আলাদা আলাদা ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন দু’জনে। আলাদা আলাদা দেশে। কিন্তু শেষে মিলেমিশে সব এক হয়ে গেল। সাফল্যের কান্না মিলিয়ে দিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও কার্লোস আলকারাজ়কে।
প্যারিসে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর ইয়ানিক সিনারের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিশ্বের দু’নম্বর আলকারাজ়। প্রথম দুটো সেট হারেন আলকারাজ়। দেখে মনে হচ্ছিল, সিনারের সঙ্গে পেরে উঠবেন না তিনি। কিন্তু তৃতীয় সেট জিতে ম্যাচে ফেরেন আলকারাজ়। পরের সেটে একটা সময় তিনটে চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট ছিল সিনারের। সেখান থেকে ফিরে সেই সেটও জেতেন আলকারাজ়। পঞ্চম সেট জিতে রূপকথার লড়াই শেষ করেন তিনি। শেষ পয়েন্টটা পেতেই লাল সুরকির কোর্টে শুয়ে পড়েন আলকারাজ়। হাউহাউ করে কাঁদছিলেন তিনি। যে প্রত্যাবর্তন তাঁর হয়েছে তা ইতিহাসে এক-দু’বারই হয়। সেই কারণেই হয়তো আলকারাজের আবেগ অনেক বেশি ছিল। পরে গ্যালারিতে উঠে পরিবারের সঙ্গে উল্লাস করেন তিনি। কেরিয়ারে নিজের পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন ২২ বছরের আলকারাজ়।
প্যারিস থেকে ৮৪৩ কিলোমিটার দূরে জার্মানির মিউনিখে উয়েফা নেশনস লিগের ফাইনালে আলকারাজ়ের দেশ স্পেনের মুখোমুখি হয়েছিল রোনাল্ডোর পর্তুগাল। ২০১৬ সালে ইউরো কাপ জেতার পর দেশের হয়ে ট্রফি জিততে পারেননি রোনাল্ডো। একের পর এক প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়েছেন। বয়সও হয়েছে। ফলে চাপ ছিল তাঁর উপর। পাশাপাশি সামনে ইউরোজয়ী স্পেন। পিছিয়ে পড়েছিল পর্তুগাল। কিন্তু হাল ছাড়েনি। সেই রোনাল্ডোর পায়েই সমতা ফিরিয়েছে তারা। শেষে টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে নেশনস লিগ জিতেছে।
টাইব্রেকার পর্যন্ত মাঠে ছিলেন না রোনাল্ডো। ৮৭ মিনিট খেলেছেন তিনি। ৪০ বছর বয়স হয়েছে তাঁর। এই বয়সে দীর্ঘ ম্যাচ খেলা কঠিন। কিন্তু সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না সিআর৭। আলভারো মোরাতার শট পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়েগো কোস্তা বাঁচিয়ে দেওয়ার পর শিশুদের মতো লাফাতে শুরু করেন রোনাল্ডো। পঞ্চম শটে নেভিস গোল করতেই কেঁদে ফেলেন। প্রথমে এক সাপোর্ট স্টাফকে জড়িয়ে ধরেন। পরে দলের বাকিদের জড়িয়ে কাঁদছিলেন তিনি। কান্না থামছিল না রোনাল্ডোর। একের পর এক ব্যর্থতা সত্ত্বেও লড়াই থামাননি তিনি। অনেক সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। সেই কারণেই হয়তো নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না রোনাল্ডো।
আরও পড়ুন:
ম্যাচ শেষে রোনাল্ডো জানিয়েছেন, দেশের হয়ে ট্রফি জেতার আনন্দের কাছে বাকি সব তুচ্ছ। তিনি বলেন, “এই প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে পেরে গর্বিত। পর্তুগালের হয়ে ট্রফি জেতার থেকে বড় আমার কাছে আর কিছু নেই। আমি জীবনে ক্লাবের হয়ে অনেক ট্রফি জিতেছি। কিন্তু দেশের হয়ে ট্রফি জেতার ধারেকাছে সেগুলো নেই।” রোনাল্ডোর জয়ে অবশ্য দুঃখ পেয়েছেন আলকারাজ়। তিনি জিতলেও দেশ তো হেরেছে। ফরাসি ওপেন জিতে ভক্তদের সই দিচ্ছিলেন আলকারাজ়। তখনই এক জনকে ফলের কথা জিজ্ঞাসা করেন তিনি। জানতে পারেন যে পেনাল্টিতে স্পেন হেরে গিয়েছে। তা শুনে হতাশ হয়ে যান আলকারাজ়। সই করা বন্ধ করে দেন তিনি।
দুটো খেলা সম্পূর্ণ আলাদা। একটা খেলায় একক দক্ষতায় চ্যাম্পিয়ন হতে হয়। অন্য খেলায় চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে দলের সকলের অবদান লাগে। কিন্তু সাফল্যের স্বাদ এক। সেটা টেনিস হোক বা ফুটবল। রবিবার রাতে দুই খেলার দুই চ্যাম্পিয়নকে দেখলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। সাফল্যের পর একই ভাবে কাঁদলেন তাঁরা। কান্নায় মিলে গেলেন ৪০-এর রোনাল্ডো ও ২২-এর আলকারাজ়।