Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
FIFA World Cup 2022

বিশ্বকাপের মাঝেই দেশে গ্রেফতার ইরানের ফুটবলার

ওই ফুটবলার ইরানের ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলেন। ইরান সরকার জানিয়েছে, ভোরিয়ার মতো অন্য কেউ মুখ খুললে তাঁদেরও একই পরিণতি হবে।

গ্রেফতার হলেন ইরানের প্রাক্তন ফুটবলার।

গ্রেফতার হলেন ইরানের প্রাক্তন ফুটবলার। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৩৮
Share: Save:

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলাননি ইরানের ফুটবলাররা। সেই নিয়ে এ বার ঝামেলা শুরু হয়ে গেল দেশে। ইরান সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অপরাধে সে দেশের প্রাক্তন ফুটবলারকে গ্রেফতার করা হল। ভোরিয়া ঘাফৌরি নামে ওই ফুটবলার গত বিশ্বকাপেও দলে ছিলেন। এ বার জায়গা পাননি। তবে ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলেন। ইরান সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ভোরিয়ার মতো অন্য কেউ মুখ খুললে তাঁদেরও একই পরিণতির শিকার হতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়s যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বড় নাম ভোরিয়া। ক্লাবের অনুশীলনের পরই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। ইরানে হিজাব-বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করার পাশাপাশি দেশের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোরিয়া আদতে কুর্দিশ। সেই কারণেই তাঁকে গ্রেফতার হতে হল কি না প্রশ্ন উঠেছে। কারণ গত কয়েক দিনে ইরানের কুর্দিশ এলাকাগুলিতে ব্যাপক ধরপাকড় হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রচুর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

ভোরিয়া এখন খেলেন ফুলাদ খুজেস্তান ক্লাবের হয়ে। আগে তিনি ইরানের প্রথম সারির ক্লাব এস্তেঘলালের অধিনায়ক ছিলেন। কিছু দিন আগেই তাঁর চুক্তি বাতিল করা হয়। শোনা গিয়েছে, সেটাও সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্যেই। ইরানে হিজাব-বিরোধী আন্দোলনকে সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন ভোরিয়া। কুর্দিশ পোশাক পরে ছবিও দিয়েছেন। এতেই চটেছে সে দেশের সরকার।

গ্রেফতার ভোরিয়া।

গ্রেফতার ভোরিয়া। ফাইল ছবি

গত সোমবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের আগেই ইরানের অধিনায়ক আলিরেজা জাহানবকশ জানিয়েছিলেন, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে কিনা সেটা দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, ইরানের বেশির ভাগ ফুটবলারই জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার পক্ষে মত দেন। ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, স্টেডিয়ামে হাজির অনেক সমর্থকও জাতীয় সঙ্গীতের সময় চুপ ছিলেন। কোনও ফুটবলারই জাতীয় সঙ্গীত গাননি।

দু’মাস আগে প্রতিবাদী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ফুঁসছে ইরান। রোজই বিক্ষোভ হচ্ছে গোটা দেশে। কিছু দিন আগেই ইরানের খ্যাতনামী শেফ মেহরশাদ শাহিদিকে পিটিয়ে খুন করেছে রেভলিউশনারি গার্ড ফোর্স বলে অভিযোগ ওঠে। হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন শাহিদি। তখনই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে হেফাজতে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। শাহিদির শেষকৃত্যের সময় প্রতিবাদে পথে নামেন হাজার হাজার মানুষ।

১৯ বছর বয়সেই দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন শাহিদি। তাঁকে ইরানের ‘জেমি অলিভার’ বলা হত। আরক শহরে পথে নেমে প্রতিবাদের সময় তাঁকে তুলে নিয়ে যায় ইরানের নিরাপত্তারক্ষীরা। হেফাজতে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, খুলিতে আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। শাহিদির পরিবার অভিযোগ করে, তাদের ছেলের হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয়েছে বলার জন্য চাপ দিচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসন। ইরানের প্রশাসন অবশ্য শাহিদির মৃত্যুর দায় এড়িয়ে গিয়েছে। ইরানের প্রধান বিচারপতি আবদোলমেহদি মৌসাভি স্পষ্টই জানিয়েছে, শাহিদির দেহে হাত, পা বা খুলি ভাঙার কোনও চিহ্ন মেলেনি।

যদিও শাহিদির মৃত্যুর নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন অনেকে। চিকিৎসক নিনা আনসারি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘মেহরশাদ শাহিদি বুট রেস্তরাঁর একটি প্রতিভাশালী শেফ ছিলেন। ইরানে ওঁকে ভয়ঙ্কর ভাবে খুন করা হয়েছে। পরের দিন ওঁর ২০ বছরের জন্মদিন ছিল। আমরা কখনও ভুলব না। কখনও ক্ষমা করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE