছিলাম স্ত্রী, তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে। আর কিছু অবশ্য এখনও দেখা হয়নি। সময় কোথায়? সারা দিনই তো এটিকে নিয়ে ব্যস্ত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy