Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আজ সামনে পাকিস্তানের সিংহ

ট্রফি জিতেই নতুন ট্রফির শপথ নিয়েছিলেন গম্ভীর

ঝিরঝিরে থেকে অঝোরে, নিজাম-নগরীর আকাশের ইচ্ছেমতো মন পরিবর্তনেও এখন বিশেষ কাজ হচ্ছে না। নেট থামিয়ে বাকি টিম দৌড়োচ্ছে ড্রেসিংরুমের দিকে। তেড়ে বৃষ্টি। কিন্তু সাড়ে পাঁচ ফুটের চেহারার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। বেচারা বিজয় দাহিয়া! টিমের সহকারী কোচ। ব্যাটসম্যানকে ‘থ্রো-ডাউন’ও দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু ব্যাটসম্যানের অটুট অধ্যবসায়ের চোটে যে তাঁকেও ভিজতে হবে, আন্দাজ পাননি বোধহয়।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

ঝিরঝিরে থেকে অঝোরে, নিজাম-নগরীর আকাশের ইচ্ছেমতো মন পরিবর্তনেও এখন বিশেষ কাজ হচ্ছে না।

নেট থামিয়ে বাকি টিম দৌড়োচ্ছে ড্রেসিংরুমের দিকে। তেড়ে বৃষ্টি। কিন্তু সাড়ে পাঁচ ফুটের চেহারার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। বেচারা বিজয় দাহিয়া! টিমের সহকারী কোচ। ব্যাটসম্যানকে ‘থ্রো-ডাউন’ও দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু ব্যাটসম্যানের অটুট অধ্যবসায়ের চোটে যে তাঁকেও ভিজতে হবে, আন্দাজ পাননি বোধহয়।

গৌতম গম্ভীর কিছুতেই তো নড়লেন না!

‘টু মোর’-কে বাড়িয়ে ‘ফোর মোর’ করতে-করতে এক সময় বলা থামিয়ে দিলেন কোচ ট্রেভর বেলিস। একটা নেট মোটামুটি ছেড়ে দিতে হল কেকেআর ক্যাপ্টেনকে। বাকিগুলোয় বাকিরা। মাঝেমধ্যে বড়জোর পাঁচ মিনিটের ব্রেক, একটু জল, তার পর আবার।

গৌতম গম্ভীরকে দেখে মনে হবে ম্যাচটা রবিবার নয়, আজ। মাঠে নয়, নেটে শুরু হয়ে গিয়েছে!

সাধারণের দর্শনে সত্যিই আশ্চর্যের। রবিবাসরীয় হায়দরাবাদে গম্ভীর কোনও বিশ্বকাপ-যুদ্ধে নামছেন না। ম্যাচটা আইপিএল ফাইনালও না। বরাবরের জৌলুসহীন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির গ্রুপ লিগ ম্যাচ। আকর্ষণের বিষয়বস্তু বলতে শুধু প্রতিপক্ষ। যারা পাকিস্তানের ঘরোয়া লিগের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি টিম। গম্ভীরের টিম যা ভারতের। বাইশ গজে দু’দেশের দেখা হলে যে হাইভোল্টেজ শিরশিরানি বরাদ্দ থাকে, অতটা মোটেও নেই। শুধু ‘ভারত বনাম পাকিস্তান’ উড়ো গন্ধটা মাঝেমধ্যে যা ভেসে আসছে।

তা হলে এত কঠোর পরিশ্রম?

খুব সহজ। ভারত বনাম পাকিস্তানে যেমন সম্প্রীতির মেজাজ ধরে রাখার শত চেষ্টাতেও সব সময় ধরে রাখা যায় না, তেমনই সাধারণের সঙ্গে পারফর্মারের দর্শনও সব সময় মেলে না।

কেউ বিশ্বাস করবে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার শপথ আজ নয়, আইপিএল সেভেন জেতার পর নিয়ে ফেলেছিলেন গম্ভীর?

কেউ বিশ্বাস করবে, গত কয়েক মাসে চলতি টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির রগড়ানির চোটে মাত্র একটা সিনেমা দেখার সময় বার করতে পেরেছেন কেকেআর ক্যাপ্টেন?

শনিবার নয়াদিল্লিতে গম্ভীরের ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ করে যে আশ্চর্য টুকরো-টাকরাগুলো পাওয়া গেল। শোনা গেল, ক্রিকেটার গম্ভীরের এখন ‘মিশন’ দু’টো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি আর ক্যাপ্টেন হিসেবে রঞ্জি ট্রফি এই দু’টো জেতা। নাইট অধিনায়ক নাকি আইপিএল সেভেন জয়ের পর ঘনিষ্ঠ কাউকে কাউকে বলে ফেলেছিলেন, আইপিএল দু’বার হল। এ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আইপিএল-শিখর দু’বার ছুঁলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে টিমকে প্রত্যেক বারই ছ্যাকড়া গাড়ি দেখিয়েছে। অতএব, এ বার ওটা। কেউ কেউ তাঁকে বলতে গিয়েছিলেন যে, সবে এটা জুন মাস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এখনও আড়াই মাস বাকি। পরে ভেবো। বলতে গিয়ে উল্টে তাঁরা মৃদু ধমক খেয়েছেন। গম্ভীর নাকি তৎক্ষণাৎ বলে দিয়েছেন, ক্রিকেটারের জীবনে বিশ্রাম বলে কিছু নেই। একটা লক্ষ্যপূরণ হলে, পরের লক্ষ্যই মোক্ষ হওয়া উচিত।

আর ফাঁকা আওয়াজ যে সেটা ছিল না, পরের আড়াই মাস সেটা বুঝিয়েছে। আইপিএলে তাঁর ফর্ম ভাল ছিল না। ইংল্যান্ড সফরে দু’টো টেস্টে ডাক পেয়ে ব্যর্থ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচেও সুবিধে করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ে কোনও ঢিলেমি ছিল না। আড়াই মাসের দৈনন্দিন রুটিন এ রকম: সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দু’টো জিম। তার পর বাড়ি ফিরে মধ্যাহ্নভোজ শেষে আবার মাঠ। সেখানে সন্ধে সাতটা পর্যন্ত ছোটবেলার কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজের তত্ত্বাবধানে নেট। রাতের দিকে সহবাগদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলা আর ফিরে মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোই নাকি ছিল তাঁর একমাত্র অবসরযাপন। সিনেমা একটাই দেখেছেন‘মেরি কম’। বরং শোনা গেল ইংল্যান্ড সফরে ডাক পাওয়ার পরেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় নিয়ে ভাবনা একেবারে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি।

টুর্নামেন্টে শেষ পর্যন্ত কী হবে, সময় বলবে। তবে টিম নিয়ে খুব বেশি দুর্ভাবনার জায়গা থাকার কথা নয় কেকেআর ক্যাপ্টেনের। হাঁটুর চোট সারিয়ে রবিবার মহম্মদ হাফিজের লাহৌর লায়ন্সের বিরুদ্ধে সম্ভবত ফিরছেন রবিন উথাপ্পা। তিনি ফিরলে টপ অর্ডার আরও দৃঢ় হবে, আইজাজ চিমা নামক পাকিস্তানি পেস-বোমাকেও সামলে দেওয়া যাবে বলে মনে করছে কেকেআর শিবির। তবে কেকেআর কর্তাদের কারও কারও মনে হচ্ছে, টপ অর্ডার নয়। নাইট-ব্যাটিংয়ের আসল শক্তি এখন মিডল আর লোয়ার মিডল অর্ডার। একটা সাকিব-আল-হাসান না থাকলে যেখানে রায়ান টেন দুশখাতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। ইউসুফ পাঠানের ব্যাটে অগ্ন্যুৎপাত না হলে কোনও এক আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট থেকে হচ্ছে। কেকেআর ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ বলছেন, সুনীল নারিন যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। কিন্তু আইপিএল থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পর্যন্ত টানা দশ ম্যাচে জয়ের কারণ এটা, শক্তিশালী মিডল আর লোয়ার মিডল অর্ডারই টিমের আসল ‘পরশমণি’।

রবিবার চিন্তা কি তা হলে কিছু নেই? আছে। স্বয়ং লাহৌর টিম আছে, বেলিস-বর্ণিত যারা ‘অজানা আতঙ্ক’। কারণ টিমের অর্ধেক ক্রিকেটারের ক্ষমতা সম্পর্কে কারও তেমন ধারণা নেই। যে টিম শনিবার মাঝ দুপুরে চোরা হুমকি দিয়ে গেল, নারিনকে খেলার উপায় তাদের জানা। আর কেকেআরে নাম আর অভিজ্ঞতা থাকলে তাদের প্রত্যুত্তর হবে প্রতিভা।

আরে, যতই কোয়ালিফায়ার খেলে উঠুক, যতই আইপিএলের পাশে পাকিস্তান লিগ নামগোত্রহীন হোক, টিমটা আদতে পাকিস্তানের তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE