এত দিন যা দেখা যেত বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায়। এ বার তা চলে এল ফুটবল-শিক্ষার অঙ্গনেও! মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা স্নাতক হওয়ার পরীক্ষায় মা-মেয়ে অথবা বাবা-ছেলে এক সঙ্গে পরীক্ষায় বসছেন এ রাজ্যে এ রকম ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। তা আলোড়নও তোলে মিডিয়ার সৌজন্যে। শিক্ষার বাইরে অন্য মঞ্চে হলেও এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে বাংলার ফুটবলে। বাবা-ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটবল কোচিং-এর লাইসেন্স পাওয়ার কোর্স করছেন এ বার। বিরলতম এই ঘটনাটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুরের। যেখানে কোচিংয়ের ‘সি’ লাইসেন্স করেছেন বাবা চন্দন রায়, ছেলে সদ্য পরীক্ষায় বসেছেন ‘ডি’ লাইসেন্স করার জন্য। শুধু তাই নয়, একাদশ শ্রেণীতে পড়া ছেলে শুভম রায় চ্যালেঞ্জও জানিয়ে ফেলেছেন বাবাকে। তাঁর জেদ নিজের শিক্ষক বাবার আগেই ‘এ’ লাইসেন্স পাশ করবেন তিনি। আশি-নব্বইয়ের দশকে রেলওয়ে এফসি, বেহালা ইউথের হয়ে কলকাতা ময়দানে খেলেছেন চন্দনবাবু। বর্তমানে ডায়মন্ড হারবারের স্কুলে শিক্ষাকতা করেন। পাশাপাশি নিজের স্কুল টিম এবং এলাকায় বাচ্চাদের ফুটবল শিক্ষা দেন তিনি। তার জন্য ‘সি’ লাইসেন্স পাশ করেছেন তিনি। এ বছর যখন তিনি পাস করেন তখন ছেলে শুভমের আইসিএসসি পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পরেই বাবার কাছ থেকে শুভম জানতে পারে ১৮-২২ জানুয়ারি গঙ্গাধরপুরে ‘ডি’ লাইসেন্স করানো হবে আইএফএ-র তত্ত্বাবধানে। এর পরই বাবার মতো কোচিং ডিগ্রি পাওয়ার জন্য ঝাঁপান সতেরো বছরের শুভম। পরীক্ষা দেওয়ার পর তিনি দিন গুনছেন কবে বেরোবে রেজাল্ট। এ দিন ফোনে সোনারপুরের বাড়ি থেকে পেপ গুয়ার্দিওলার ভক্ত শুভম বলছিলেন, ‘‘বাবা ‘বি’ এবং ‘এ’ লাইসেন্সের জন্য তৈরি হচ্ছেন। আমার লক্ষ্য কলেজের পড়া শেষ করার পর পড়াশোনার সঙ্গেই বাবার আগেই ‘এ’ পাস করা । বাবার সঙ্গেই লাইসেন্সিং পরীক্ষায় বসতেও পারি ভবিষ্যতে।’’ গঙ্গাধরপুরে শুভমের ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন প্রাক্তন মহিলা ফুটবলার কুন্তলা ঘোষদস্তিদার। তিনিও বলছেন, ‘‘শুভমের মতো গত বছরও এক জন স্কুল ছাত্র কোচিং লাইসেন্স নিয়েছে। কোর্সের সময় ওকে খুব মনোযোগী লাগল। বোঝা যাচ্ছে বাচ্চারা ফুটবলকেও পেশা হিসেবে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে।’’ আইএফএ-র টেকনিক্যাল অফিসার গৌতম ঘোষও বাবা-ছেলের রেষারেষিতে উৎসাহিত। তিনি বলছেন, ‘‘পাড়ায় বাচ্চারা ফুটবল খেলতে গেলে দাদাদের কাছেই যাবে। সেই হিসেবে ওদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’