১৮৯৪ সালে চার্লস মিলার নামে এক ইংরেজ কয়েকটি ফুটবল নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন লাতিন আমেরিকার পূর্ব প্রান্তে। ফুটবলপ্রেমীরা বলেন, পৃথিবী বদলে গিয়েছিল ওই একটি ঘটনাতেই।
সেই ঘটনার ১৩১ বছর পর এক ইটালীয় পা রাখতে চলেছেন লাতিন আমেরিকার সেই দেশে। ৮,৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কার্লো আনচেলোত্তি যখন ব্রাজিলে পদার্পণ করবেন, তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে ২২ কোটি মানুষ। সেই সঙ্গে গোটা বিশ্বের অগণিত ব্রাজিল সমর্থক, যাঁরা বিগত কয়েক বছর ধরে ‘সুদিন’ ফেরার স্বপ্ন দেখে চলেছেন।
ফুটবলবিশ্বে আনচেলোত্তি বেশি পরিচিত ‘ডন কার্লো’ নামে। তাঁর বিপুল ব্যক্তিত্ব, কৌশলী মস্তিষ্ক এবং সাফল্যই এই নামের কারণ। এই একই কারণে তাঁর এই নাম জনপ্রিয়ও বটে। অবসরে তিনি বিলাসবহুল ইয়টে বসে মনের সুখে সিগার টানেন এবং ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেন। পাশে থাকেন অসূয়া-উদ্রেককারিণী সুন্দরী বান্ধবীও। কিন্তু কোচিং করানোর সময় তিনিই আবার হাজির ভিন্ন বেশে। কালো স্যুট-টাই পরিহিত ইটালীয় প্রৌঢ় সাইডলাইনের ধারে কোঁচকানো ভ্রূ নিয়ে পায়চারি করতে থাকলেও নাকি বিপক্ষের ফুটবলারদের খানিক নড়বড়ে দেখায়। কারণ, তাঁরা জানেন, ওই ভ্রূকুঞ্চনের অর্থ নতুন কোনও ছক, নতুন কোনও কৌশল, যা এক লহমায় ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে পারে।

আনচেলোত্তির এই ভ্রূকুঞ্চনকেই ভয় পায় ফুটবলবিশ্ব। ছবি: সমাজমাধ্যম।
জীবনের ৬৫ তম বছরে পা রেখে সেই আনচেলোত্তি সম্ভবত তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে এমন এক দেশের হৃতগৌরব ফেরানোর চ্যালেঞ্জ, যারা ফুটবল ছাড়া আর কিস্যু চেনে না। শয়নে-স্বপনে-জাগরণে ফুটবলটাই যাদের একমাত্র নিষ্কৃতির উপায়। রিয়ো দে জেনেইরোর ‘ফাভেলা’র (পর্তুগিজ ভাষায় ‘বস্তি’) সরু গলিতে যে খুদে ফুটবল নিয়ে ড্রিবল করে, সে জানে ওই চর্মগোলকটি তাকে আগামী দিনে গোটা বিশ্বের নজরে এনে দিতে পারে। যেমন এনে দিয়েছিল পেলেকে। আনচেলোত্তির চ্যালেঞ্জ হল সেই সাম্বা ম্যাজিক ফেরানো, যা গোটা বিশ্ব প্রায় ভুলতে বসেছে।
ব্রাজিলের কাছে আর কোনও বিকল্প ছিল? মোহনবাগানকে আই লিগ জেতানো কোচ সঞ্জয় সেনের মতে, ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘আনচেলোত্তিকে কোচ করা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ব্রাজিলকে আগামী দিনে দিশা দেখানোর ক্ষমতা রয়েছে ওঁর। মানছি, ক্লাব এবং জাতীয় দলে কোচিং করানোর চ্যালেঞ্জ সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এই ব্রাজিল দলে এক জন ইউরোপীয় ঘরানার কোচই বদল আনতে পারবেন।” ময়দানের অভিজ্ঞ কোচ কৃষ্ণেন্দু রায়ের ভোট আনচেলোত্তির অভিজ্ঞতার দিকে, ‘‘মানছি আনচেলোত্তি প্রথম বার কোনও জাতীয় দলের কোচ হলেন। কিন্তু ওঁর যে অভিজ্ঞতা, সেটা ক’জনের আছে? অভিজ্ঞতা চাইছিল ব্রাজিল। সেই কাজে ওরা সফল।” তাঁর আরও বক্তব্য, “ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য আমরা অনেক সময়েই জাতীয় দলে ভারতীয় কোচ নিয়োগের দাবি করি। কিন্তু এক জন বিদেশি কোচ, বিশেষত ইউরোপীয় কোচের যে জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকে, তা অবজ্ঞা করার উপায় নেই। ব্রাজিল নিশ্চয়ই সব বিচার-বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
কোথায় ভুল করছিল ব্রাজিল?
গত দু’দশকে ফুটবল বিশ্বে ব্রাজিলের শাসন ক্রমশ কমেছে। ব্রাজিলীয় ফুটবলের অধঃপতনই হয়েছে। মাঝের এই সময়কালে দু’টি কোপা আমেরিকা জিতলেও একের পর এক বিশ্বকাপে হতাশ করেছে তারা। ২০০২ বিশ্বকাপের পর থেকে কোনও বড় ট্রফি জেতেনি। ব্রাজিল ফুটবল দলের সাম্প্রতিক ফলাফল দেখলে যে কোনও সমর্থকই অস্বস্তিতে পড়বেন। গত পাঁচটি বিশ্বকাপের মধ্যে তারা সেমিফাইনালে উঠেছে মাত্র একটিতে। তা-ও ২০১৪ সালে নিজের দেশের মাটিতে। সেই সেমিফাইনালের ফলাফল গোটা ফুটবলবিশ্ব জানে। জার্মানির কাছে ১-৭ গোলে ধ্বস্ত হওয়া ব্রাজিলীয়দের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে থেকে গিয়েছে। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে ওই ফলাফল একটা ‘কালো অধ্যায়’ হিসাবেই বরাবর থেকে যাবে।

জার্মানির কাছে ব্রাজিলের বিধ্বস্ত হওয়ার সেই ম্যাচ। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ফিফার নতুন নিয়মে পরের বিশ্বকাপের মূল পর্বে যেতে হয়তো সমস্যা হবে না ব্রাজিলের। তবে যোগ্যতা অর্জন পর্বে এত অপমানের মুখে তারা শেষ কবে পড়েছে, তা অনেকেরই মনে পড়ে না। আর্জেন্টিনার কাছে শেষ ম্যাচে ১-৪ গোলে হারতে হয়েছে। তার পরেই ছাঁটাই হন কোচ দোরিভাল জুনিয়র। তখনই ‘প্রোজেক্ট আনচেলোত্তি’র চূড়ান্ত পরিকল্পনা ছকে ফেলেন ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারা, যে চেষ্টা তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই করছিলেন। অবশেষে আনচেলোত্তির আগমন। তিনি কি পারবেন? বিবিসি-কে লাতিন আমেরিকার ফুটবল বিশেষজ্ঞ টিম ভিকেরি বলেছেন, “২০০২ সালের পর থেকে আমরা প্রতি বার কোনও না কোনও ইউরোপীয় দলের কাছে হেরেছি। এটা কাটাতেই হবে। এতদিনে এক ইউরোপীয় কোচ আনা হল। আমার মতে, ইউরোপীয় দলকে হারাতে হলে এমন কাউকে কোচ করতে হবে, যে ওদের ঠিকঠাক জানে। সেদিক থেকে আনচেলোত্তির চেয়ে ভাল বিকল্প এখন আমাদের কাছে নেই।” তাঁর আরও দাবি, “ব্রাজিলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা দোরিভালের কথা শুনত না। আনচেলোত্তির আমলে সেই সুযোগই পাবে না ওরা। সাজঘর শান্ত রাখতে ওর জুড়ি নেই।”
‘বার্লিন ওয়াল’ ভেঙে বিদেশি কোচ
ব্যর্থতা সত্ত্বেও এত দিন দেশীয় কোচ নিয়োগের রাস্তা থেকে সরে আসেনি ব্রাজিল। এই গোঁড়ামিকে তুলনা করা হত একদা দুর্ভেদ্য ‘বার্লিন ওয়াল’-এর সঙ্গে। সেই জায়গা থেকে সরে এসে ৬০ বছর পরে বিদেশি কোচ নিয়োগ করল তারা। ১৯২৫ সালে উরুগুয়ের রামন প্লাতেরো ব্রাজিলের প্রথম বিদেশি কোচ ছিলেন। চারটি ম্যাচ খেলান তিনি। ১৯৪৪-এ পর্তুগালের জোরেকা দু’টি ম্যাচ খেলান। ১৯৬৫-তে আর্জেন্টিনার ফিলপো নুনেজ় একটি ম্যাচে দায়িত্বে ছিলেন। তার পর থেকে যাঁরাই কোচ হয়েছেন তাঁরাই স্বদেশি। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০— এই পাঁচ বছরে ১২ বার ব্রাজিলের কোচ বদলায়। এক-দুই ম্যাচের বেশি কেউ টিকতে পারেননি। জিতলেও অজ্ঞাত কারণে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। ১৯৭০ বিশ্বকাপের আগে দায়িত্ব পান মারিয়ো জ়াগালো। দেশকে বিশ্বকাপ জেতান। চার বছর কোচ হিসাবে থেকেও যান।
তার পর থেকে অসভাল্দো ব্রান্দাও, ক্লদিয়ো কুটিনহো, তেলে সান্তানা, কার্লোস আলবার্তো পেরেরা, সেবাস্তিয়াও লাজারোনি, পাওলো রবার্তা, মানো মেনেজেস, টিটে, দোরিভাল জুনিয়র কোচ হয়েছেন। একাধিক বার দায়িত্ব পেয়েছেন জ়াগালো (১৯৯৪-১৯৯৮, ২০০২), লুইজ় ফিলিপ স্কোলারি (২০০১-২০০২, ২০১৩-২০১৪), আলবার্তো পেরেরা (১৯৯১-১৯৯৪, ২০০৩-২০০৬) এবং দুঙ্গা (২০০৬-২০১০, ২০১৪-২০১৬)।
ব্রাজিলের ফুটবলমহল এত দিন বিশ্বাস করে এসেছে, দেশের কোচ ছাড়া তাদের খেলার ধরন কেউ বুঝবেন না। সেই ধারণা ভেঙে দেন পর্তুগালের জর্জ জেসুস। তিনি ব্রাজিলের ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোর কোচ হয়ে আসেন ২০১৯ সালে। দলকে ঘরোয়া লিগ এবং লাতিন আমেরিকার সেরা ক্লাব করে তোলেন। ব্রাজিলের ফুটবল কর্তারা বুঝতে পারেন, দেশীয় কোচের ভাবনা আর চলবে না। ব্রাজিলের গৌরব ফেরাতে হলে বিদেশি, বিশেষত ইউরোপীয় ছাড়া ভরসা নেই। আনচেলোত্তি কোচ হতে রাজি না হলে জেসুসই কর্তাদের দ্বিতীয় পছন্দ ছিলেন।

জর্জ জেসুসকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ফ্ল্যামেঙ্গোর ফুটবলারদের। ছবি: সমাজমাধ্যম।
আসলে ব্রাজিলের জাতীয় দলে যাঁরাই কোচ হচ্ছিলেন, প্রায় সকলেই দেশের ঘরোয়া লিগের সফল কোচ। ব্রাজিলীয় ফুটবল বা লাতিন আমেরিকার ফুটবলের ঘাঁতঘোঁত সবই তাঁদের জানা। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলির সামনে পড়লেই তাঁদের কঙ্কালসার অবস্থা বেরিয়ে পড়ত। তার একটা বড় কারণ, ২০০০ সালের পর থেকে লাতিন আমেরিকার থেকে ইউরোপীয় ফুটবলের ধরন অনেক বদলে গিয়েছে। ব্রাজিলীয় কোচেরা কখনও তা বোঝার চেষ্টা করেননি।
কেন আনচেলোত্তি?
প্রথমত, আনচেলোত্তির সবচেয়ে বড় শক্তি, যে দল তাঁকে দেওয়া হবে তা নিয়ে খুশি থাকা। তাঁর ঠান্ডা মাথা, ফুটবলারদের পরিচালন করার ক্ষমতা বিশ্বের অনেক ক্লাবের সাজঘর শান্ত রেখেছে। চলতি মরসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে ট্রফি দিতে না পারলেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, করিম বেঞ্জেমা ক্লাব ছাড়ার পরে ভিনিসিয়াস, রদ্রিগোর মতো তরুণ তুর্কিদের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। জাতীয় দলে নতুন নতুন খেলোয়াড় কিনে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই আনচেলোত্তির কাছে সুযোগ রয়েছে সরাসরি কয়লাখনি থেকে হিরে তুলে আনার।
দ্বিতীয়ত, আনচেলোত্তির কৌশল এবং হার-না-মানা মানসিকতা। যা অতীতে তাঁকে বহু সাফল্য এনে দিয়েছে। সেই সুফল পেতে পারে ব্রাজিল, যারা বার বার চাপের মুখে ভেঙে পড়েছে। ব্রাজিলের ফুটবল বরাবর একটি দ্বন্দ্বে ভোগে— নিজেদের পরিচিত শৈল্পিক ফুটবলে ভরসা রাখবে? না কি জেতার জন্য দরকারি ফুটবল খেলবে? আনচেলোত্তি কায়দা করে দু’টি মিশিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি ফুটবলারদের নিজের মতো খেলার স্বাধীনতা দেন। গত কয়েক দশকে ব্রাজিলের ফুটবলারদের সহজাত খেলার প্রবণতা কমে গিয়েছে। ইউরোপীয় ক্লাবগুলিতে কোচেদের কৌশল মেনে খেলতে হয় বলে তাঁরা নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পান না। আনচেলোত্তি ব্রাজিলীয় ফুটবলের আসল ঘরানা ফিরিয়ে আনতে পারেন।
তৃতীয়ত, ব্রাজিলের ফুটবলারদের সঙ্গে তাঁর একাত্মতা। ব্রাজিলের জাতীয় দলের অনেকে রিয়ালে খেলেন। ফলে তাঁদের অনেকেরই খেলার ধরন আনচেলোত্তির চেনা। যেমন, ভিনিসিয়াসের বিরুদ্ধে বারংবার এই অভিযোগ উঠেছে যে, রিয়ালে তিনি যে ফর্ম দেখান, তা ব্রাজিলের হয়ে দেখাতে পারেন না। ৩৯টি ম্যাচে মাত্র ছ’টি গোলকে তার প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়। ভিনিসিয়াসের সমালোচকেরা বলেন, বিভিন্ন ধরনের কৌশলের সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিতে পারেন না। রিয়ালের প্রাক্তন কোচ আনচেলোত্তির সঙ্গে তাঁর সেই সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একই কথা প্রযোজ্য রদ্রিগো, রাফিনহা, কাসেমিরো, এদের মিলিতাওদের ক্ষেত্রেও। শুধু তাই নয়, নেমার সুস্থ হলে যদি তাঁকেও বুদ্ধি করে খেলাতে পারেন আনচেলোত্তি, তা হলে ব্রাজিলের ফুটবলে সুদিন ফেরার আশা করছেন সমর্থকেরা। কৃষ্ণেন্দু বলছেন, “ব্রাজিলের ফুটবলারেরা একটু আমোদপ্রবণ হয়। হইচই করতে ভালবাসে। আনচেলোত্তি যদি সেই সুযোগ না দেন তা হলে সমস্যায় পড়বেন। যে হেতু ব্রাজিলের অনেক ফুটবলারকে উনি আগে থেকেই চেনেন, তাই আমার মনে হয় না ফুটবলারদের সামলাতে ওঁর কোনও সমস্যা হবে।”

রিয়ালের কোচ থাকার সময় ভিনিসিয়াসের (বাঁ দিকে) সঙ্গে আনচেলোত্তি। ছবি: সমাজমাধ্যম।
চতুর্থত, আনচেলোত্তিকে বলা হয় ‘সিরিয়াল উইনার’। নিজে বড় ফুটবলার তো ছিলেনই। পাশাপাশিই কোচ হিসাবে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে সফল হয়েছেন। ইংল্যান্ড (চেলসি, এভার্টন), স্পেন (রিয়াল মাদ্রিদ), ইটালি (এসি মিলান, জুভেন্টাস, নাপোলি, পারমা), জার্মানি (বায়ার্ন মিউনিখ), ফ্রান্সের (প্যারিস সঁ জরমঁ) বড় ক্লাবগুলিকে কোচিং করিয়েছেন। ট্রফির নিরিখে আনচেলোত্তিকে পাল্লা দেওয়ার মতো কম কোচই রয়েছেন। ফুটবলারদের মধ্যে জেতার খিদে তৈরি করতে তাঁর থেকে ভাল সম্ভবত আর কেউ পারবেন না।
পঞ্চমত, কোচিং জীবনে এক মাত্র এভার্টন ছাড়া বাকি যে দলেই গিয়েছেন আনচেলোত্তি, তার সবগুলিতেই মহাতারকাদের ভিড় থেকেছে। রিয়ালে প্রথম দফায় সামলেছেন রোনাল্ডো, বেঞ্জেমা, কাকা, গ্যারেথ বেলদের। শেষের দিকে ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো, জুড বেলিংহ্যাম, কিলিয়ান এমবাপের মতো ফুটবলারদের। এসি মিলানে কোচিং করানোর সময় পাওলো মালদিনি, আন্দ্রে পিরলো এবং কাকাকে দিয়ে নিয়ন্ত্রিত অথচ দর্শনীয় ফুটবল খেলিয়েছেন। চেলসিতে সামলাতে হয়েছে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, জন টেরি, দিদিয়ের দ্রোগবাদের। কোনও দিন শোনা যায়নি আনচেলোত্তি থাকাকালীন সাজঘর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। কোনও ফুটবলারের ঘা়ড়ে দোষ চাপাননি বা সাজঘরে কাউকে বকাঝকা করেননি। ব্রাজিলেও বড় ফুটবলারের সংখ্যা কম নয়। কারও কারও মধ্যে ব্যক্তিগত দূরত্ব থাকলেও থাকতে পারে। তবে আনচেলোত্তি তাঁদের এক সুতোয় বাঁধতে পারবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সন্দেহ নেই, আনচেলোত্তির আগমন ব্রাজিলের ফুটবল দুনিয়ায় আলোড়ন তৈরি করেছে। ইটালীয় কোচ সফল হবেন কি না, সময় বলবে। কিন্তু বার্লিনের দেওয়াল ভেঙে ব্রাজিল যে ভবিষ্যৎমুখী হওয়ার সাহস দেখিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।