Advertisement
E-Paper

দশ জনের ইস্টবেঙ্গল হারল ওড়িশার কাছে, জয়ের হ্যাটট্রিক হল না, চিন্তা বাড়ালেন তালাল

জয়ের হ্যাটট্রিক হল না। উল্টে হারতে হল ঘরের মাঠে। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ থেকে ইস্টবেঙ্গলের অপরাজিত থাকার যে দৌড় শুরু হয়েছিল তা থামল ওড়িশার কাছে। বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একই প্রতিপক্ষের কাছে হারল ১-২ গোলে।

অভীক রায়

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:২৮
football

ঘরের মাঠে হারল ইস্টবেঙ্গল। ছবি: সমাজমাধ্যম।

ইস্টবেঙ্গল ১ (লালচুংনুঙ্গা)
ওড়িশা ২ (জেরি, বুমোস)

জয়ের হ্যাটট্রিক হল না। উল্টে হারতে হল ঘরের মাঠে। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ থেকে ইস্টবেঙ্গলের অপরাজিত থাকার যে দৌড় শুরু হয়েছিল তা থামল ওড়িশা। ২২ অক্টোবর আইএসএলে শেষ বার এই ওড়িশার কাছেই হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। বৃহস্পতিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে একই প্রতিপক্ষের কাছে হারল ১-২ গোলে। গোটা দ্বিতীয়ার্ধ ইস্টবেঙ্গলকে খেলতে হয়েছে দশ জনে। তার মধ্যেই লালচুংনুঙ্গার গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। তবে জেরি এবং হুগো বুমোসের গোলে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরছে ওড়িশা। হেরে আইএসএলে ১১ নম্বরেই থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল। ওড়িশা উঠে এল তিন নম্বর স্থানে।

তালালের চোট

ম্যাচের শুরুতেই আহমেদ জাহুর থেকে বল কেড়ে নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম আক্রমণটা শুরু করেছিলেন তিনি। দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস, সাউল ক্রেসপোর মতো ফুটবলারের অনুপস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গলের মূল চালিকাশক্তি হওয়ার কথা ছিল তাঁরই। কে জানত মাঠে মাত্র দশ মিনিট স্থায়ী হবে তালালের আয়ু? ম্যাচে তখনও দু’দল নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরোয়নি। তার মধ্যে ম্যাচে তালালের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গেল। পাঁচ মিনিটের মাথায় হুগো বুমোসের সঙ্গে সংঘর্ষে হাঁটুতে চোট পেলেন। মাঠে এবং মাঠের বাইরে বেশ কিছু ক্ষণ চিকিৎসা চলল। মিনিট তিনেক পর কিছুটা জোর করেই যেন মাঠে নামলেন। তত ক্ষণে সাইডলাইনে নন্দকুমার ওয়ার্ম-আপ করা শুরু করে দিয়েছেন। মাঠে নেমেও প্রতিটা পদক্ষেপে খোঁড়াচ্ছিলেন তালাল। দশ মিনিট যেতে না যেতেই পড়ে গেলেন। স্ট্রেচারে চড়িয়ে মাঠ থেকে বার করতে হল তাঁকে। মাঠে তাঁর অনুুপস্থিতি আগাগোড়া ভুগিয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে।

রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত

তালালকে আঘাত করার পরেই পাল্টা বুমোসকে মেরে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেছিলেন জিকসন। তবে প্রথমার্ধে শেষের আগে তাঁকে যে ভাবে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড এবং লাল কার্ড দেখানো হল তা নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। একটি বল পেয়ে চকিতে ঘুরতে গিয়েছিলেন জিকসন। হাত এসে লাগে পাশে থাকা দিয়েগো মৌরিসিয়োর ঘাড়ে। মৌরিসিয়ো পড়ে গিয়ে প্রবল ভাবে কাতরাতে থাকেন। সম্ভবত তা দেখেই রেফারি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বার করে দেন জিকসনকে। অথচ রিপ্লে-তে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে জিকসন মোটেই ইচ্ছাকৃত ভাবে আঘাত করতে চাননি। ঘুরতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য রাখার জন্যই হাতটি লেগেছে। রেফারির সিদ্ধান্তের জেরে ইস্টবেঙ্গলকে একটি অর্ধ খেলতে হয়েছে দশ জনে। জিকসনকে রাখা হয়েছিল ক্রেসপোর অভাব পূরণ করার জন্য। প্রথমার্ধে সেই কাজ ভাল ভাবেই পালন করেছিলেন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ফুটবলার খুঁজে পাওয়া গেল না। যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন নিশু কুমার।

দুই গোলকিপারের ভুল

ইস্টবেঙ্গল এবং ওড়িশা দুই দলই গোল পেয়েছে নিজেদের গোলকিপারের ভুলে। ইস্টবেঙ্গলের গোলের ক্ষেত্রে নাওরেম মহেশের কর্নার লাফিয়ে ধরতে গিয়েও ফস্কান অমরিন্দর সিংহ। বক্সের জটলায় বল পড়ে হিজাজি মাহেরের পায়ে। তাঁর শট মুর্তাদা ফল আটকে দিলেও ফিরতি বল গোলে ঠেলে দেন লালচুংনুঙ্গা। ওড়িশা সমতা ফেরায় প্রভসুখন গিলের ভুলে। ইসাক রালতের থেকে জেরি বল পেয়ে হালকা শট মেরেছিলেন। তিনি ক্রস করবেন ভেবে আগেই প্রথম পোস্ট ছেড়ে ডান দিকে ছুটে গিয়েছিলেন প্রভসুখন। কিন্তু জেরির শট প্রথম পোস্ট দিয়ে ঢুকে যায়। এ সব ক্ষেত্রে ফুটবলার ক্রস করার পর প্রথম পোস্ট ছেড়ে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে ছুটে যান গোলকিপারেরা। তবে প্রভসুখনের অনুমানক্ষমতা এ ক্ষেত্রে ভুল প্রমাণিত হয় এবং দাম চোকাতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে।

ভাল খেলেও খলনায়ক আনোয়ার

বুমোস, আহমেদ জাহু, দিয়েগো মৌরিসিয়ো-সমৃদ্ধ ওড়িশাকে আটকানো ইস্টবেঙ্গলের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষত যেখানে প্রথম একাদশে নিশ্চিত হেক্টর ইয়ুস্তে পুরোপুরি ফিট হননি। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করা ওড়িশাকে আটকানোর দায়িত্ব ছিল আনোয়ার আলি এবং হিজাজির কাঁধে। দু’জনেই নিজেদের দায়িত্ব ভাল ভাবে সামলেছেন। আনোয়ারের জন্য ভাল এবং খারাপ দুটো কথাই লেখা যায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে দশ জনে হয়ে যাওয়া দলটার রক্ষণ একার হাতে সামলেছেন তিনি। যে দিকেই বল গিয়েছে তিনি ছুটে গিয়েছেন। বিপক্ষের তিন অস্ত্রকেই ধারালো হতে দেননি। সেই আনোয়ারের ভুলেই দ্বিতীয় গোল হজম করল ইস্টবেঙ্গল। ডান দিক থেকে মৌরিসিয়ো বল নিয়ে ঢোকার সময় তিনি আগেই চূড়ান্ত ট্যাকল করেন। মৌরিসিয়ো অনায়াসে আনোয়ারের পাশ দিয়ে বল কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে বুমোসকে নিখুঁত পাস দেন। গোল করতে ভুল করেননি ফরাসি ফুটবলার।

ইস্টবেঙ্গলের লড়াকু মানসিকতা

ম্যাচে হারলেও ইস্টবেঙ্গলের লড়াকু মানসিকতা নজর এড়ায়নি কারওরই। মহমেডানের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে দু’টি লাল কার্ড দেখে বাধ্য হয়ে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে হয়েছিল। তবে ওড়িশার বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে জিকসনকে খুইয়েও আগ্রাসনের রাস্তা থেকে সরে আসেনি লাল-হলুদ। প্রথম থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বললেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা। ভাগ্য সঙ্গ দিলে গোলও করতে পারতেন। তবে ফাইনাল থার্ডে গিয়ে নিজেদের কাজটা করতে পারছিল না ইস্টবেঙ্গল। পাশাপাশি ফলের নেতৃত্বাধীন ওড়িশা রক্ষণে আরও পিছনে গিয়ে বক্সে পায়ের জঙ্গল করে ইস্টবেঙ্গলের যাবতীয় আক্রমণ আটকে দিচ্ছিল। প্রথমার্ধে ইসাকের নেওয়া দু’টি প্রয়াসের কথাই বলতে হবে। তাঁর একটি হেড এবং শট লাগে ক্রসবারে। না হলে প্রথমার্ধেই ইস্টবেঙ্গলের পিছিয়ে পড়ার কথা।

East Bengal Odisha FC ISL 2024-25 Madih Talal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy