Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Coronavirus in India

আক্রান্তদের সেবায় যন্ত্রণা ভুলছেন জিমন্যাস্ট প্রণতি

করোনা সংক্রমণে গ্রাম বাংলা যখন দিশাহারা, তখন প্রণতি দাঁড়িয়েছেন জীবিকাহীন, খিদের সঙ্গে লড়তে থাকা তাঁর এলাকার মানুষের পাশে।

মানবিক: অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন প্রণতি দাস।

মানবিক: অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন প্রণতি দাস। নিজস্ব চিত্র।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৬:১৯
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ খেলার মাঠের জয়-পরাজয় ভুলিয়েছে তাঁকে। অনুশীলন, প্রতিযোগিতা মাথা থেকে সরিয়ে তাই তিনি ব্যস্ত অসহায়ের সেবাকার্যে।

কে তিনি? ইনি আর এক প্রণতি এবং ভারতীয় দলের জিমন্যাস্ট। দু’টি এশিয়ান গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও কমনওয়েলথ গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা জয়নগর-মজিলপুরের মেয়ে প্রণতি দাস।

সদ্য টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ছাড়পত্র পাওয়া প্রণতি নায়েকের সঙ্গে দশমিক তিন পয়েন্টের ব্যবধান (২০১৯ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায়) থাকায় এ বার টোকিয়ো যেতে পারছেন না তিনি। কিন্তু পেশায় রেলকর্মী প্রণতি সব যন্ত্রণা ভুলেছেন সেবা-মন্ত্রে।

করোনা সংক্রমণে গ্রাম বাংলা যখন দিশাহারা, তখন প্রণতি দাঁড়িয়েছেন জীবিকাহীন, খিদের সঙ্গে লড়তে থাকা তাঁর এলাকার মানুষের পাশে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রণতি লিখেছিলেন, ‍‘‍‘কারও যদি কোনও কাজ বা রোজগার না থাকে, করোনা সংক্রমণে জর্জরিত হন, দু’বেলা খাবারের অভাব থাকে, তা হলে দয়া করে অভুক্ত অবস্থায় ঘুমোতে যাবেন না। ইতস্তত না করে, আমাকে লিখে পাঠান। যতটা সামর্থ্য রয়েছে, তা নিয়ে আপনার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’’ যোগ করেছেন, ‍‘‍‘আমি ধনী নই। একজন সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনে নিজের খাবার বাদ দিয়েও তা আপনার হাতে তুলে দিতে চাই। যা এই দুঃসময়ে আমাকে আনন্দ দেবে। এক বাক্স নুডলস বা পাঁউরুটি, দুধ বা বিস্কুট অন্তত দিতে পারব। আমার বন্ধুদেরও বলছি এ ভাবেই এগিয়ে এসে আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আর্ত, ক্ষুধিত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এটাই হল সময়।’’

প্রণতির এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে জয়নগর এলাকায় অনেক অসহায় মানুষই পেয়েছেন এই কঠিন সময়ে সাহায্যের হাত। ফোনে যোগাযোগ করা হলে দেশের এই প্রথম সারির জিমন্যাস্ট বললেন, ‍‘‍‘এক সময়ে অভাব কাটিয়ে খুব কষ্ট করে উঠে এসেছি। এই অতিমারিতে তাই অসহায় মানুষের দুর্দশা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছি। তাই ওই পোস্টটা করেছিলাম। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের কষ্ট আর সহ্য করা যাচ্ছিল না।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘সামর্থ্য অনুযায়ী বেশ কয়েক জন অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে পারার আনন্দ অনেক। গত বছরও এ রকম পদক্ষেপ করেছিলাম। কিন্তু এ বার মানুষের অবস্থা আরও খারাপ। চোখে দেখা যাচ্ছে না। এখন অন্তত আমি চাকরি করি। সেই অর্থ দিয়েই মানুষের সেবার
জন্য এই প্রয়াস।’’

কতজনকে এখনও পর্যন্ত খাবার দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছেন? প্রণতি বলেন, ‍‘‍‘আমার গ্রামের ২০-২৫ জনের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। এদের কারও বাড়িতে করোনা সংক্রমণ রয়েছে। সংখ্যাটা নগণ্য। কিন্তু এ ভাবে আমাদের প্রত্যেকেই যদি সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসেন, তা হলে ওই অসহায় মানুষগুলির খুব সুবিধা হবে। দুপুর বা রাতের খাবার, চাউমিন, রুটি-তরকারি, পাঁউরুটি, বিস্কুট, দুধ যখন ওই মানুষগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছি, মনে হচ্ছে যাঁদের সাহায্য নিয়ে এই গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে গিয়েছি, তাঁদের কিছুটা প্রতিদান
দিতে পারছি।’’

টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যেতে না পারার দুঃখ? জয়নগরের উত্তর দূর্গাপুর শ্যামসুন্দরতলা গ্রামের মেয়ে বলে দেন, ‍‘‍‘ওটা অতীত। প্রণতিদির (নায়েক) জন্য শুভেচ্ছা রইল। আজ সকালেই শম্ভু নামে গ্রামের একজনের হাতে খাবার তুলে দিলাম। এই দুর্দিনে যিনি কাজ হারিয়েছেন। স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত গত দু’দিন অভুক্ত ছিলেন। তিনি দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করার সময়ে মনে হচ্ছিল এটাও একটা প্রাপ্তি। এ রকম অসহায় মানুষের আশীর্বাদ পেলে পরবর্তী এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসে দেশের মানকে নিশ্চয়ই
তুলে ধরতে পারব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gymnast Corona Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE