বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করায় এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জনের পথ কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে গিয়েছে ভারতীয় দলের সামনে। আগামী ১০ জুন হংকং-কে হারাতে না পারলে পরিস্থিতি যে আরও প্রতিকূল হয়ে উঠবে খুব ভাল করেই জানেন সুনীল ছেত্রীরা। এই কারণেই ভারতীয় দলের অনুশীলনে সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ম্যাচের ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়ার উপরে।
নিউ টাউনে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের উৎকর্ষ কেন্দ্রে সোমবার থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারতীয় দল। মঙ্গলবার বিকেলে দেখা গেল অভিনব দৃশ্য। সুনীলরা তখন ওয়ার্মআপ শুরু করেছেন। হঠাৎ দেখা গেল নীল রঙের জার্সি ও প্যান্ট পরে মাঠে নেমে পড়লেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। সঙ্গে ভারতীয় দলের ডিরেক্টর আর এক প্রাক্তন গোলরক্ষক সুব্রত পাল। ফুটবলারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে মাঠের এক প্রান্তে গিয়ে কল্যাণ দৌড়তে শুরু করলেন। ভারতীয় দলের ফুটবলারেরা অবাক হয়ে দেখছিলেন সভাপতিকে। ব্যতিক্রম সুনীল। একমাত্র তাঁর-ই কল্যাণের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফেডারেশন সভাপতি নিজে গোলরক্ষক ছিলেন। তাই দৌড় শেষ করেই চলে গিয়েছিলেন বিশাল কেথ, অমরিন্দর সিংহদের অনুশীলন দেখতে। আলাদা করে কথা বললেন কোচ মানোলো মার্কেসের সঙ্গে।
ফিফা ক্রমতালিকায় ভারত ১২৭তম স্থানে। বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৩ নম্বরে। তা সত্ত্বেও শিলংয়ে ড্র করেছিলেন সুনীলরা। জিততে না পারার জন্য নিজেদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছিলেন মানোলো। মঙ্গলবার বিকেলে অনুশীলন শুরু হওয়ার আগে ফেডারেশনের বিচারে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার পাওয়া শুভাশিস বসুও বললেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ ম্যাচেই নয়, তার আগে মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে আমরা যা যা ভুল করেছি, তা শুধরে নিতে চাই। কোথায় সমস্যা হয়েছিল, তা নিয়ে কোচ আমাদের সঙ্গে করছেন। কেন ভুল হয়েছিল, তাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমরা যদি নিজেদের শুধরে নিয়ে হংকং ম্যাচে নামতে পারি, আশা করছি ভাল ফল হবে।’’
ফিফা ক্রমতালিকায় হংকং (১৫৩) পিছিয়ে থাকলেও মানোলো খুব একটা স্বস্তিতে নেই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্রয়ের হতাশা তাঁকেও ক্ষতবিক্ষত করছে। ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পেনীয় কোচ বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারের অনুপস্থিতির জন্য ফল খারাপ হয়েছে, এই অজুহাত দিতে চাই না। আমাদের বুঝতে হবে, হংকংয়ে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে। এই ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে। নিজেদের আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। যে কোনও মূল্যে জিততে হবে।’’
এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ‘সি’ গ্রুপে ভারত ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ, হংকং এবং সিঙ্গাপুর। এই মুহূর্তে চার দলেরই পয়েন্ট সমান (১)। কিন্তু শীর্ষ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্থানে হংকং। ভারত রয়েছে তৃতীয় স্থানে। সব দলের শেষে সিঙ্গাপুর। আগামী ১০ জুন ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলবে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে। হংকং-এর বিরুদ্ধে জিতলে অনেকটাই চাপ কমবে সুনীলদের। চিন্তিত মানোলো বলছেন, “শিলংয়ে ম্যাচের আগে বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাব্রেরা বলেছিলেন, এই গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন কে হবে তা বলা খুবই কঠিন। প্রতিটি দলই একে অপরকে হারাতে পারে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘ড্রয়ের পরে আমি হাভিয়েরকে বলেছিলাম, তুমি ঠিকই বলেছিলে। এখন চারটি দলেরই অর্জিত পয়েন্ট এক। তাই সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’’
অসুস্থতার কারণে মঙ্গলবারও অনুশীলনে ছিলেন না আশিক কুরুনিয়ন। বুধবার তার শিবিরে যোগ দেওয়ার কথা। রাহুল ভেকে যোগ দেবেন ২৩ মে। এ দিকে অনূর্ধ্ব-২৩ ভারতীয় দলের কোচ হলেন নওসাদ মুসা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)