ফিফার ইতিহাসে শেষ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়িয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সেপ ব্লাটারের পূর্বসূরি জোয়াও হাভেলাঞ্জ যে বার ফিফা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।সেই ঘটনার বেয়াল্লিশ বছর পরে, এ দিন জুরিখে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্ব গড়াল ভোটাভুটির দ্বিতীয় রাউন্ডে। এক্সট্রাঅর্ডিনারি ফিফা কংগ্রেস শেষে ফিফার মসনদের দখল নিলেন প্রায় অচেনা এক ব্যক্তিত্ব। কলঙ্কিত এবং নির্বাসিত সেপ ব্লাটারের উত্তরসূরির নাম— জিয়ানি ইনফ্যান্টিনো। যাঁর জন্মস্থান (ব্রিগ) ব্লাটারের জন্মস্থানের (ভিস্প) চেয়ে মাত্র মাইলছয়েক দূরে!
উয়েফার সাধারণ সচিব জিয়ানির তিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট শেখ সলমন বিন ইব্রাহিম আল-খলিফা, জর্ডনের প্রিন্স আমি বিন আল হুসেন এবং ফিফার প্রাক্তন সহ সাধারণ সচিব জেরোম শ্যাম্পেন। প্রথম রাউন্ডে ভোটাভুটির শেষে অঙ্কটা দাঁড়িয়েছিল এ রকম— জিয়ানি: ৮৮ ভোট, শেখ সলমন: ৮৫ ভোট, প্রিন্স আলি: ২৭ ভোট এবং শ্যাম্পেন: ৭ ভোট।
২০৭ ভোটের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট (১৩৮ ভোট) না পেলে প্রথম রাউন্ডে জেতা সম্ভব ছিল না। সুতরাং দ্বিতীয় পর্বের ভোটদান শুরু হয়। যে রাউন্ডে দুই-তৃতীয়াংশ নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেলেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়ে যেত। তখনও পর্যন্ত দুই সেরা দাবিদার শেখ সলমন এবং জিয়ানির দরকার ছিল ১০৪ বা তার বেশি ভোট। শেষ পর্যন্ত শেখ সলমনকে উড়িয়ে দেন জিয়ানি। শেষ হিসেবটা যা দাঁড়াল— জিয়ানি: ১১৫, শেখ সলমন: ৮৮, প্রিন্স আলি: ৪, শ্যাম্পেন: ০।
প্রথম ভোট পড়ার কয়েক মুহূর্ত আগে নাম তুলে নেন আর এক প্রতিদ্বন্দ্বী, দক্ষিণ আফ্রিকার টোকিও সেক্সওয়েল। এশিয়া এবং আফ্রিকার সমর্থনপুষ্ট শেখ সলমনকে ব্লাটারের উত্তরসূরি হিসেবে দেখছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞই। কিন্তু উয়েফার সমর্থন-প্রাপ্ত প্রার্থী জিয়ানিই এ দিন জুরিখে শেষ হাসি হাসলেন। মজার ব্যাপার হল, উয়েফা প্রেসিডেন্ট মিশেল প্লাতিনি ছ’বছরের জন্য নির্বাসিত হয়ে যাওয়ার পর শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের যুদ্ধক্ষেত্রে জিয়ানির প্রবেশ।
তার পরে অবশ্য সময়ের অপচয় করেননি সুইস-ইতালীয় প্রশাসক। নির্বাচনী প্রচারে উয়েফার পকেট থেকে পাঁচ লক্ষ ইউরো খরচ করে গোটা বিশ্ব ঘোরেন তিনি। জিয়ানির ক্যাম্পেনে ছিল ব্লাটারোচিত নানান শপথ। তিনি বলেছিলেন, ফিফার অধীনে থাকা ২০৭ ফেডারেশনের উন্নতির জন্য প্রাপ্য অর্থ দ্বিগুনেরও বেশি বাড়িয়ে দেবেন। বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে ফিফা বিশ্বকাপ হবে চল্লিশ দেশের!
ফিফা প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার মঞ্চে উঠে অবশ্য সে সব প্রসঙ্গ আর তোলেননি জিয়ানি। আবেগাপ্লুত গলায়, কান্না সামলে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আপনাদের সবার প্রেসিডেন্ট হতে চাই। নির্বাচনের আগে সারা বিশ্ব ঘুরেছি। এখনও সেটা করতে চাই। আমি আপনাদের সবার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। নতুন যুগ গড়তে চাই, যেখানে মঞ্চের কেন্দ্রে থাকবে শুধু ফুটবল।’’
এখানেই থেমে থাকেননি জিয়ানি। বলে গিয়েছেন, ‘‘ফিফা খুব দুঃখের সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। নানান সঙ্কটে পড়েছে। কিন্তু সেই সময় এখন অতীত। আমাদের সংস্কারের কাজে নামতে হবে। আমাদের দরকার ভাল প্রশাসন এবং স্বচ্ছতা। সঙ্গে সম্মানও। কঠোর পরিশ্রম আর দায়বদ্ধতার মধ্য দিয়ে এই হারানো সম্মান আমাদের ফিরে পেতে হবে। যাতে সবাই মিলে ফের ফুটবলের উপর ফোকাস করতে পারি।’’
সমালোচকেরা অবশ্য এ সবে ভুলছেন না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়ানির নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বিরুদ্ধে আছড়ে পড়ছে সমালোচনার ঢেউ। কেউ তুলছেন প্লাতিনির প্রতি জিয়ানির অতীত আনুগত্যের প্রসঙ্গ। কেউ বলছেন, জিয়ানির ঢাকঢোল পেটানো সংস্কার তো তাঁর উয়েফাতেই কার্যকর করতে পারেননি। এর পরেও রয়েছে গ্রিস ও তুর্কিতে ম্যাচ গড়াপেটা বিতর্ক। ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার্স ইউনিয়ন তো সঙ্গে সঙ্গেই বিবৃতি দিয়ে দিয়েছে যে, তারা এই নির্বাচনে তীব্র অখুশি।
‘প্রতিবেশী’র কলঙ্ক মুছে ফিফায় নতুন সকাল আনতে পারেন কি না ইনফ্যান্টিনো, অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy