ম্যাচের পর কাঁদলেন নেমার। ছবি: রয়টার্স
পেনাল্টি স্পট থেকে তাঁর শটটা পোস্টে লাগার পরেই হতাশায় মাটিতে বসে পড়লেন মার্কুইনোস। মুখ লুকোলেন ঘাসে। ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ তখন মাঠের একটি প্রান্তের দিকে দৌড়চ্ছেন। তাঁর পিছনে পিছনে ক্রোয়েশিয়ার বাকি ফুটবলাররা। সে দিকে অবশ্য কারওর নজর ছিল না। চোখ তখন হলুদ জার্সিধারীদের দিকে। সেন্টার লাইনে সারি দাঁড়িয়ে থাকা মুখগুলো দেখলে করুণা হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়ে মাঠেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন নেমার, রিচার্লিসন, রদ্রিগোরা।
সেন্টার লাইনে তখন সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রদ্রিগো, পেদ্রো, নেমার, আলেক্স সান্দ্রো, অ্যান্টনি, থিয়াগো সিলভা, ফ্রেডরা। এক এক জনের অনুভূতি এক এক রকম। তবে প্রত্যেকের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় কারওর বিশ্বাসই হচ্ছে না।
একা একা বসেছিলেন নেমার। কিছু ক্ষণ পরেই ভেঙে পড়লেন কান্নায়। সামলানোই যাচ্ছিল না ব্রাজিলের এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারকে। ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন দানি আলভেস। এ দিন ম্যাচে খেলেননি। ৩৯ বছর বয়স তাঁর। এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। দাদা হিসাবে ভাইকে যে ভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার দরকার, সেটাই করলেন। কাঁধে টেনে নিলেন নেমারের মাথা। বুকে-পিঠে হাত বুলিয়ে নানা ভাবে চেষ্টা করলেন নেমারকে শান্ত করার। কিন্তু বৃথাই সেই প্রচেষ্টা। ৩১ বছরের নেমারের কাছেও তো সময় কমে আসছে। কে বলতে পারে এটা তাঁরও শেষ বিশ্বকাপ নয়। কাপ নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মরিয়া হয়েই। আরও এক বার ঠোক্কর খেতে হল শেষ আটে এসে।
মাঠের আর এক প্রান্তে দেখা গেল রদ্রিগোকে। হাউ হাউ করে কাঁদছেন। টাইব্রেকারে তাঁর মারা প্রথম শটটাই আটকে গিয়েছে। তাতে আত্মবিশ্বাস আরও তলানিতে চলে যায় ব্রাজিলের। সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দ উৎসব করার ফাঁকে ছুটে এলেন লুকা মদ্রিচ। দু’জনে একসঙ্গে খেলেন স্পেনের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। রদ্রিগোকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিলেন শেষ বিশ্বকাপ খেলা মদ্রিচও। থামানো যাচ্ছিল না অ্যান্টনি এবং রাফিনহাকেও।
কান্না তরুণী সমর্থকের। রিয়ো দে জেনিরোয়। ছবি: রয়টার্স
ফুটবলারদের মতো গ্যালারিতেও একই দৃশ্য। বহু যুগলকে দেখা গেল হাউহাউ করে কাঁদতে। প্রেমিকের বুকে মাথা রেখে অঝোরে কেঁদে চলেছেন প্রেমিকা। পিঠে চাপড় দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলেন প্রেমিক। গালে সবুজ-নীল রং মেখে বিশ্বকাপের রেপ্লিকা নিয়ে ব্রাজিলের প্রতি ম্যাচেই গ্যালারিতে দেখা গিয়েছে এক সমর্থককে। নকল বিশ্বকাপ থেকে গেল হাতেই। আসল বিশ্বকাপ তাঁর দেশের আর তোলা হল না। সমর্থকের হাতে ধরা সেই নকল বিশ্বকাপ ভিজে গেল চোখের জলে।
খেলা যখন শেষ হয়েছে, রিও দি জেনিরো, সাও পাওলোয় তখন দুপুর গড়িয়ে সন্ধে নামছিল। বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হয়ে খেলা দেখছিলেন মানুষ। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর সেখানেও একই ছবি। কেউ পতাকা জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন, কেউ বন্ধুর কোলে মাথা রেখে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা যে সত্যিই সহজ কাজ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy