Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্মৃতির সরোবরে এটিকে খেলবে শুনে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছি

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে সোমবারও সকালে জগিং করলাম। কোনও কোনও দিন মাঠের গেট খোলা দেখলে টুক করে ভেতরে ঢুকে পড়ি। মাঠের ভেতর অল্প একটু দৌড়ে নিই এখনও। আহ! কত স্মৃতি আমার জড়িয়ে আছে এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে।

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম এখন। ছবি: উৎপল সরকার

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম এখন। ছবি: উৎপল সরকার

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে সোমবারও সকালে জগিং করলাম। কোনও কোনও দিন মাঠের গেট খোলা দেখলে টুক করে ভেতরে ঢুকে পড়ি। মাঠের ভেতর অল্প একটু দৌড়ে নিই এখনও। আহ! কত স্মৃতি আমার জড়িয়ে আছে এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে।

তবে এ দিন মাঠের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কেমন যেন নস্ট্যালজিক লাগছিল। ভাবছিলাম কিছু দিন বাদেই এই স্টেডিয়ামে এ বার আইএসএলে আটলেটিকো কলকাতা ওদের হোম ম্যাচগুলো খেলবে।

দক্ষিণ কলকাতায় আমার বাড়ি থেকে ওই মাঠ মেরেকেটে এক-দেড় কিলোমিটার। স্টেডিয়ামটা হওয়ার আগে থেকে ওখানে খেলেছি। সেই স্কুলজীবন থেকে। পরে মোহনবাগানে অফ সিজন প্র্যাকটিস করতাম। বিদ্যুৎ মজুমদার, দীপু দাসের মতো টিমমেট ছাড়াও সাদার্ন অ্যাভিনিউ, লেকের আশপাশের অনেক ফুটবলার থাকত সঙ্গে। সেই সকালের প্র্যাকটিসের দিনগুলোয়। তাদের কেউ মারা গিয়েছে। কেউ কেউ আমার মতোই বৃদ্ধ।

খানিকটা অবাক লাগে ভাবলে, দেশ-বিদেশে এত বড় বড় স্টেডিয়ামে খেললেও বাড়ির সবচেয়ে কাছের মাঠে মাত্র একটা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছি। আর সত্যি বলতে সেই ম্যাচটা রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের সঙ্গে আমার বরাবরের একটা দুঃখের সম্পর্ক গড়ে রেখেছে! ম্যাচটা ছিল ভারত বনাম ইরান। ১৯৬৪ প্রি-অলিম্পিক্স ফুটবলে আমাদের শেষ ম্যাচ। আমি ক্যাপ্টেন। আমার গোলে এগিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ ১-৩ হেরে অলিম্পিক্সে যাওয়া হয়নি। কী কপাল! তার পর থেকে আজও অলিম্পিক্স ফুটবলের বাইরে ভারত!

তবে এ ছাড়া লেকের এই মাঠের সঙ্গে আমার অনেক ভাল স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৫০ হবে। আমরা তখন এক দল স্কুলপড়ুয়া ছেলে দেশপ্রিয় পার্কের মাঠে সকাল-বিকেল খেলতাম। কিন্তু ওই পার্কে আজ থেকে ষাট-পঁয়ষট্টি বছর আগেও এত ভিড় লেগে থাকত যে, ভাল ভাবে খেলা সমস্যা হচ্ছিল আমাদের। তখন আমরা ঠিক করলাম, চল, একটু দূরের লেকের মাঠে যাই। বাড়ি থেকে তো আর খুব বেশি দূর নয়। মাঠটাও অনেক বড়।

রবীন্দ্র সরোবর তখন ধু-ধু প্রান্তর। আর মাঝখানে ওই বিরাট লম্বা লেক। আর সেখানে আমরা যে মাঠটায় চুটিয়ে খেলতাম বেশ কয়েক বছর পরে সেখানেই রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম গড়ে ওঠে। হঠাৎ একদিন শুনলাম, ক্যালকাটা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট মানে সিআইটি ওখানে তখনকার আমলের একটা আধুনিক স্টেডিয়াম তৈরি করবে। আর সত্যিই দেখ-দেখ করে স্টেডিয়ামটা আমার চোখের সামনে হয়েও গেল। সিআইটি চেয়ারম্যান তখন শৈবাল গুপ্ত।

এত কথা এখনও মনে আছে কারণ, রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামই এ শহরের প্রথম কংক্রিট স্টেডিয়াম। ময়দানে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান মাঠে তখন কাঠের গ্যালারি। নেতাজি ইন্ডোর, যুবভারতী তৈরি হওয়া তো দূর অস্ত, তার কথাই তখন কেউ ভাবেনি। ইডেন গার্ডেন্সে পর্যন্ত সেই সময় টেস্ট ম্যাচের সময় ফোর্ট উইলিয়াম থেকে কাঠের গ্যালারি এনে দর্শক বসার বন্দোবস্ত করা হত।

যে দিন প্রথম রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে ঢুকেছিলাম, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম মাটির তলায় তৈরি ড্রেসিংরুম থেকে সুড়ঙ্গ দিয়ে প্লেয়ারদের মাঠে ঢোকার ব্যবস্থা দেখে। অত বছর আগেও কী চমৎকার আধুনিক চিন্তাভাবনা! এটিকে খেলার আগে তো ফ্লাডলাইট-ও বসে যাচ্ছে স্টেডিয়ামে।

ফুটবল ছাড়ার পরেও এই স্টেডিয়ামের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নষ্ট হয়নি। মাত্র একটার বেশি ম্যাচ ওখানে খেলা না সত্ত্বেও। মনে আছে, একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ওপার বাংলা থেকে একটা ফুটবল দল কলকাতায় এসেছিল। মোহনবাগান মাঠে একটা ম্যাচ হয়েছিল। আমাদের এখানকার টিমের ক্যাপ্টেন্সি করেছিলাম আমি। অবসর নেওয়ার পরে আমার প্রথম ফুটবল ম্যাচ। যার জন্য একটু টেনশনে ছিলাম, যাতে নিজের সম্মান রাখতে পারি। ম্যাচের আগে সাত দিন খেলোয়াড়জীবনের মতো পুরোদমে প্র্যাকটিস করেছিলাম নিজে-নিজে। কিছুটা সবার চোখের আড়ালেই।

সেটারও জায়গা ছিল রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chuni Goswami Atletico De Kolkata ISL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE