আইএসএলে টানা দ্বিতীয় বার লিগ-শিল্ড জয়ের নজির কি গড়তে পারবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট? ১৯টি ম্যাচ থেকে ৪৩ পয়েন্ট অর্জন করে এই মুহূর্তে টেবলের শীর্ষ স্থানে জেসন কামিংস-রা। সহজ অঙ্ক হল, বাকি পাঁচটি ম্যাচ থেকে ১০ পয়েন্ট পেলেই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে মোহনবাগান। অর্থাৎ, তিনটি জয় ও একটি ড্র দরকার। সেক্ষেত্রে আর কোনও দলই ৫৩ পয়েন্টে পৌঁছে যাওয়া পালতোলা নৌকোর সওয়ারীদের ছুঁতে পারবে না।
১০ নয়, মোহনবাগানের ফুটবলারদের পাখির চোখ ১৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ, সব ম্যাচ জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই চান না তাঁরা। কোচ হোসে ফ্রান্সিসকো মলিনা অবশ্য সতর্ক। যুবভারতীতে পঞ্জাব এফসি-দ্বৈরথের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে পঞ্জাবকে হারানো ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পারলে লক্ষ্যের পথে আমরা অবশ্যই এগিয়ে যেতে পারব।’’ যোগ করলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, লিগ-শিল্ড জেতার জন্য আরও কত পয়েন্ট পেতে হবে তা নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছি না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য বুধবার জিতে মাঠ ছাড়া। তাই শুধু পঞ্জাব ম্যাচেই মনোনিবেশ করছি।’’
মঙ্গলবার বিকেলে যুবভারতীতে মোহনবাগানের অনুশীলনে জেমি ম্যাকলারেনদের দেখলে কে বলবে রাত পোহালেই খেলতে হবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে? কার্ড সমস্যায় রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ টম আলড্রেড নেই। একই কারণে খেলতে পারবেন না আপুইয়া। মাঝমাঠের আর এক ভরসা অনিরুদ্ধ থাপার দলে ফিরতে এক থেকে দু’সপ্তাহ লাগবে। অনুশীলনে যে ভাবে খুনসুটিতে মেতে ছিলেন ফুটবলাররা, মনেই হবে না আজ, বুধবার তাঁদের প্রতিপক্ষ মহমেডানের মতো দুর্বল দল নয়। সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৩-২ হারিয়ে সুপার সিক্সের অন্যতম দাবিদার পঞ্জাব।
মোহনবাগান চলতি মরসুমে এতটাই শক্তিশালী দল গড়েছে যে প্রতিটি বিভাগেই একাধিক বিকল্প। কোনও এক জন ফুটবলার চোট বা কার্ড সমস্যায় ছিটকে গেলেও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন না মলিনা।
আপুইয়া ও অনিরুদ্ধ খেলতে না পারলে দীপক টাংরি, সাহাল আব্দুল সামাদ, অভিষেক সূর্যবংশী রয়েছেন। আছেন আশিক কুরুনিয়নও। আলড্রেডের শূন্য স্থান পূরণের জন্য তৈরি প্রতিশ্রুতিমান দীপেন্দু বিশ্বাস। গুয়াহাটিতে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ফিরতি ডার্বিতে শেষ গোল করেছেন অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন। গোল পাচ্ছেন না কামিংস, দিমিত্রি পেত্রাতসও। কোনও সমস্যা নেই। লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংহ-রা আছেন। রক্ষণ ছেড়ে উঠে চলতি আইএসএলে ইতিমধ্যেই ছ’টি গোল করে ফেলছেন অধিনায়ক শুভাশিস বসু।
মলিনা তাই নিশ্চিন্তে বলতে পারেন, ‘‘চোট ও কার্ড সমস্যা খেলারই অঙ্গ। আমরা দলগত ফুটবলে বিশ্বাস করি। কেউ যদি খেলতে না পারে, তার অভাব পূরণ করার মতো যথেষ্ট যোগ্য ফুটবলার আমাদের রয়েছে। আগের ম্যাচে চোটের কারণে আলবার্তো ছিল না। ওর জায়গায় দীপেন্দু দুর্দান্ত খেলেছে। তাই আমি একদমই চিন্তা করি না।’’ মলিনা অবশ্য জানালেন একমাত্র গোলরক্ষক বিশাল কেথের কোনও বিকল্প নেই। মহমেডানের বিরুদ্ধে আইএসএলে পঞ্চাশটি ম্যাচে গোল না খাওয়ার নজির গড়েছেন তিনি। বুধবার ম্যাচ শুরুর আগে বিশালকে ৫০ নম্বর লেখা বিশেষ জার্সি দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
পঞ্জাবের বিরুদ্ধে আলবার্তো কি খেলতে পারবেন? মলিনা বললেন, ‘‘অনুশীলনে ওকে দেখার পরেই বলতে পারব।’’ সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার মিনিট চল্লিশের মধ্যেই চওড়া হাসি স্পেনীয় চাণক্যের মুখে। পুরোদমেই অনুশীলন করলেন আলবার্তো। মহড়া সেরে রাখলেন গোল করারও।
চিন্তা যত পঞ্জাব কোচ পানাইয়োটিস দিমপেরিসের। বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগানের ফুটবলাররা ভয়ঙ্কর। বিশেষ করে কামিংস। ওকে নিয়েই আমাদের সব চেয়ে বেশি উদ্বেগ।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)