Advertisement
E-Paper

চিনের বিনিয়োগ, বিদেশে খেলা ফুটবলারদের দলে টানা, কী ভাবে সাড়ে পাঁচ লক্ষের দেশ কেপ ভার্দে পৌঁছল ফুটবল বিশ্বকাপে?

আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম দিকে থাকা একটি দ্বীপপুঞ্জ। সব দ্বীপ মিলিয়ে জনসংখ্যা ছ’লক্ষেরও কম। সেই কেপ ভার্দেই চমকে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে। কী ভাবে সম্ভব হল?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:১৭
football

বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের কেপ ভার্দের এক ফুটবলারের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স।

কোনও দেশের কি দু’টি স্বাধীনতা দিবস থাকতে পারে? পারে। কেপ ভার্দের পারে। ৫ জুলাই পর্তুগিজ়দের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার দিনটির পাশাপাশি ১৪ অক্টোবর এই দ্বীপরাষ্ট্রের ‘নতুন স্বাধীনতা দিবস’।

গত মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর বিশ্বকাপ ফুটবলের যোগ্যতা অর্জন করেছে তারা। প্রথম বার বিশ্বকাপের টিকিট। কেপ ভার্দে সরকার গণছুটি ঘোষণা করতে রাজি না হলেও দেশের প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া নেভেস সেই দিনটিকে বলেছেন ‘নতুন স্বাধীনতা দিবস’।

আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম দিকে থাকা একটি দ্বীপপুঞ্জ। সব দ্বীপ মিলিয়ে জনসংখ্যা ছ’লক্ষেরও কম। সেই কেপ ভার্দেই চমকে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে। এসোয়াতিনিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে তারা আফ্রিকার যোগ্যতা অর্জন পর্বে নিজেদের গ্রুপে সবার উপরে শেষ করেছে। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসাবে ফুটবল বিশ্বকাপে খেলতে চলেছে কেপ ভার্দে।

মাত্র ১০০ দিন আগে কেপ ভার্দের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ৫ জুলাই স্বাধীনতা দিবস এবং ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন— এই দু’টি তারিখ এত দিন কেপ ভার্দের মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ছিল। তার সঙ্গে যুক্ত হল ১৪ অক্টোবর।

কেপ ভার্দের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। তার মধ্যে যেমন দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ফুটবলারদের জাতীয় দলে নেওয়ার কাজ রয়েছে, তেমনই রয়েছে চিন এবং ফিফার বিনিয়োগও।

বিশ্বকাপের টিকিটের প্রতিকৃতি হাতে এক ফুটবলার।

বিশ্বকাপের টিকিটের প্রতিকৃতি হাতে এক ফুটবলার। ছবি: রয়টার্স।

কেপ ভার্দের ফুটবল সংস্থা কয়েক বছর আগে থেকেই দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ফুটবলারদের জাতীয় দলে নেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। কেপ ভার্দের স্বাধীনতার আগে, ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে প্রচুর মানুষ দেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকা এবং ইউরোপের নানা দেশে। অর্থাৎ গোটা বিশ্বের কোথাও না কোথাও ছড়িয়ে আছেন কেপ ভার্দের মানুষ।

মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকায় থাকা ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কেপ ভার্দের হয়ে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অনেকেই সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এসোয়াতিনির বিরুদ্ধে যে ২৫ জন দলে ছিলেন, তাদের মধ্যে ১৪ জন থাকেন অন্য দেশে। পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস এবং ফ্রান্সেই থাকেন বেশির ভাগ মানুষ। দীর্ঘ দিন ধরে পর্তুগালের উপনিবেশ ছিল কেপ ভার্দে। ফলে সেখানেই কেপ ভার্দের সবচেয়ে বেশি লোক থাকেন।

নেদারল্যান্ডসের রটারডামে কেপ ভার্দের বংশোদ্ভূত প্রায় ২৩ হাজার মানুষ থাকেন। শুধু রটারডামে থাকা ফুটবলারদের মধ্যেই ছ’জনকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন, দাইলন লিভ্রামেন্টো বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে কেপ ভার্দের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন।

২০০২ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গিয়েছিল কেপ ভার্দে। তার পর থেকে বিদেশে থাকা কেপ ভার্দে বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয়। শুরুটা করেছিলেন লিতো। তিনি অনেক আগে পর্তুগালে গিয়ে সেখানকার প্রথম ডিভিশনে ২০০-র বেশি ম্যাচ খেলেছেন। কেপ ভার্দে ফুটবল সংস্থার সহ-সভাপতি বলেছেন, “আমরা লিতোকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে পর্তুগালে থাকা কেপ ভার্দে বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের এ দেশের হয়ে খেলার জন্য ও রাজি করাতে পারে।”

আফ্রিকার এই দ্বীপপুঞ্জ দেখেছে বহু ভয়ঙ্কর খরা। প্রাকৃতিক সম্পদও খুব কম। চাকরির সুযোগ নেই। ফলে দশক দশক ধরে বহু মানুষ একটু ভাল জীবন পেতে পাড়ি দিয়েছেন অন্যান্য দেশে। তবে পরবর্তী প্রজন্মকে শিখিয়েছেন কেপ ভার্দের প্রতি নিজেদের ভালবাসার কথা। তাই এখন যাঁরা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে কেপ ভার্দের হয়ে খেলতে আসছেন, তাঁরা চাইছেন বাবা-মা, ঠাকুরদাদের ঋণ শোধ করতে। লিভ্রামেন্টো বলেছেন, “আমাদের বাবা-মা বা তার আগের প্রজন্ম এই দেশের থেকে যা পেয়েছে, তা কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করছি। সকলেই উন্নত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে অন্য দেশে চলে গিয়েছিলেন। অন্তত আমরা এই দেশের জন্য কিছু করতে চাইছি।”

কেপ ভার্দে, যা ঘুরতে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

কেপ ভার্দে, যা ঘুরতে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। ছবি: সংগৃৃহীত।

কেপ ভার্দেতেই যাঁরা জন্মেছেন এবং যাঁরা এ দেশের বংশোদ্ভূত, তাঁদের মধ্যে সংযোগরক্ষার কাজটি করেছেন কোচ পেদ্রো লিতাও ব্রিতো, যিনি বুবিস্তা নামে বেশি পরিচিত। তাঁর উদ্যোগে স্থানীয় খেলোয়াড়েরা সে দেশের আধা-পেশাদার লিগে খেলেন। মাসে হয়তো ৩০-৩১ হাজার টাকা বেতন পান। তবে দেশের হয়ে খেলার সময় তাঁদের আবেগ এবং দায়বদ্ধতা দেখার মতোই।

কেপ ভার্দের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রুই কোস্তা ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-কে বলেছেন, “আমরা অনেক বদলে গিয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৭ দল ভাল খেলে। মেয়েদের দল মহাদেশীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে পারে। আমাদের খেলার একটা দর্শন তৈরি হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী ধাপ হিসাবে আরও বেশি তরুণ খেলোয়াড়দের তুলে আনা হবে। এখন সবাই কেপ ভার্দের হয়ে খেলতে চায়।”

আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সে চার বার খেলেছে কেপ ভার্দে। গত বার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। তবে যোগ্যতা অর্জন না করায় পরের বার খেলতে পারবে না। বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে অবশ্য সেই ব্যথা ভুলে গিয়েছে তারা। চলতি শতকের শুরুর দিকে তাদের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮২। সেটাই এখন হয়েছে ৭০। আগামী র‌্যাঙ্কিংয়ে তা আরও অনেকটা কমবে।

ফিফার অর্থও সাহায্য করেছে কেপ ভার্দেকে। পরিকাঠামো উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি চিনের অর্থে তৈরি হয়েছে জাতীয় স্টেডিয়াম, যেখানে এসোয়াতিনিকে হারিয়েছে কেপ ভার্দে। সেই স্টেডিয়াম দেখতে একটি বাটির মতো। রয়েছে দৌড়নোর ট্র্যাকও। রাজধানী শহরের ফাঁকা একটি প্রান্তে থাকা এই স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোও আকর্ষণীয়।

আপাতত সাড়ে পাঁচ লক্ষের দেশ অপেক্ষা করছে আর কয়েকটি মাসের। তার পরেই আমেরিকা, মেক্সিকো এবং কানাডায় শুরু হবে বিশ্বকাপ। কারা খেলা দেখতে যাবেন সেই পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

FIFA World Cup 2026
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy