Advertisement
E-Paper

নিন্দুকরা আগে আমার অর্ধেক রান করুক, তারপর জবাব দেব

শহরের পাঁচতারা হোটেলে বসে আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন মনোজ তিওয়ারি।কোটলায় গুজরাত ম্যাচ না হওয়াতেই মোমেন্টামটা নষ্ট হয়ে গেল। রাজকোটে লাক ফ্যাক্টরটা আমাদের দিকে ছিল না। শেষ দুই ব্যাটসম্যানদের হেলমেটে লেগে, ব্যাটের এজে লেগে বাউন্ডারি হয়েছে, দুটো ক্যাচ ফিল্ডারের সামনে পড়েছে।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০

প্রশ্ন: রঞ্জি ট্রফির শুরুটা ভাল করেও শেষ আট হল না কেন?

মনোজ: কোটলায় গুজরাত ম্যাচ না হওয়াতেই মোমেন্টামটা নষ্ট হয়ে গেল। রাজকোটে লাক ফ্যাক্টরটা আমাদের দিকে ছিল না। শেষ দুই ব্যাটসম্যানদের হেলমেটে লেগে, ব্যাটের এজে লেগে বাউন্ডারি হয়েছে, দুটো ক্যাচ ফিল্ডারের সামনে পড়েছে। শেষ উইকেটে ওরা ৪৪ তুলল। অথচ পরের দিন সকালে ব্যাট করতে নেমে ওরা তিন ওভারও টিকতে পারেনি! কী বলবেন? লাহলিতে আবার আমাদের আগের দুটো ম্যাচই চার দিনে শেষ হয়েছে। ও রকম উইকেট কখনও দেখিনি। ঘাস ছিল, আবার ড্যাম্পও ছিল।

প্র: কিন্তু ওই উইকেট কি ১২০ রান তোলার মতোও ছিল না? আপনিই বলেছিলেন।

মনোজ: কখনও বলিনি। আমাকে মিসকোট করা হয়েছিল। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে, আমি বলেছি, তা হলে যে যা বলবে তাই করব।

প্র: কী বলেছিলেন তা হলে?

মনোজ: বলেছিলাম, এই উইকেটে ১২০ রান তোলাটা সোজা নয়। তোলা যাবে না বলতেই পারি না। কোনও ক্যাপ্টেনই এই কথা বলবে না। টিমের ছেলেদের উপর ভরসা আছে আমার। ওই ম্যাচে আমাদের ব্যাটিং ভাল হয়নি ঠিকই। কিন্তু এমন পিচে বড় ব্যাটসম্যানরাও স্বচ্ছন্দে খেলতে পারত না বোধহয়।

প্র: কিন্তু এই ছোটখাটো পরিস্থিতিগুলো হ্যান্ডল করতে না পারলে নক আউটে উঠবেন কী করে?

মনোজ: কয়েকটা ছোটখাটো সিচুয়েশনে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি ঠিকই। তবু বলব, অনেক কনসিসটেন্ট ক্রিকেট খেলছি আমরা। কম অভিজ্ঞতা নিয়েও ভাল খেলেছে আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা। এই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট ধরে রাখতে পারলে আমরা ভবিষ্যতে রঞ্জি জিতব। কিন্তু এদের সেই সময়টা দিতে হবে।

প্র: বারবার কম্পোজিশন বদলে টিমের ব্যালান্স নষ্ট করার অভিযোগ উঠছে আপনার ও কোচের বিরুদ্ধে। অনেকে বলছে, মধ্যপ্রদেশ ম্যাচে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের আগে আপনি নেমে গেলেন।

মনোজ: ব্যাটিংয়ে তো বেশি চেঞ্জ হয়নি। সুদীপের পরে ব্যাট করা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা না খেলা দেখেছেন, না সত্যিটা জানেন। এঁরা বাংলা ক্রিকেটের ভাল চান না।

প্র: কিন্তু সত্যিটা কী?

মনোজ: সুদীপের তার আগের ম্যাচ থেকেই আঙুলে চোট ছিল। তবু সুদীপকে বলা হয়েছিল খেলতেই হবে। কারণ, ওই ম্যাচটা খুব ক্রুশিয়াল ছিল। আর এমপি ম্যাচের আগে সুদীপ সব ম্যাচেই আমার আগে গিয়েছে। ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসেও ও চারে গিয়েছিল, কিন্তু পরের দিন চোটের জন্য সারা দিন ও মাঠে ফিল্ডিং করতে পারেনি। আর নিয়ম অনুযায়ী পুরো দিন কেউ মাঠে না থাকলে তো ব্যাটিং অর্ডারে তাকে পরেই আসতে হবে। তা ছাড়া আমি যখন ব্যাট করতে যাই তখন আর মাত্র তিরিশ ওভার বাকি ছিল। কেন ঝুঁকি নেব সুদীপ নিয়ে? কথাগুলো বলার আগে জেনে বলা উচিত।

প্র: অমিত কুইলাকেও বসালেন।

মনোজ: প্রথম ম্যাচের পর থেকে ও রিদমটা যেন হারিয়ে ফেলছিল। বাইরে বাইরে বল করছিল। স্লিপ থেকে বুঝতে পারছিলাম। স্পিডও কমে আসছিল। এরা তো আসলে ফিনিশড প্রোডাক্ট নয়। ওকে আরও স্ট্রেংথ বাড়াতে হবে। শেষ ম্যাচে ওর জায়গায় তাই তাজা কাউকে দরকার ছিল। সায়ন ঘোষকে নিয়েও প্রশ্ন শুনছি। ও সাইড আর্ম বল করে। মালিঙ্গার মতো। রিভার্স সুইং ভাল পায়। পাটা উইকেটে তাই সায়ন অনেক উপযোগী। অবস্থা বুঝেই তো ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্র: কিন্তু প্রজ্ঞান ওঝা? গ্রিন টপে কোন যুক্তিতে টানা খেলালেন? অনেকে বলছেন ও দলের বোঝা হয়ে গিয়েছে।

মনোজ: ভেবেছিলাম, ওর অভিজ্ঞতাটা কাজে আসবে। গত বার দিন্দা আর ওঝা ৩৬টা করে উইকেট পেয়েছিল। তাই ওর উপর ভরসা ছিল। কিন্তু শুরুর দিকে পরপর পেস সহায়ক উইকেট পড়ে গেল। পেস ফ্রেন্ডলি উইকেটে ও আর কী করবে? তার পরেও কিন্তু মুম্বই ম্যাচে ভাল বল করেছে। ওর বলে অভিষেক নায়ারের ক্যাচ না পড়লে খেলাটাই ঘুরে যেত। শুধু উইকেট দিয়ে ওকে বিচার করবেন না। আর আমি তো ওঝাকে আনিনি। সিএবি প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করুন না।

প্র: মুম্বই ম্যাচটাও ভাল হল না। বেঙ্গালুরুতে একটা টুর্নামেন্টে ওদের হারিয়েছিলেন আপনারা।

মনোজ: শার্দূল, ধবলদের বিরুদ্ধে ব্যাট করাটা সোজা ছিল না। তাও আবার ময়েস্ট উইকেটে। ওরা ভাল জায়গায় বল রাখছিল। ৯৯-এ অল আউট হওয়ার মতো দল আমরা নই। শেষ দিন তো ম্যাচটা হারিয়েই দিয়েছিলাম ওদের। ওঝার বলে ক্যাচটা না পড়লে হয়তো জিততামও। অন্য দুই পেসার সেই রিদমটা পায়নি দ্বিতীয় ইনিংসে। শেষ দিনে ওদের ড্রেসিং রুমটা দেখার মতো ছিল। কেউ যায়নি, তাই দেখতেও পায়নি।

প্র: অগ্নিভ পানকে লাহলির সবুজ পিচে তিন নম্বরে পাঠানো নিয়েও কথা হচ্ছে। আপনি ব্যাটিং অর্ডারে নেমে গিয়েছিলেন।

মনোজ: যারা বলছে, তাদের ক্রিকেট বুদ্ধি নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। গত বার কর্নাটক ম্যাচ হয়েছিল পাটা উইকেটে। আমি পাঁচে গিয়েছিলাম। মনোজ তিওয়ারি কখনও নিজের জন্য ব্যাটিং অর্ডার শাফল করে না। আসলে নিন্দুকদের কাছে স্ট্যাট নেই, প্রমাণ নেই। তাই ওঁরা যা খুশি তাই বলছেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন। বাংলা দলে এখন ব্যাটিংয়ে দুটো প্রধান ভরসা। সুদীপ-মনোজ। তাদের সেভ করাটাই ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের উদ্দেশ্য। লাহলির উইকেটে আমাদের প্রোটেক্ট করতেই অগ্নিভকে জিজ্ঞেস করা হয় আগে যেতে পারবে কি না। এ রকমই হয়ে থাকে। কাউকে জোর করা হয় না।

যাঁরা নিন্দে করছেন তারা তো আমার হাফ রানও করেননি কেরিয়ারে, তাঁদের পক্ষে তাই বলা সহজ! আগে তাঁরা আমার অর্ধেক রান করুন, তার পর না হয় বলুন!

প্র: এখন বাংলার ক্যাপ্টেনসি ছেড়ে দিতে বললে কী করবেন ?

মনোজ: সিএবি প্রেসিডেন্ট বললে, সিলেক্টররা বললে ছেড়ে দেব। এতে বাংলার ক্রিকেটের ভাল হলে ছেড়ে দেব। এটুকু বলতে পারি, বাইরে বসে গ্রুপ তৈরি করে বিতর্ক তৈরি করছে যারা, তারা বাংলার ক্রিকেটের ভাল চায় না। যারা নিন্দা করছে, তারা মাঠে এসে খেলা দেখে বলুন। টাইম ফ্রেম দিতে পারছি না। কিন্তু চ্যালেঞ্জ করছি, সুযোগ আর সময় পেলে এই টিম নিয়েই আমি রঞ্জি জিতে দেখাব!

Interview Manoj Tiwary Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy