Advertisement
০৭ মে ২০২৪

স্বপ্নভঙ্গের ছবি বাগানে

পাহাড় থেকে সমতল— নব্বই মিনিটের তীব্র উত্তেজনা আর টানাপোড়েনে এ যেন রবিবাসরীয় রাতে ফুটবলের এক সোপ অপেরা! ভারতীয় ফুটবলের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে পাহাড়ে যখন নতুন ইতিহাস তৈরি করল আইজল, তখন সরোবর জুড়ে শুধুই হতাশা আর আফশোস।

আহত: চোট ডাফির। সঙ্গে ট্রফি হারানোর যন্ত্রণা। নিজস্ব চিত্র

আহত: চোট ডাফির। সঙ্গে ট্রফি হারানোর যন্ত্রণা। নিজস্ব চিত্র

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

পাহাড় থেকে সমতল— নব্বই মিনিটের তীব্র উত্তেজনা আর টানাপোড়েনে এ যেন রবিবাসরীয় রাতে ফুটবলের এক সোপ অপেরা!

ভারতীয় ফুটবলের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে পাহাড়ে যখন নতুন ইতিহাস তৈরি করল আইজল, তখন সরোবর জুড়ে শুধুই হতাশা আর আফশোস। হল না, এ বারও হল না। তীরে এসে তরী ডোবার মতোই রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল সঞ্জয় সেনের দলকে। ম্যাচের পর সবুজ আবির পকেটে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় শুয়ে পড়ছেন কেউ। কেউ আবার মাথায় হাত দিয়ে হতাশায় ডুবে ধরেছেন বাড়ির পথ।

ম্যাচ শেষে আইজল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শুনে সবার আগে ড্রেসিংরুমে চলে গেলেন মোহনবাগান কোচ। সেরার পুরষ্কার পেয়েও তেতো মুখে সনি নর্দে ফিরছিলেন শ্লথ পায়ে। তাঁর পিছনে শোকযাত্রার মতো পুরো টিম।

কিন্তু কেন এই ব্যর্থতা? সঞ্জয় সেন উত্তর দিতে সময় নিলেন না। ‘‘আমার কোচিংয়ে সবথেকে এ বারই খারাপ খেলেছে মোহনবাগান। আইজল আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচ জিতেছে। আমরা পারিনি। ম্যাচের পর খবরটা শুনে হতাশ হয়েছি ঠিক। কিন্তু মানছি যোগ্য দল হিসাবে আইজল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ড্রেসিংরুমে বলে এলাম ব্যর্থতার দায় আমারই।’’

সামনে ফেড কাপ। তার আগে আজ, সোমবার ভোরেই মলদ্বীপ উড়ে যাচ্ছে মোহনবাগান। এ এফ সি কাপের ম্যাচ খেলতে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যে প্রায় আধ ঘণ্টা পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি মোহনবাগান কোচ। সনি নর্দে আরও পরিষ্কার করে দিলেন টিমের ব্যর্থতার কারণ। ‘‘বাইরের ম্যাচে আমরা অনেক পয়েন্ট নষ্ট করেছি। দু’টো মুম্বই আর শিলং ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করাই আমাদের অনেক পিছিয়ে দিয়েছে।’’ আই লিগ জিতবেন বলে গোয়া ছেড়ে সবুজ-মেরুনে এসেছিলেন ড্যারেল ডাফি। বলছিলেন, ‘‘মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে ট্রফি হাতছাড়া হল। আফশোস হচ্ছে লিগটা পেলাম না বলে।’’ শিলংয়ে যখন খালিদ জামিলের দল শুরুতেই গোলটা খেল তখন রবীন্দ্র সরোবর উচ্ছ্বাসে ভাসল। আবার লিগ টেবিলের নিচের দিকে থাকা দুর্বল চেন্নাইয়ের স্ট্রাইকার নন্দকুমার যখন মোহনবাগানের জালে বল জড়িয়ে দিলেন, তখন মাঠ জুড়ে শুধুই স্বব্ধতা। কাতসুমি ইউসার গোলের পর ফের গ্যালারি উত্তাল। শিলংয়ে আবার আইজল ম্যাচে সমতায় ফেরার পর হতাশায় ডুবলেন সবুজ মেরুন জনতা। ড্যারেল ডাফির গোলে ম্যাচ জিতেও হতাশাই স্থায়ী হয়ে গেল এ বারের মতো। সরোবরের গ্যালারিতে একই সঙ্গে দু’টো ম্যাচ দেখা চলছিল এ দিন। মোবাইলের স্ক্রিনে লাইভ আইজল-শিলং ম্যাচ। আর চোখের সামনে সনি-ডাফি বনাম চেন্নাই ‘যুদ্ধ’। হাজার ছয়েক দর্শক এসেছিলেন মাঠে। তাদের কয়েক জনের হাতে ছিল হ্যান্ডমাইক। তাতে ‘লাইভ শিলং’ ধারাভাষ্যও হচ্ছিল।

মোহনবাগান যে কতটা চাপে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছিল শুরু থেকেই। আইজল পিছিয়ে পড়েছে এটা মাইকে ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচ কমিশনার মাইকেল অ্যান্ড্রুজের দিকে তেড়ে যেতে দেখা গেল পুরো মোহনবাগান বেঞ্চ-কে। কিন্তু উত্তেজক ম্যাচের যে আরও বাকি ছিল! বক্সের বাইরে বল ধরে লালকার্ড দেখলেন মোহনবাগান গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার। শেষের দিকে মোহনবাগান দশ জনে খেলল। সার সত্যটা বলে গেলেন সঞ্জয় নিজেই। ‘‘চ্যাম্পিয়ন না হলে আমাদের দেশে কোনও কিছুরই দাম নেই।’’

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, প্রীতম কোটাল, এদুয়ার্দো পেরিরা, আনাস এডাথোডিকা, রাজু গায়েকোয়াড়, রেইনার ফার্নান্ডেজ (শৌভিক চক্রবর্তী), কাতসুমি ইউসা, শেহনাজ সিংহ (জেজে লালপেখলুয়া), সনি নর্দে, ড্যারেল ডাফি, বলবন্ত সিংহ (শিবিনরাজ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE