Advertisement
E-Paper

২২ বছর ১ মাস ৩ দিন! একই বয়সে পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় নাদাল-আলকারাজ়ের, নিয়তি মিলিয়ে দিল ‘গুরু-শিষ্য’কে

২২ বছর ১ মাস ৩ দিন বয়সে ইয়ানিক সিনারকে হারিয়ে ফরাসি ওপেন জিতেছেন কার্লোস আলকারাজ়। ২০০৮ সালে একই বয়সে নিজের পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন রাফায়েল নাদাল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৫ ১২:১৭
sports

২২ বছর ১ মাস ৩ দিনে উইম্বলডন জিতেছিলেন রাফায়েল নাদাল (বাঁ দিকে)। একই বয়সে ফরাসি ওপেন জিতলেন কার্লোস আলকারাজ়। —ফাইল চিত্র।

এ-ও সম্ভব! একেবারে এক বয়সে নিজেদের পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের নিরিখে মিলে গেলেন রাফায়েল নাদাল ও কার্লোস আলকারাজ়। রবিবার মধ্যরাতে ইয়ানিক সিনারকে হারিয়ে ফরাসি ওপেন জিতেছেন আলকারাজ়। ২২ বছর ১ মাস ৩ দিন বয়সে নিজের পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন তিনি। ২০০৮ সালে রজার ফেডেরারকে হারিয়ে উইম্বলডন জিতেছিলেন নাদাল। সেটা ছিল তাঁর পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। সেই সময় নাদালেরও বয়স ছিল ২২ বছর ১ মাস ৩ দিন।

আলকারাজ় ফরাসি ওপেন জেতার পর তাঁকে এই পরিসংখ্যান জানানো হয়। যে নাদালকে তিনি নিজের গুরু মনে করেন, তাঁর সঙ্গে একই দিন ভাগ করে নেওয়াকে নিয়তি বলেই মনে করেছেন তিনি। আলকারাজ় বলেন, “নাদাল ও আমার একই বয়সে পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় সত্যিই কাকতালীয়। একে আমি নিয়তি বলব। এটা হওয়ার ছিল।” আলকারাজ় জানিয়েছেন, তিনি কেরিয়ারের এই দিনটা কোনও দিন ভুলবেন না। স্প্যানিশ তারকা বলেন, “এই দিনটা আমার মনে চিরকাল থেকে যাবে। আমার আদর্শ, আমার অনুপ্রেরণার সঙ্গে এই নজির ভাগ করে নেওয়া আমার কাছে সম্মানের।”

ফরাসি ওপেন শুরু হওয়ার আগে নাদালকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল আয়োজকদের তরফে। তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া হয়েছিল। মোবাইলে সেই ছবি তুলে রেখেছিলেন আলকারা‌জ়‌। যাঁকে ‘দ্রোণাচার্য’ হিসাবে মানেন, সেই নাদালের ভূমিতে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের কাহিনি লিখলেন ‘একলব্য’ আলকারাজ়‌। জঙ্গলে লুকিয়ে দ্রোণাচার্যের প্রশিক্ষণ দেখতেন একলব্য। কখনও সরাসরি দ্রোণাচার্যের থেকে প্রশিক্ষণ নেননি। তেমনই আলকারাজ় নাদালের অ্যাকাডেমিতে টেনিস শিখলেও কখনও তাঁর থেকে সরাসরি টেনিস শেখেননি। রবিবার ফিলিপে শঁতিয়ে কোর্টে নাদাল হাজির ছিলেন না। তবে যেখানেই থাকুন, হয়তো চোখ রেখেছিলেন আলকারাজ়‌ের ম্যাচে। নিশ্চিত হবেন এই ভেবে যে, তাঁর উত্তরাধিকারী এসে গিয়েছে।

রবিবার ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে রূপকথার প্রত্যাবর্তন হয়েছে আলকারাজ়ের। প্রথম দুটো সেটে হেরেছিলেন তিনি। তৃতীয় সেটে তিনটে চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট ছিল সিনারের কাছে। সেখান থেকে ফেরেন আলকারাজ়। শেষ পর্যন্ত পাঁচ সেটের লড়াইয়ে (৪-৬, ৬-৭, ৬-৪, ৭-৬, ৭-৬) জেতেন। কী ভাবে এই অসাধ্যসাধন করলেন তিনি? জবাবে দর্শকদের কৃতিত্ব দিয়েছেন আলকারাজ়। তিনি বলেন, “ওঁদের সমর্থন ছাড়া ফিরতে পারতাম না। তৃতীয় সেটের শুরুতে সব কিছু সিনারের পক্ষে ছিল। কিন্তু আমি জানতাম ও সব ভাবলে হবে না। সব চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। খালি লড়াই করছিলাম। আমি জানি না ওই সময় আমি কী ভাবে একটার পর একটা পয়েন্ট জিতেছি। যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। শুধু লড়াই করে গিয়েছি। শেষ পর্যন্ত জিতেছি।”

এই নিয়ে পর পর দু’বার ফরাসি ওপেন জিতলেন আলকারাজ়। সবে শুরু করেছেন তিনি। নাদালের রেকর্ডের কাছে পৌঁছতে (১৪টা ফরাসি ওপেন রয়েছেন রাফার) এখনও অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হবে তাঁকে। তবে নাদাল ও আলকারাজ়ের খেলার ধরন লাল সুরকির কোর্টের জন্য উপযুক্ত। তাঁদের দু’জনের হাতেই টপ স্পিনের অস্ত্র রয়েছে। রবিবার খেলা যত গড়িয়েছে তা তত ধারালো হয়েছে। সেই কারণেই প্রথম দুই সেট জেতার পরেও হারতে হয়েছে সিনারকে। লাল সুরকিতে কোর্টের ব্যবহার নাদালের মতোই করেন আলকারাজ়। পাওয়ার টেনিসের পাশাপাশি ভলি, ড্রপ শটও কাজে লাগান তাঁরা। গুরুর পথেই এগিয়ে চলেছেন শিষ্য। একই বয়সে পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার নজির আলকারাজ়কে সেই পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগাচ্ছে।

রবিবারের ফাইনাল দেখতে ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে আলকারাজ়ের পরিবার থাকলেও ছিলেন না সিনারের পিতা। পুত্রের খেলা দেখতে কেন যাননি তিনি? সিনার জানিয়েছেন, তাঁর পিতা জোহান পেশায় একটা রেস্তরাঁর রাঁধুনি। তিনি কাজে গিয়েছিলেন। তাই ফাইনালে থাকতে পারেননি। ম্যাচ শেষে সাংবাদিক বৈঠকে সিনার বলেন, “পরিবার ও বন্ধুরা আমার হারের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেবে। এ বার বাড়ি ফিরব। জানি, সকলের সঙ্গে থাকলে মন ভাল হয়ে যাবে। আমার পরিবার খুব সাধারণ। আমার বাবা এখনও কাজ করে। সেই কারণেই এখানে থাকতে পারেনি। আমার সাফল্যের পরেও আমরা সাধারণ ভাবেই থাকি।” গ্যালারিতে ছিলেন সিনারের মা। জোহান টেলিভিশনে পুত্রের খেলা দেখেছেন কি না তা জানেন না সিনার। তিনি বলেন, “মাকে দেখে ভাল লাগছে। আশা করছি, বাবা কাজ শেষ করে টেলিভিশনে খেলা দেখেছে। ওটাই যথেষ্ট।”

জয়ের মুখ থেকে হেরে যাওয়ায় দুঃখ হয়েছে সিনারের। কিন্তু তার জন্য তিনি সারা দিন কান্নাকাটি করবেন না বলেই জানিয়েছেন বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা। সিনার বলেন, “আমি কেরিয়ারের শুরুতে কোনও দিন ভাবিনি এই জায়গায় পৌঁছাতে পারব। স্বপ্নও দেখতাম না। কিন্তু এখন এটা বাস্তব। ফরাসি ওপেনের ইতিহাসের দীর্ঘতম ম্যাচ খেলেছি। তা-ও ফাইনালে। হ্যাঁ, হারলে দুঃখ হবেই। কিন্তু তার জন্য সারা দিন ধরে কান্নাকাটি করব না। এ রকম হতেই পারে।”

রোলঁ গারোজের ইতিহাসে দীর্ঘতম ফাইনাল খেলা দুই খেলোয়াড়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রজার ফেডেরার। তিনি নিজের ইনস্টাগ্রামে আলকারাজ় ও সিনার দু’জনের সঙ্গেই তাঁর ছবি ভাগ করে নিয়েছেন। ক্যাপশনে ফেডেরার লিখেছেন, “প্যারিসে তিন বিজয়ী। কার্লোস আলকারাজ়, ইয়ানিক সিনার ও টেনিসের মতো সুন্দর একটা খেলা। কী দুর্দান্ত ম্যাচ!” ফাইনালের সাক্ষী ছিলেন আর এক কিংবদন্তি আন্দ্রে আগাসি। দু’জনের শট দেখে মাঝেমাঝে মাথায় হাত দিচ্ছিলেন তিনি। বোঝা যাচ্ছিল, অবাক হয়ে যাচ্ছেন আগাসি। এ বার ফেডেরারের কাছ থেকেও শুভেচ্ছাবার্তা পেলেন দুই ফাইনালিস্ট।

Rafael Nadal Carlos Alcaraz
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy