Advertisement
১১ মে ২০২৪
FIFA World Cup Qatar 2022

চিকিৎসকরা রাজি নন, কাপ থেকে দূরে পেলে

১৯৭৩ সালে স্যান্টোসের হয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে প্রথমবার কাতার এসেছিলেন পেলে। সেই সময় তাঁকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা এখনও ফুটবল সম্রাটের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।

অনুশীলনে নেমাররা।

অনুশীলনে নেমাররা। ছবি রয়টার্স।

শুভজিৎ মজুমদার
দোহা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২ ০৭:২৬
Share: Save:

বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ২০১০ সালে কাতারের নাম ঘোষণার পরেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন পেলে। ইচ্ছে ছিল ১৮ ডিসেম্বর দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে বসে ব্রাজিলের ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জয় দেখবেন। কিন্তু বাধ সেজেছে ফুটবল সম্রাটের শরীর। চিকিৎসকরা এখনও অনুমতি না দেওয়ায় বিশ্বকাপ দেখতে কাতারে আসার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে পেলের।

১৯৭৩ সালে স্যান্টোসের হয়ে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে প্রথমবার কাতার এসেছিলেন পেলে। সেই সময় তাঁকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা এখনও ফুটবল সম্রাটের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। কাতারকে বিশ্বকাপের দায়িত্ব দেওয়ার পরে পেলে বলেছিলেন, ‘‘কাতারে আমি একাধিক বার গিয়েছি। প্রত্যেকবারই মানুষের উন্মাদনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার বিশ্বাস, বিশ্বকাপের আয়োজন দুর্দান্ত ভাবেই করবে ওরা।’’ অসুস্থতার কারণে প্রিয় কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে আসার স্বপ্ন হয়তো অপূর্ণই থেকে যাবে ফুটবল সম্রাটের। নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রদের প্রস্তুতি দেখার ফাঁকেই ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার এক প্রভাবশালী কর্তা হতাশ হয়ে বললেন, ‘‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২০১৮ বিশ্বকাপে যেতে পারেননি পেলে। কিন্তু মাসখানেক আগেই জানিয়েছিলেন, কাতারে তিনি মাঠে থাকতে চান। ফুটবলাররাও খুব উৎসাহিত হয়েছিল ফুটবল সম্রাটের ইচ্ছের কথা শুনে। কিন্তু ওঁর চিকিৎসকরা কিছুতেই অনুমতি দিচ্ছেন না।’’ যোগ করলেন, ‘‘পেলের বয়স এখন ৮২। নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আমরাও জানি, এই অবস্থায় ওঁর পক্ষে দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল সামলানো কঠিন। তা সত্ত্বেও ফুটবল সম্রাট নিজে যখন ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তখন আমরাও প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কিন্তু ওঁর চিকিৎসকরা রাজি নন। বলেছেন, পেলের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে সর্বক্ষণ শুধু পর্যবেক্ষণে রাখলেই হবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসা করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থাও থাকা দরকার। কাতারে তা সম্ভব হওয়া কঠিন। তাই ব্রাজিল যদি ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জিততে পারে, টিভিতেই হয়তো দেখতে হবে ফুটবল সম্রাটকে।’’

শারীরিক কারণে কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে পেলের আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দিয়েগো মারাদোনা দু’বছর আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দুই কিংবদন্তিকে ছাড়া বিশ্বকাপের জৌলুস অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু কাতার পৌঁছনোর পরে ভুল ভাঙতে বাধ্য। দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অন্দরমহলের ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। আস্ত একটা ফুটবল মাঠই উঠে এসেছে। রয়েছে গোলপোস্টও। মাঠের চার দিক সাজানো বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা ৩২টি দেশের পতাকা দিয়ে। বিমানবন্দরের প্রত্যেক কর্মীর পোশাকে শোভা পাচ্ছে উজ্জ্বল সোনালি রঙের বিশ্বকাপ ট্রফির খুদে সংস্করণ। আফ্রিকার উগান্ডা থেকে বছর তিনেক আগে হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ করতে এসেছেন মার্টিন।

এক বছর ধরে বেতনের একাংশ তিনি জমিয়েছেন বিশ্বকাপের খেলা দেখার টিকিট কাটার জন্য। বছর ছাব্বিশের মার্টিন বলছিলেন, ‘‘আমি চারটে ম্যাচের টিকিট পেয়েছি। গ্রুপ লিগে কাতার বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচ ছাড়াও দু’টি কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটি সেমিফাইনাল দেখব।’’ ফাইনাল দেখবেন না? ‘‘ইচ্ছে তো আছে। কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনালের টিকিটের প্রচুর দাম। টাকা যা জমিয়েছিলাম, সব শেষ হয়ে গিয়েছে এই চারটে টিকিট কাটতেই। কেউ যদি ফাইনালের একটা টিকিট দেন, তা হলেই যেতে পারব। দেখি কী হয় শেষ পর্যন্ত,’’ বলছিলেন উগান্ডার যুবক।

বিশ্বকাপ জ্বরে সকলেই এই মুহূর্তে আক্রান্ত কাতারে। সাধারণ যাত্রীদের বিমানবন্দরের অভিবাসন দফতরের আধিকারিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ছাড়পত্র পেতে অন্তত মিনিট কুড়ি লাগছিল। বিশ্বকাপ দেখতে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মিনিট খানেকের বেশি দাঁড়াতেই হচ্ছে না। এখানেই শেষ নয়। সাধারণ ফুটবলপ্রেমী থেকে সাংবাদিক— বিশ্বকাপের জন্য কাতার এসেছেন শুনলেই বিনামূল্যে সিম কার্ড উপহার দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার কর্মীরা।

দোহা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে ওঠার পরে আরও একবার বিস্মিত হওয়ার পালা। চোখ আটকে যাবে বিশালাকৃতি মশালে। আল ওয়াব স্ট্রিটের ৯৮০ ফিট উচ্চতার মশালের (টর্চ টাওয়ার) মাথায় মনে হবে যেন আগুন জ্বলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত কয়েক দিন ধরে এখানেই রয়েছে বিশ্বকাপের ট্রফি। সকাল থেকেই মানুষ ভিড় করছেন এই ট্রফি দেখতে।

বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার টিকিট যাঁরা পাননি, তাঁরা যাতে হতাশ না হন তার জন্য সমুদ্রের তীরে আল বিদ্দা পার্কে ‘ফ্যান ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করছে ফিফা। টানা ১০০ ঘন্টা বিনামূল্যে গানবাজনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। থাকবে খাওয়া-দাওয়ার ঢালাও ব্যবস্থা।

বিশ্বকাপকে নিয়ে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা তুঙ্গে পৌঁছলেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই দলগুলি। দোহার আবহাওয়া উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তাদের। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টা থেকে অনুশীলন করার কথা ছিল ওয়েলসরে। কিন্তু গরমের জন্য নির্ধারিত সময়ে অনুশীলনেই নামতে পারেননি গ্যারেথ বেলরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

FIFA World Cup Qatar 2022 pele Brazil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE