গর্বিত: উত্তরসূরি সুনীলের লড়াকু মনোভাবে মুগ্ধ ভাইচুং। ফাইল চিত্র।
ভারতীয় ফুটবলে তিনি মধ্যগগনে থাকার সময়ই উত্থান সুনীল ছেত্রীর। অনুজ উত্তরসূরি ৩৭ পেরিয়ে ফুটবলজীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে গিয়েছেন বলেও মনে করেন না ভাইচুং ভুটিয়া। তাঁর মতে, বয়স কেবলই একটা সংখ্যা। শুধু তাই নয়। সুনীলকে তিনি ৩৪ পেরিয়ে যাওয়া লিয়োনেল মেসি ও ৩৭ বছরের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে এক আসনেই বসাতে চান!
এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে ভারতীয় দলের তৃতীয়বার যোগ্যতা অর্জনের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন সুনীল। যুবভারতীতে তিনটি ম্যাচে চারটি গোল করেছেন। স্পর্শ করেছেন দেশের জার্সিতে করা কিংবদন্তি ফেরেঙ্ক পুসকাসের ৮৪ গোলের নজির। এই মুহূর্তে ভারত অধিনায়কের চেয়ে মাত্র দু’টি গোল বেশি মেসির। এই বয়সেও সুনীলের দুর্দান্ত সাফল্যের রহস্য কী? উচ্ছ্বসিত ভাইচুং বলছিলেন, ‘‘আমার মতে বয়স কেবলই একটা সংখ্যা মাত্র। ফিটনেস যদি ঠিক থাকে, মানসিকতা যদি পেশাদার হয়, তা হলে বয়সটা কোনও সমস্যাই নয়। তা ছাড়া গোল করার জন্য বয়স কখনওই গুরুত্বপূর্ণ নয়। রোনাল্ডো, মেসি, সুনীল এটাই প্রমাণ করে চলেছে বারবার।’’ রোনাল্ডো, মেসির পাশে সুনীলকে কি রাখতে চান? ভাইচুংয়ের জবাব, ‘‘অবশ্যই। ৩৭ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সুনীল গোল করে চলেছে। এই ক্ষমতা খুব কম ফুটবলারেরই থাকে। যেমন রোনাল্ডো, মেসি। ওদের পাশেই সুনীলকে রাখব।’’
প্রথম দিন সুনীলের খেলা দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ভাইচুং। তাঁকে নিজের উত্তরসূরি বলে পরিচয় দিতেন। সুনীল কতটা বদলে গিয়েছেন? ভাইচুংয়ের বিশ্লেষণ, ‘‘সুনীল এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এটা হয়েছে বয়স বাড়ার সঙ্গে। আমার মতে, বয়স কখনওই প্রতিবন্ধক নয়। বয়সের সঙ্গে মানুষের অভিজ্ঞতাও বাড়তে থাকে। আগে যা বুঝতে বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হত, সেই কাজটাই বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেক সহজ হয়ে যায়। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তা উপলব্ধি করেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘বয়স যখন কম ছিল, মাঠে নেমে অনেক ভুল করতাম। কিন্তু কোথায় ভুল হচ্ছে, তা ঠিক মতো ধরতে পারতাম না। বয়স বাড়ার সঙ্গে কিন্তু নিজের ভুলত্রুটিগুলি সহজেই বুঝতে পারতাম এবং তা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। জানতাম, কী ভাবে খেললে সফল হব, গোল করব।’’
এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব শুরু হওয়ার আগে সুনীলের কথায় অবসরের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। বলেছিলেন, ‘‘জীবন খুবই অনিশ্চিত। যত দিন উপভোগ করব, ফুটবল চালিয়ে যাব। যে দিন থেকে খেলে আনন্দ পাব না, ছেড়ে দেব। এই কারণেই প্রত্যেকটি ম্যাচকেই আমার শেষ ম্যাচ মনে করে মাঠে নামি।’’ হংকংয়ের বিরুদ্ধে ‘ডি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগে অধিনায়কের পাশে বসেই ইগর স্তিমাচ জানিয়ে দেন, দেশের হয়ে ১০০ গোল না করা পর্যন্ত সুনীলকে তিনি অবসর নিতে দেবেন না। আপনিও কি একমত জাতীয় কোচের সঙ্গে? ভাইচুংয়ের জবাব, ‘‘সুনীলকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ও কত দিন খেলবে। ইগর বা আমার কথায় কিছু হবে না। কারণ, এক জন খেলোয়াড়ই সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারে, কত দিন সে খেলতে পারবে।’’ আরও বললেন,‘‘বড় চোট পেলে সুস্থ হয়ে আগের ছন্দে ফেরা খুবই কঠিন ফুটবলারদের পক্ষে। আমাদের প্রজন্মের অনেকেরই ফুটবলজীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল এই চোটের কারণে। ও এতটাই ফিট যে, চোট-আঘাতের সমস্যায় খুব একটা পড়তে হয়নি। তাই যত দিন সুনীল নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে চোট-আঘাত থেকে, ততই দীর্ঘ হবে ওর ফুটবলজীবন। উপকৃত হবে ভারতীয় ফুটবল।’’
এশিয়ান কাপের মূল পর্বের সূচি ঘোষণা না হলেও শোনা যাচ্ছে ২০২৪ সালের শুরুতে হতে পারে এই প্রতিযোগিতা। ঘনিষ্ঠ মহলে সুনীল আগ্রহ প্রকাশ করেছেন খেলার। উচ্ছ্বসিত ভাইচুং বললেন, ‘‘এশিয়ান কাপের মূল পর্বে ভারতীয় দলের জার্সিতে সুনীলকে খেলতে দেখার ব্যাপারে আমিও দারুণ ভাবেই আশাবাদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy