যখন স্কুলে পড়তাম, আমার একটা টি-শার্ট ছিল। সেটায় লেখা ছিল— আমার বাবা প্রিন্সিপ্যাল... অ্যামাউন্ট চেনেন। বুঝতেই পারছেন টি-শার্টের ডিজাইনার ‘অ্যামাউন্ট’ শব্দটা খুব ছোট হরফে লিখেছিল। আসল ব্যাপারটা ছিল সবাইকে বোঝানো যে, আমার বাবা স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে চেনেন।
বলে রাখা ভাল, আমার বাবা কিন্তু প্রিন্সিপ্যালকে চিনতেন না। হালকা নীল রঙের মজার প্রিন্টের টি-শার্টটা আমার এমনিই পছন্দ ছিল। আর ওই টি-শার্টটা আমার একটা অভ্যেস তৈরি করে দিয়েছিল। কোন টি-শার্টে কী লেখা আছে, সেটা খেয়াল করার অভ্যেস। মনে আছে ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনাল টস করতে আসার সময় ইমরান খান যে টি-শার্টটা পরেছিলেন, তাতে একটা বাঘের ছবি ছিল। আমার এমনিতে সূক্ষ্ম ব্যাপার ভাল লাগে। কিন্তু এক-এক সময় মনের কথাটা এ ভাবেই বুকে লিখে রাখতে হয়।
হালফিলে আর একটা টি-শার্টের লেখা দেখে বেশ মজা পেয়েছি। এই কলকাতা নাইট রাইডার্সেই আমার এক সতীর্থের টি-শার্ট। ‘দামিনি’ ছবিতে সানি দেওলের বিখ্যাত একটা সংলাপ নিয়ে মজা করা। যে সংলাপে সানি দেওল দেশের স্লথ বিচারব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। টি-শার্টে লেখা আছে ‘তারিখ পে তারিখ’। দেখে মনে পড়ে গেল, এই সে দিনই আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কথায় বিরল আবেগ ঝরে পড়েছিল। যখন উনি দুঃখ করছিলেন, আমাদের দেশে যথেষ্ট সংখ্যক বিচারপতি নেই। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম বটে, কিন্তু তার পর মনে হল ওটা নিয়ে কলামে না লেখাই ভাল। কারণ এই ব্যাপারটা আমি খুব ভাল করে জানি না।
তার চেয়ে ভাবছি, আমাকে যদি কেউ বলে যে, আমি টস করার সময় নিজের পছন্দের টি-শার্ট পরে নামতে পারব, তা হলে কোন টি-শার্ট বাছব? কেকেআর সতীর্থদেরও আমি জিজ্ঞেস করলাম। টি-শার্টে কী লেখা থাকবে? ‘অব কি বার কেকেআর’? উক্তিটা ভাল, কিন্তু দারুণ কিছু নয়। আর এক সতীর্থ জঘন্য একটা প্রস্তাব দিল। ‘শোলে’-র গব্বর সিংহের বিখ্যাত ডায়লগের মতো আমার টি-শার্টে লেখা থাকবে, ‘ইয়ে ট্রফি মুঝে দে দে ঠাকুর’।
প্রস্তাবটা কার, সেটা আর বলছি না। বললে আপনারা হয়তো তার প্রতি সম্মান হারাবেন। তার চেয়ে খুব সহজ একটা জিনিস করা যায়। বড় বড় হরফে শুধু একটাই শব্দ লেখা যায়— বিলিভ। আমার কাছে একজন ক্রীড়াবিদের এটাই ব্যাখ্যা। বিশ্বাস থাকলে পাহাড়ও সরিয়ে দেওয়া যায়। আর আইপিএলের চূড়ান্ত পর্বে এসে কেকেআরের এই বিশ্বাসটাই দরকার।
আঁচ পাচ্ছি, আমাদের ড্রেসিংরুমে প্রচুর বিশ্বাস রয়েছে। টিমের কোচ হিসেবে জাক কালিসকে পাওয়াটা আমার সৌভাগ্য। প্লেয়ার হিসেবে ও খুব কম কথা বলত। কিন্তু কোচিংয়ের দায়িত্ব পেয়ে একদম পাল্টে গিয়েছে। এখন ও সব সময় প্রস্তুত, নিজের ভাবনাচিন্তা শেয়ার করতে সব সময় এগিয়ে আসছে। ‘জেকে’ ব্যাটিংয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া। এই সে দিনই তো শুনছিলাম ও বলছিল, ব্যাটিংয়ের জন্য কী রকম ভারসাম্য, ওজন আর ধৈর্য দরকার। শুনতে শুনতে মোহিত হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার বয়সেও ওর কাছ থেকে অনেক শেখার আছে। তবে আশা করব আমার তরুণ ভারতীয় সতীর্থরা কালিসের উপস্থিতি থেকে আরও লাভবান হবে।
ইডেন গার্ডেন্সে দু’দিন দারুণ প্র্যাকটিস করলাম। আজ, শনিবার আমাদের প্রতিপক্ষ পুণে বেশ ভাল দল। ওরা যে পরিস্থিতিতে আছে, তাতে বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওদের হারানোর বিশেষ কিছু নেই। তাই ওরা ভয়ডর ছাড়া খেলতে পারবে। সতর্কতা ভুলে খেলতে নামা পুণে আমাদের মতো টিমের কাছে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের কেকেআর গ্রুপে এটা নিয়ে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে। সবাই এটা মাথায় রাখছে।
ও হ্যাঁ, রজনীকান্ত নিয়ে একটা টি-শার্টের কথা মনে পড়ে গেল। সেটায় লেখা ছিল— রজনী ঘড়ি পরেন না। কখন ক’টা বাজছে, সেটা উনিই ঠিক করে দেন। আশা করছি রজনী স্যর ঠিক করে ফেলেছেন, কেকেআরের সময়টা এখন ভাল যাবে।
(দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy