Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রীতি ম্যাচ আজ বাদশাহীন

শের-ই-পঞ্জাব বধে নাইট ওষুধ ক্ষুধার্ত গম্ভীর

ক্রিকেট পাঠক, কিছুক্ষণের জন্য ক্রিকেটের কথা ভুলে যান। ধরুন, আইপিএল টিম মালিকদের নিয়ে আলাদা একটা আইপিএল হচ্ছে। যে লিগে যুদ্ধ ব্যাটে-বলে প্রতিভার নয়। যে লিগে বিচার্য টিমের প্রতি আবেগ, আর অতি অবশ্যই টিম মালিকের গ্ল্যামার কোশেন্ট। লিগের দুই ফাইনালিস্ট খুঁজে নিতে খুব অসুবিধে হচ্ছে কি?

নারিনকে নিয়ে পুলে সূর্যকুমার যাদবের ট্যাটু প্রদর্শন। ছবি:টুইটার।

নারিনকে নিয়ে পুলে সূর্যকুমার যাদবের ট্যাটু প্রদর্শন। ছবি:টুইটার।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
মোহালি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৯
Share: Save:

ক্রিকেট পাঠক, কিছুক্ষণের জন্য ক্রিকেটের কথা ভুলে যান। ধরুন, আইপিএল টিম মালিকদের নিয়ে আলাদা একটা আইপিএল হচ্ছে। যে লিগে যুদ্ধ ব্যাটে-বলে প্রতিভার নয়। যে লিগে বিচার্য টিমের প্রতি আবেগ, আর অতি অবশ্যই টিম মালিকের গ্ল্যামার কোশেন্ট। লিগের দুই ফাইনালিস্ট খুঁজে নিতে খুব অসুবিধে হচ্ছে কি?

না, হওয়ার কথা নয়। ন’বছরে পা দেওয়া টুর্নামেন্টের মানচিত্র পরিবর্তন কম দেখেনি। নতুন টিমের আবির্ভাব, পুরনো টিমের নির্বাসন, আইপিএল ‘জনকের’ বিতাড়িত হওয়া— বছর বছর বদলে গিয়েছে আইপিএলের রং। আর এ সবের মধ্যে অটল থেকেছে দুই টিম মালিকের দলের প্রতি প্যাশন। কখনও কখনও যা দেখে স্রেফ পাগলামি ছাড়া কিছু মনে হবে না। এক দিকে ট্রফি জিতে এক মালিকের কার্টহুইল, রেলিংয়ে উঠে নাচানাচি। অন্য দিকে, বছরের পর বছর হতাশার মধ্যেও আর এক মালিকের বিমুগ্ধ দায়বদ্ধতা, শত দুঃখেও গালে টোল নিয়ে নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা।

শাহরুখ খান আর প্রীতি জিন্টাকে নতুন করে মনে করানোর দরকার আছে?

মোহালির মঙ্গল-সন্ধেয় থাকবেন, জানিয়ে দিয়েছেন কিংগস ইলেভেন পঞ্জাব মালকিন। ঘরের মাঠে ‘শের’দের প্রথম ম্যাচে, আইপিএল নাইনে ম্যাক্সওয়েলদের প্রথম জয়ে পঞ্জাব-দর্শক তাঁকে চোখে হারিয়েছে। মুম্বইয়ে শুটিংয়ে ব্যস্ত প্রীতি জিন্টা তাই আশ্বস্ত করেছেন, যত কাজ থাকুক না কেন, কেকেআর ম্যাচে মাঠে আসবেনই আসবেন।

আর শাহরুখ? গোটা দেশকে নতুন করে নিজের ‘ফ্যান’ করে দেওয়া কিংগ খানের দেখা পাবে তাঁর ভক্তরা? এক নাইট কর্তা হতাশ ভাবে বললেন, পঞ্জাব ম্যাচে অন্তত সম্ভাবনা খুব কম। নতুন ফিল্মের প্রচারে শাহরুখ নাকি এত ব্যস্ত যে, কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর পর্যন্ত তাঁর হদিশ পেতে ব্যর্থ! টুইটারে টিমকে তাতাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সশরীরে কবে টিমের কাছে ধরা দেবেন, জানা নেই। তবে সামনের মাসে পরপর হোম ম্যাচ। আশাবাদ হল, ইডেনে নিশ্চয়ই আসবেন।

শাহরুখ খান আসুন না আসুন, বাইশ গজের আইপিএল যাঁরা শাহরুখ খানের হয়ে খেলতে নামেন, তাঁরা নিজেদের কাজ মন দিয়ে করে যাচ্ছেন। কাজ মানে তো শুধু ব্যাট-বল নিয়ে পড়ে থাকা নয়। বছরে দু’মাস মাত্র যে টিমটা একত্র হওয়ার সুযোগ পায়, একসঙ্গে সময় কাটানোটাও তাদের কাছে সমান জরুরি। এগারো জনের খেলায় টিম বন্ডিং বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।

সোমবার যে কাজটা বেশ মনযোগ দিয়ে করতে দেখা গেল নাইটদের। রবিবার প্রায় গোটা দিন ট্র্যাভেল করেছেন, এ দিন তাই প্র্যাকটিসের কথা থাকলেও শেষমেশ ছুটি দেওয়া হয় টিমকে। ভিডিও অ্যানালিস্টকে সঙ্গে করে এক ফাঁকে শুধু পিচটা দেখে এলেন সহকারী কোচ সাইমন কাটিচ। জিম সেশনের পরে সুনীল নারিন, উমেশ যাদবরা নেমে পড়লেন সুইমিং পুলের হুড়োহুড়িতে। ইউসুফ পাঠান, রবিন উথাপ্পাকে আবার দেখা গেল সন্ধের টিম হোটেলের লবিতে অলস টহল দিচ্ছেন। কফিশপের এক কোণে চোখে চশমা, হাতে বই নিয়ে গভীর মনোযোগ-সহ বসে ব্র্যাড হগ। দেখে মনে হল, ফুড পয়জনিং বিদায় নিয়েছে।

তাঁর একটু দূরে বসা কেকেআরের সহকারী কোচ কাটিচ তখন হাসতে হাসতে বলে যাচ্ছেন, ‘‘হায়দরাবাদে আমাদের টিম হোটেলের কুক বোধহয় খুব সুবিধের ছিল না। যাক, ভালই হয়েছে। হগির একটু স্লো ডাউন করার দরকার ছিল। না হলে বুড়োটা আমাদের বড্ড জ্বালাচ্ছিল!’’ ক্রিকেটারের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট টিমের কোচ, সচরাচর দেখা যায় না। দুই স্বদেশীর মধ্যে সেটা নিয়ে যে ভালই চলে, বোঝা গেল। তবে পরমুহূর্তে আবার কাটিচ মনে করিয়ে দিলেন, ব্র্যাড হগ তাঁদের টিমের অন্যতম সেরা স্পিন অস্ত্র। এবং এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

হায়দরাবাদ ম্যাচ না খেলতে পারা আর এক নাইটের আইপিএল অবশ্য এ বছরের মতো শেষ। অস্ট্রেলীয় পেসার জন হেস্টিংসের চোট নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। এ দিন জানা গেল, গোড়ালিতে বেশ গুরুতর চোট রয়েছে তাঁর। এতটাই যে, রবিবার রাতে দেশে ফিরে গিয়েছেন হেস্টিংস। ‘‘ইডেনে মুম্বই ম্যাচের আগে ওয়ার্ম আপে চোটটা পায় ও। ব্যথা নিয়েই ম্যাচটা খেলেছিল। কিন্তু পরে স্ক্যানে ধরা পড়ল, চোটটা বেশ বেশি,’’ বলছিলেন কাটিচ। জানা গেল, হেস্টিংসের বদলি ইতিমধ্যেই খুঁজে রাখা হয়েছে। নাম না করলেও বলা হল, এ বারের নিলামে তাঁর উপর নজর ছিল নাইট ম্যানেজমেন্টের। চুক্তিপত্র নিয়ে কথা হচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যেই এসে পড়বেন নতুন নাইট।

তবে এই সদস্যবিয়োগ খুব একটা বড় চিন্তা হওয়ার কথা নয়। আগামী প্রতিপক্ষ যে সদ্য জয়ের স্বাদ পেয়ে তেতে রয়েছে, সেটাও বাড়তি ভাবাচ্ছে না নাইটদের। পঞ্জাবকে ‘বিপজ্জনক টিম’ বলার পাশাপাশি শুনিয়ে রাখা হচ্ছে যে, আইপিএলে হার থেকে জয়ে ফেরাটা দৈনন্দিন ব্যাপার। ওটা নিয়ে বেশি না ভেবে নিজেদের শক্তির উপর ফোকাস করাটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। তাই বিপক্ষ ওপেনিং জুটি মুরলী বিজয় আর মনন ভোরা একটা ম্যাচে ভাল করল কি না, সেটা নিয়ে শব্দ খরচ না করে নীরব মুগ্ধতায় দুই নাইট ওপেনারের কথা ভাবা ভাল। মোহালিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের টাটকা ১৮ বলে ৩২ আছে ঠিকই, কিন্তু বড় বাউন্ডারির এই মাঠে কেকেআর স্পিনাররাও যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না, সেটা মনে রাখা ভাল। পঞ্জাবের ‘শের’ আজ গর্জায় তো কাল ঘুমোয়। সেখানে কেকেআরের ধারাবাহিকতা স্ট্যাটসবুক উল্টে দেখে নেওয়া ভাল।

বিপক্ষ নয়, নিজেদের নিয়ে ভাবো— টিম থিম হিসেবে নাইট সংসারে নতুন নয়। তবে একটা থিম যেন চলতি বছরে নতুন আমদানি হয়েছে সোনালি-বেগুনি শিবিরে। ক্যাপ্টেনের ঘনিষ্ঠমহলে কানাঘুষো চললেও এত দিন যা বন্ধ দরজার আড়ালে ছিল। এ দিন কাটিচ খোলাখুলি বলে দিলেন, ‘‘গৌতমের মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বেঁচে আছে। রানের প্রচণ্ড খিদে আছে। আর ভারতীয় নির্বাচকদের ওর অনেক কিছু প্রমাণ করার আছে।’’

‘করব লড়ব জিতব রে’-র সঙ্গে এ বারের কেকেআরে আরও একটা লাইন জুড়ে গেল নাকি? ক্যাপ্টেনকে ইন্ডিয়ায় ফেরাব রে?

আরও পড়ুন:
আইপিএলের সময়সূচি
আইপিএলের পয়েন্ট টেবল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE