Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
আজ নতুন আরব্যরজনীর অপেক্ষায় চিন্নাস্বামী

বিরাট ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ বিশ্ব টিম মজে ক্যাপ্টেন কোহালিতে

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভেতরটা যেন চৈত্র সেলের গড়িয়াহাট মোড়। এলাকা স্বল্প পরিসর, কিন্তু তাতেই যে এত গাড়ি পরপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ভাবা যায় না। স্টেডিয়াম সিংহদরজার বাঁ দিক থেকে বিস্তর ক্যাঁচরম্যাঁচর কানে আসছে। দুর্বোধ্য কন্নড়ে তীব্র বচসা চলছে কাউন্টারে বসা ভদ্রলোকের সঙ্গে জনতার। অনলাইন টিকিট দেওয়া চলছে ও দিকে, আর কিছু একটা নিয়ে ভাল রকম গণ্ডগোল।

বাইশ গজে আরও এক লড়াই জিতে বিরাট কোহালির ডান্ডিয়া যুদ্ধ। সোমবার। ছবি: টুইটার

বাইশ গজে আরও এক লড়াই জিতে বিরাট কোহালির ডান্ডিয়া যুদ্ধ। সোমবার। ছবি: টুইটার

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ভেতরটা যেন চৈত্র সেলের গড়িয়াহাট মোড়। এলাকা স্বল্প পরিসর, কিন্তু তাতেই যে এত গাড়ি পরপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে ভাবা যায় না। স্টেডিয়াম সিংহদরজার বাঁ দিক থেকে বিস্তর ক্যাঁচরম্যাঁচর কানে আসছে। দুর্বোধ্য কন্নড়ে তীব্র বচসা চলছে কাউন্টারে বসা ভদ্রলোকের সঙ্গে জনতার। অনলাইন টিকিট দেওয়া চলছে ও দিকে, আর কিছু একটা নিয়ে ভাল রকম গণ্ডগোল।

গাড়ির অনন্ত সমুদ্রের কথা আগেই লেখা হয়েছে। আধিপত্য তার এতটাই যে, গুজরাত লায়ন্সের টিম বাস পর্যন্ত মাঠে ঢুকতে বেশ বিপাকে পড়ল। তার উপর প্রকাণ্ড সব বাঁশের স্ট্রাকচার। আইপিএলে এত দিন চিন্নাস্বামীর ট্রেডমার্ক ছিল আরসিবি-র অতিকায় সব কাটআউট। কোথাও কোমরে হাত দিয়ে কোহালি। কোথাও এবিডি। কিন্তু আজ সে সবের বদলে ওই, বাঁশের স্ট্রাকচার।

উঁকিঝুঁকি, খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল, স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ও সব হচ্ছে না। ইলেকট্রনিক স্ক্রিন বসানো হচ্ছে, যেখানে প্লে-অফ ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি নাকি দাঁড়িয়ে থাকবেন আরসিবি মহারথীদের এক-একজন। আর এটা মোটেও সেলের গড়িয়াহাট মোড় নয়, সোমবারের চিন্নাস্বামীর বরং তুলনা হতে পারে প্রাক্ দুর্গাপুজো একডালিয়া এভারগ্রিনের সঙ্গে। রাজা আসছেন, তাই এত হুড়োহুড়ি। রাজা ঢুকবেন, তাই রাজপাটে এত লাস্ট মিনিট প্রিপারেশনের তোড়জোড়।

কিংগ কোহালি সাম্রাজ্যের দখল নিচ্ছেন তো আর চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ে।

রাজাকে আজ মাঠে কোথাও দেখা গেল না। আসেননি। রায়পুর টু বেঙ্গালুরুর ধকল কাটিয়ে আসার কথা ছিল না, দরকারও পড়ে না। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যেখানে তাঁর ব্যাটিং স্ট্যাটসের হিসেব মিনিট পিছু দু’বার চলছে, পরের পর হিটে গুগল সার্চ ইঞ্জিন যেখানে প্রায় ভগ্নপ্রায়, যেখানে তাঁর কভার ড্রাইভ থেকে গাল চুলকোনো ভারতবর্ষের আলোচ্য বিষয়, সেখানে কোহালির সশরীর উপস্থিতির দরকার কী? বেঙ্গালুরুও তো ভারতীয় মানচিত্রের বাইরে নয়।

নেট বোলার থেকে পুরনো ক্রিকেট-তারা। লাঠি হাতে উর্দিধারী থেকে স্বয়ং কোহালির টিম, প্রত্যেকে যেন বিরাট কোহালি নামক মায়ানগরীর বাসিন্দা। অসুস্থ গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ যেমন। শরীর এতটাই খারাপ যে, কথা বলতে কষ্ট হয়। কিন্তু কোহালি নিয়ে বলে যান অনর্গল। সন্ধেয় ফোনে বলছিলেন যে, দিল্লির যুবক তাঁকে বাকরুদ্ধ করে ছেড়েছেন। বিশ্বনাথ বলছিলেন, “এত কম বয়সে এত ম্যাচিওর্ড, স্রেফ ভাবা যায় না। ক্রিকেটে পার্পল প্যাচ বলে একটা কথা আছে। কিন্তু তারও একটা শেষ থাকে। কোহালি মনে হচ্ছে ও সব ছাড়িয়ে আরও উঁচুতে চলে গিয়েছে।” টিম— তারা বিমুগ্ধ কোহালির ব্যাটিং-ঐশ্বর্যে, মোহিত কোহালির ওয়ার্কআউট রুটিনে। টিমের কেউ কেউ এটাও বলে ফেললেন যে, কোনও রক্তমাংসের নশ্বরের পক্ষে এতটা কঠোর ফিটনেস রেজিম রাখা সম্ভব নয়।

পাওয়ার লিফটিং? ওটাই এখন রোজকার রুটিন। ওজনের বিভিন্ন কম্বিনেশন নিয়ে যা চলে বেশ কিছুক্ষণ।

স্কোয়াট? পায়ের জোর যা বাড়ায়? অতি অবশ্যই আছে। এক-এক সেশনে অন্তত একশোটা করে।

হাই ইন্টেন্সিটি কার্ডিও? ফিটনেস শিডিউলে রোজনামচা। বিদ্যুৎগতির রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস নিয়ে যে এত চর্চা, পুরোটাই তো নির্ভর এর উপর।

শোনা গেল, পর্বতারোহীরা যে ধরনের স্ট্যামিনা ট্রেনিং নিয়ে থাকেন, আরসিবি ক্যাপ্টেনও নাকি মোটামুটি তাই। আর তাই যতটা বিস্ময় অর্পণ করা হয় ব্যাটিং ফর্মের জন্য, ঠিক ততটাই বিস্ময় জমা রাখা উচিত তাঁর ওয়ার্কআউটের প্রতি। টিম অবশ্য তাঁর আরও একটা ব্যাপার নিয়ে বিস্মিত। তারা সমান বিস্মিত অধিনায়ক কোহালি নিয়েও।

যে কোহালি নিজের ব্যাটে অবিশ্বাস্য ফর্ম নিয়েও নির্লিপ্ত থেকে যান। বলতে গেলে পাত্তাই দেন না। বরং বাকিদের পারফরম্যান্স কী ভাবে উন্নত করা যায়, তাতে মন দেন।

যে কোহালি অতীব চাপের মধ্যেও টিমকে বলতে পারেন, বোলাররা খারাপ করলে দোষারোপ করা চলবে না। কারণ একটা পরিবারে কেউ কাউকে দোষারোপ করে না।

যে কোহালি একাই এগারোর মহড়া নিয়েও টিমকে বলতে পারেন, তোমাদের সাহায্য ছাড়া কিছুই করতে পারব না। তোমরাও চেষ্টা করো। কেউ পারবে না আটকাতে।

এর পর টিম চার্জড হবে না কেন? টানা চার ম্যাচ জিতে প্লে অফ যাবে না কেন? শোনা গেল, গ্রুপ পর্যায়ে ‘হারলেই মৃত্যু’ পর্ব শুরুর আগে টিমকে নাকি একটা কথা বলেছিলেন কোহালি। বলেছিলেন যে, দু’ভাবে ব্যাপারটাকে দেখা যেতে পারে। সামনের চার-পাঁচটা ম্যাচে জয়ের অসম্ভব চাপ নেওয়া যেতে পারে। অথবা অতীত ভুলে একটা ফুরফুরে নতুন শুরু করা যেতে পারে। প্লে অফে উঠেও নাকি ছোটখাটো পার্টির বেশি যায়নি টিম। অধিনায়ক নাকি বলে দিয়েছেন, সব হবে। হবে ট্রফিটা হাতে তোলার পর।

যে উৎসবকে বাস্তব করার প্রথম ধাপ আজ। আজ আবার ডানপিটে ছেলেটাকে স্টান্স নিতে দেখে আসমুদ্রহিমাচলের বুক ঢিপঢিপ, ষোড়শীর পড়া ফেলে স্বপ্নের পুরুষকে দেখতে টিভির সামনে ছুটে আসা, চশমার কাঁচ মুছে অশীতিপরের ফের তা তুলে নেওয়া। যিনি কি না সচিন তেন্ডুলকরের চলে যাওয়ার পর খেলাটাই দেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আজ সামনে সুরেশ রায়না, জিতলে সোজা ফাইনাল।

আজ আবার, আরও এক বার বিরাট রাজার আরব্যরজনী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE