Advertisement
E-Paper

স্পটার নেই, বকেয়া টিফিনের অর্থ

পঞ্চম ডিভিশন থেকে প্রিমিয়ার ‘এ’— কলকাতা লিগের ম্যাচ হয় কোনও স্পটার বা নির্বাচক ছাড়াই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৮
চরম অপেশাদারিত্ব দেখা যাচ্ছে স্থানীয় ফুটবলে। —ফাইল চিত্র।

চরম অপেশাদারিত্ব দেখা যাচ্ছে স্থানীয় ফুটবলে। —ফাইল চিত্র।

বাংলার ফুটবলে আঁধার নামার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে আসছে আরও সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। পঞ্চম ডিভিশন থেকে প্রিমিয়ার ‘এ’— কলকাতা লিগের ম্যাচ হয় কোনও স্পটার বা নির্বাচক ছাড়াই।

খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, বাংলার ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-র কোনও স্পটারই নেই! সংস্থার সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিলেন, ‘‘যখন লিগ চলে, তখন সর্বভারতীয় স্তরে কোনও টুর্নামেন্ট থাকে না। সেই সময় সহ-সচিবেরাই মাঠে থাকেন। এ ছাড়া আইএফএ-র অন্যান্যরাও থাকেন। তাঁরা ফুটবলারদের দেখেন। টুর্নামেন্টের আগে ট্রায়ালে ডাকা হয় ফুটবলারদের।’’ যদি কোনও স্পটারই মাঠে না থাকেন, তা হলে কীসের ভিত্তিতে ট্রায়ালের জন্য নির্বাচিত করা হয় ফুটবলারদের? আইএফএ সচিবের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রত্যেকটা ক্লাবকে বলা হয় তিন-চার জন অথবা ভাল ফুটবলারদের ট্রায়ালে পাঠাতে।’’ স্পটার রাখার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন না তিনি। বলে দিলেন, ‘‘যদি জানুয়ারি মাসে কোনও প্রতিযোগিতা হয়, তার জন্য মে মাসে ফুটবলার নির্বাচিত করে কী লাভ?’’

একে তো স্পটার না থাকার মতো চূড়ান্ত অপেশাদারিত্ব। তার উপরে এই প্রশ্নও উঠছে যে, যাঁরা থাকেন বলে আইএফএ সচিব দাবি করলেন, তাঁদের কি আদৌ মাঠে দেখা যায়? কলকাতা ময়দানকে হাতের তালুর মতো চেনা মহমেডান কোচ রঘু নন্দী জানালেন, আইএফএ-র কেউ লিগের ম্যাচ থেকে ফুটবলার বাছছেন তিনি কখনও দেখেননি। বললেন, ‘‘কলকাতা লিগে নীচের দিকের ডিভিশনে খেলাগুলো মূলত হয় খোলা মাঠে। আমরা কোচেরাই ঘুরে ঘুরে খেলা দেখে ফুটবলার তুলে আনি। আইএফএ-র কাউকে দেখিনি ফুটবলার বাছাই করতে।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমি তখন সুপার ডিভিশনের ক্লাব জর্জ টেলিগ্রাফের কোচ ছিলাম। ময়দানে ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম দ্বিতীয় ডিভিশনের ম্যাচে তালতলা ইনস্টিটিউইটের হয়ে একটা ছেলে দারুণ খেলছে। নাম সুরজিৎ বসু। পর পর বেশ কয়েকটা ম্যাচে ওকে দেখলাম। সেই সময় ধানবাদে সিজুয়া গোল্ড কাপে খেলার ডাক পেল জর্জ। সুরজিৎকে নিয়ে গেলাম। প্রথম ম্যাচেই জোড়া গোল করেছিল। আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। পরের মরসুমে জর্জে সই করাই ওকে। আই লিগের আগে টালিগঞ্জ অগ্রগামী ওকে নেয়। সুযোগ পায় ভারতের যুব দলেও।’’

প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার তুলে আনার জন্য কোনও পরিকল্পনা নেই, অথচ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিন প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্লাবকে কলকাতা লিগে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে তৎপরতা তুঙ্গে। চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সঙ্ঘ ও কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা নিয়ে আইএফএ-র অন্দরমহলেই বাড়ছে ক্ষোভ। ময়দানের এক ক্লাবের কর্তা নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে বললেন, ‘‘এই তিনটি ক্লাবের ফুটবলের কোনও ইতিহাস নেই। এগারো বনাম এগারো খেলার জন্য নিজস্ব মাঠও নেই। এরা পরিচিত দুর্গাপুজো আয়োজনের জন্য। তা সত্ত্বেও এই তিনটি ক্লাবকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য মরিয়া আইএফএ। অথচ বিভিন্ন জেলার ক্লাবগুলো, যারা ফুটবলার তুলে আনছে, তাদের লিগে খেলার ছাড়পত্র দিতে আগ্রহ নেই ফুটবল নিয়ামক সংস্থার।’’ আইএফএ সচিব বলছেন, ‘‘আমরা এখনও এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। দেখা হচ্ছে আবেদনকারী ক্লাবগুলোর পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষমতা কী রকম।’’ কিন্তু তিনটি ক্লাবেরই মাঠ নেই। সচিব শুনিয়ে রাখছেন, ‘‘তিন বছর আগে বিএসএসকে আমরা তৃতীয় ডিভিশনে খেলার অনুমতি দিয়েছিলাম। ওদেরও মাঠ ছিল না।’’

আইএফএ-র বিরুদ্ধে বকেয়া না মেটানোরও অভিযোগ তুলছেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্তারা। তাঁরা বললেন, ‘‘ম্যাচের দিন ২২ জন ফুটবলারের টিফিনের জন্য ৭৭০ টাকা দেওয়ার কথা আইএফএ-র। কিন্তু তার কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। আমরাই ময়দানের বিভিন্ন টেন্টের ক্যান্টিনে ওদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।’’ ম্যাচের পরে কী খান ফুটবলারেরা? তিনি বললেন, ‘‘পাউরুটি, স্ট্রু ও কলা। এর বেশি দেওয়ার সামর্থ নেই।’’ আরও দু’তিনটি ক্লাবের কর্তারা বলছেন, ‘‘ম্যাচের দিন আমাদের পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। এ ছাড়াও দু’টো দল গড়তে প্রায় লাখ দু’য়েক টাকা খরচ হয়েছে। নিয়ামক সংস্থার দিক থেকে কোনও সমর্থনই জুটছে না। ফুটবলার তুলে আনার ব্যাপারেও কোনও উদ্যোগ নেই আইএফএ-র। এই কারণেই বাংলার ফুটবল ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে সর্বভারতীয় স্তরে।’’

অর্থ বকেয়ার ব্যাপারটা মেনে নিচ্ছেন আইএফএ সচিবও। বললেন, ‘‘আর্থিক সঙ্কটের কারণে বকেয়া রয়ে গিয়েছে। চেষ্টা করছি দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার।’’ বকেয়া মেটে কি না, তা অবশ্য দেখার। আরও বেশি করে দেখার, বাংলার ফুটবলে আঁধার কেটে আলো ফেরে কি না!

Football IFA Selector
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy