Advertisement
E-Paper

টাইগারের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতে চান গগনজিৎ

শীতের সন্ধ্যা নামার আগে আধো আঁধারিতে প্রায় ফাঁকা হয়ে আসা রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব। পোর্টিকোয় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘লিখে নিন, পরের বছর আই উইল বি ব্যাক।’’ বলার সময় অদ্ভুত উজ্জ্বল ছিল চোখ দু’টো।

মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫২
আরসিজিসিতে গগনজিৎ। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

আরসিজিসিতে গগনজিৎ। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

শীতের সন্ধ্যা নামার আগে আধো আঁধারিতে প্রায় ফাঁকা হয়ে আসা রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব। পোর্টিকোয় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘লিখে নিন, পরের বছর আই উইল বি ব্যাক।’’ বলার সময় অদ্ভুত উজ্জ্বল ছিল চোখ দু’টো। সময়টা এক বছর আগে। ম্যাকলিয়ড রাসেল গল্ফে তৃতীয় রাউন্ড শেষ হওয়ার কিছু পরে।

সে দিকে ফিরে তাকিয়ে এ দিন সন্তুষ্ট হাসি গগনজিৎ ভুল্লাড়ের মুখে। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা পূরণের তৃপ্তি সেই হাসিতে।

চলতি মরসুমে এশিয়া সেরাদের তালিকায় তিনি নবম। কোরিয়া আর ইন্দোনেশিয়া ওপেন জিতে ২০১৩-র পরে আবার ফিরেছেন বিজয় মঞ্চে। আবার আলো তাঁকে ঘিরে। এক সময় বিশ্বের ৮৫ নম্বরের র‌্যাঙ্কিং সাড়ে আটশোয় নেমেছিল গত বছর। এ বছর এশিয়া ট্যুরে পুরস্কারমূল্যে আড়াই কোটি টাকারও বেশি জিতে ১৭২-এ উঠেছেন।

কব্জির চোট, অস্ত্রোপচার আর অফ ফর্মের অন্ধকার দিনগুলো এখন বহু পিছনে। ছ’ফুটের ঋজু কাঠামোর গল্ফার অবশ্য আগের মতোই বিনয়ী, একাগ্র। পরিবর্তন বলতে অনেকটা রোগা হয়েছেন। চুলে লেগেছে রুপোলি আভাস। ‘‘২০১৪, ২০১৫ বছর দু’টো দুর্বিসহ কেটেছিল। এক দিকে চোট। অন্য দিকে টানা সমালোচনার মুখে মন শক্ত রাখার লড়াই,’’ বলছিলেন গগনজিৎ। যাঁর উপলব্ধি, ‘‘জিততে না পারলে মিডিয়া খুব নির্দয়। বারবার শুনেছি, আমি ফুরিয়ে গিয়েছি। পাঁচটা আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছিলাম বলেই হয়তো আমার কাছে প্রত্যাশাও ছিল বেশি।’’

প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার যন্ত্রণাও কি বেশি ছিল? গগনজিৎ বললেন, ‘‘আমি পারছি না, এই চিন্তাকে প্রশ্রয় দিইনি। সবচেয়ে বেশি তাগিদ ছিল নিজের কাছে প্রমাণ করার যে, আমি আবার জিতব।’’ জীবনের এই কঠিন সময়ে বাবা-মা বাদে তাঁর শক্তি হয়ে উঠেছিলেন আরও এক জন। গগনজিতের ক্যাডি টিম কক্স। ‘‘জানেন, ও তখন কাজের অনেক অফার পেয়েও নেয়নি। বলেছিল, ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। তুমি আবার খেলবে, জিতবে। আমি পারবোই, এই বিশ্বাসটা ধরে রাখতে বিরাট ভূমিকা ছিল টিমের,’’ কৃতজ্ঞ গগনজিৎ।

তিনি যে সময় চোটের সঙ্গে লড়ছেন, তখনই আসাধারণ উত্থান অনির্বাণ লাহিড়ীর। যাঁর চেয়ে একটা সময় গগনজিৎ ছিলেন এগিয়ে। অনির্বাণের সাফল্য দেখে খারাপ লাগেনি? উত্তরে মিষ্টি হাসি। ‘‘প্রশ্নটা আগেও শুনতে হয়েছে। সত্যি বলছি, অনির্বাণের জন্য শুধু গর্ব হয়েছিল। আমি বাস্তববাদী। জানতাম ওই সময় চোটের কারণে সেরা পরিশ্রমটা গল্ফকে দিতে পারছি না। আমার লক্ষ্য ছিল শুধু টুর্নামেন্ট খেলা। জেতা নিয়ে তখন ভাবতাম না।’’

গল্ফের বাইরে জীবনের কথা উঠলে বেশ বিহ্বল আঠাশের তরুণ। ‘‘কী বলি! গল্ফই সব। ব্যক্তিগত জীবনও ওটাই।’’ নিজেকে বললেন ‘ডায়েট ফ্রিক।’ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ক্যালরির নানা হিসাবনিকাশ নিয়ে বই, ওয়েবসাইট সব নখদর্পণে। পড়েন তার বাইরেও। পছন্দের লেখক চেতন ভগত, রবি সুব্রহ্মণ্যম। সিনেমার সঙ্গে বনিবনা নেই। তবে সিরিয়াল দেখা চলছে। সদ্য শেষ করেছেন ‘ওয়াকিং ডেড’, এখন দেখছেন ‘ব্রেকিং ব্যাড’। সব ওয়েবে। ‘‘রোজ একটা করে এপিসোড দেখছি।’’ নতুন বছরে যাঁর প্রথম লক্ষ্য ইউরোপীয় ট্যুরে পুরো কার্ড ফিরে পাওয়া।

দিনে ছ’-সাত ঘণ্টা প্র্যাকটিস চলছে তার জন্য। সেরা প্রস্তুতি নিতে কপুরথালা থেকে ঘাঁটি সরিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোয়। কলকাতায় খেলে রবিবার সেখানেই ফিরবেন। বলছিলেন, ‘‘ইউরোপ ট্যুরে পুরো কার্ড আর ওয়েব ডট কম সিরিজে কোয়ালিফাই করা সামনে রেখে এগোচ্ছি।’’

আরও দু’টো চাওয়া আছে তাঁর। প্রথম, আগামী দিনে সুস্থ আর চোটমুক্ত থাকা। দ্বিতীয়, একটা প্র্যাকটিস রাউন্ড ‘বাঘ’-এর সঙ্গে খেলা!

‘‘আমেরিকায় পুরো অফ সিজন কাটাব। টাইগার উডসের সঙ্গে একটা প্র্যাকটিস রাউন্ড খেলতে পারলে ধন্য লাগবে। ওঁকে নিয়ে যে যা-ই বলুক, টাইগার উডসকে দরকার গল্ফের। একার ক্যারিসমায় গোটা বিশ্বে খেলাটার চেহারা পাল্টে দেওয়া কিংবদন্তি!’’

এই প্রথম উত্তেজিত দেখাল শান্ত ছেলেকে। পিছিয়ে পড়েও হাতে ট্রফি তোলাটা যাঁর ট্রেডমার্ক।

Gaganjeet Bhullar Tiger Woods
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy