পাকিস্তানের প্রাক্তন খেলোয়াড়রা এখন ভারতকে দেখেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। —ফাইল চিত্র
দীর্ঘ ৪১ বছর পরে অলিম্পিক্স থেকে পদকের আশায় ভারতীয় হকি দল। এ বারের খেলা নজর কেড়েছে সবার। প্রশংসিত হয়েছে সর্বত্র। এমনকী, এক সময়ের চিরশত্রু এবং এখন অস্তাচলে যাওয়া পাকিস্তানের হকিও অনুপ্রেরণা পাচ্ছে ভারতের থেকে। আর এটাই বোধ হয় ভারতীয় হকির সাফল্যের সবথেকে বড় তাৎপর্য।
পাকিস্তানের প্রাক্তন খেলোয়াড়রা এখন ভারতকে দেখেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। টানা দুটি অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার জ্বালা ভারতকে জড়িয়ে ধরেই মেটাতে চাইছেন তাঁরা।
১৯৮৪ সালের অলিম্পিক্সে পাকিস্তানের সোনাজয়ী দলের সেন্টার ফরোয়ার্ড হাসান সর্দার জানান, ভারত ভাল খেলতে শুরু করার পরেই তিনি এ বার অলিম্পিক্সে হকি দেখছেন। বলেন, ‘‘ভারতীয় হকির যে পরিকাঠামো, এটা তার সাফল্য। পুরোটাই টাকার ব্যাপার। আমরা যদি হকিতে বিনিয়োগ না করি, খেলোয়াড়দের যত্ন না নিই, তা হলে প্রতিভা খুঁজে পাব কী করে? এখন পাকিস্তানে সবাই ক্রিকেটে ঝুঁকছে। জানে, ক্রিকেটে একবার ঢুকে পড়তে পারলে ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আগে এটা হকিতে ছিল। এখন আর নেই।’’
ভারতীয় হকির সাফল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াও আরও একটি বিষয় তুলে ধরেছেন সর্দার। বলেন, ‘‘এখন হকিতে আসল হল শারীরিক সক্ষমতা। এই ভারতীয় দলকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা শারীরিক সক্ষমতার তুঙ্গে। ভারতের খেলায় আধুনিক হকির সঙ্গে মিশে রয়েছে এশীয় হকির পুরনো কিছু ছোঁয়া।’’
পাকিস্তান হকি ফেডারেশনের সচিব আসিফ বাজোয়া বলেন, ‘‘অলিম্পিক্স হকির সেমিফাইনালে ওঠা বিরাট ব্যাপার। এট আমাদের হকির পুনরুত্থানে সাহায্য করবে। কারণ আমাদের দেশের মানুষ ভারতের দেখাদেখি দাবি তুলবেন, পাকিস্তানের হকিও যেন আবার আগের জায়গায় ফেরে।’’
১৯৯২ অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী এবং ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের সদস্য বাজোয়াও ভারতীয় হকির পরিকাঠামো বদলের কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভারতের হকি ফেডারেশনের পকেটে ১০০০ কোটি টাকার ওপর রয়েছে। তাছাড়া সরকার সাহায্য করে। আজকের দিনে হকিতে এগোতে চাইলে অনেক টাকার দরকার।’’
পাকিস্তানের হকি পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়াকেও দায়ি করছেন বাজোয়া। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের প্রথম পাঁচটা দেশের মধ্যে থাকতে গেলে বছরে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে। ভারত তার থেকে বেশি ম্যাচ খেলছে।’’
দৌড়ের জন্য ‘ফ্লাইং হর্স’ নামে পরিচিত সামিউল্লা খান ভারতের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। বলেন, ‘‘১৯৮৪ সাল পর্যন্ত হকিতে শুধু ভারত আর পাকিস্তান ছিল। তারপর ইওরোপের দেশগুলো আধিপত্য দেখাতে শুরু করে। এখন দেখে ভাল লাগছে ভারত আবার পদকের দৌড়ে রয়েছে।’’
পাকিস্তানের এই প্রাক্তন অধিনায়ক এবং কোচও মনে করছেন ভারতের সাফল্য পাকিস্তানের হকিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ‘‘খারাপ প্রশাসনের জন্য আজ পাকিস্তানের হকির এই হাল। পরিকাঠামো উন্নতির দিকে বছরের পর বছর কোনও নজরই দেওয়া হয়নি। এখনও যদি নজর দেওয়া হয়, টাকা ঢালা হয়, আমরা উন্নতি করতে পারব। পাকিস্তানের রক্তে হকি আছে। ভারত তো খেলোয়াড়দের মোটা টাকা দিচ্ছে। তাদের খেয়াল রাখছে। ভারতে হকির দল নির্বাচন, প্রশাসন সবটাই খুব স্বচ্ছ। পাকিস্তানে এটা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy