হাবাস-মেজাজ। শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
পেলের সামনে তাঁর টিম খেলতে নামছে বলে আলাদা কোনও উত্তেজনা নেই আন্তোনিও হাবাসের। শনিবার বিধাননগর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে অনুশীলনের পরে আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ বলে দিলেন, ‘‘পেলে তো থাকবেন গ্যালারিতে। আমরা খেলব মাঠে। আলাদা কোনও চাপ থাকবে কেন? নিতে রাজিও নই। এইটুকুই মাথায় রাখছি, ম্যাচটা জিততে হবে।’’
আরাতা ইজুমির মতো ফুটবলাররা কলকাতায় দ্বিতীয়বার আসা ফুটবল-সম্রাটের সঙ্গে সেলফি তুলবেন বলে মুখিয়ে রয়েছেন। হাবাসের সঙ্গী এটিকের স্পোর্টস ডিরেক্টর আলবার্তো মারেরো বলে দিলেন, ‘‘পেলে তো ফুটবল লিজেন্ড। উনি আসবেন বিরাট ব্যাপার। আমি অন্তত সামনে থেকে কখনও দেখিনি।’’ হাবাস কি কখনও পেলেকে সামনে থেকে দেখেছেন? প্রশ্নটা শুনে কিছুটা বিরক্তই মনে হল স্প্যানিশ কোচকে। তাঁর বিরক্তির কারণ অবশ্য পেলে নন। নতুন মাঠ। বিধাননগরের গরু-চরা মাঠকে সবুজে সবুজ করে ফেলেছে এটিকে-র দায়িত্বে থাকা লোকজন। দেখে চেনাই যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও হাবাসের বিরক্তির কারণ মাঠটা অসমান। জল কম দেওয়া হয়েছে। ঘাস বড়। সাধারণত যা হয় না তাই হচ্ছিল এ দিন অনুশীলনের সময়। গোলকিপাররা যেখানে প্র্যাকটিস করছিলেন সেখানে বল নিয়ে অনুশীলনের সময়েই দেওয়া হচ্ছিল জল। হাবাস মাঠ থেকে যাওয়ার সময় তদারকির দায়িত্বে থাকা লোকজনকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন ভাল করে জল দিতে। অনুশীলনের পর ঘাস ছেঁটে দিতে। এই মাঠের আগে মোহনবাগান মাঠও পছন্দ হয়নি তাঁর। আসলে মাদ্রিদে যে মাঠে এক মাসেরও বেশি সময় অনুশীলন করে এসেছেন সেটা এত ভাল যে তাঁর সঙ্গে এখানকার কোনও মাঠেরই সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছেন না। ফলেই হচ্ছে বিপত্তি। সরাসরি মুখে না বললেও গত বারের রানার্স কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে মনে হল বেশ চাপে তিনি। পস্টিগার চোট। তিন ফুটবলার দেশের হয়ে খেলতে চলে গিয়েছেন। বলজিতের লাল কার্ড। সাত জনের একটা করে হলুদ কার্ড। ঘনিষ্ঠমহলে বারবার উষ্মা প্রকাশ করছেন রেফারিং নিয়ে। শাস্তির ভয়ে সরাসরি রেফারিং নিয়ে কেউ কোনও কথা বলতে চাইছেন না। তবে দেখা হলেই তাঁদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে, গত বারের মতো এ বারও এটিকের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।
হাবাসকে এ দিন দেখা গেল বল নিয়ে ছোট ছোট পাস খেলানোর পাশাপাশি ফিজিক্যাল কন্ডিশনিংয়ের উপর জোর দিতে। অনুশীলন শেষে হোসেমির সঙ্গে প্রায় পনেরো মিনিট নানা রকম মুভ নিয়ে আলোচনা করলেন গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিমের কোচ। বিধাননগর কমপ্লেক্সের মাঠকে পুরো কালো কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল ক্লোজড ডোর করার জন্য। কিন্তু অন্য রাস্তা দিয়ে ঢুকে পড়ছেন সবাই। অসংখ্য নিরাপত্তারক্ষী দিয়েও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। অনুশীলন দেখে অবশ্য চমক আছে বলে মনে হল না।
এমনিতে ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে অযথা প্রচণ্ড কড়াকড়ি করছেন আটলেটিকোর লোকজন। মাঝেমধ্যে টিম হোটেলে হঠাত্ই ডেকে সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছে কোনও একজনকে দিয়ে। এ দিন পাঠানো হয়েছিল গোয়া ম্যাচের গোলদাতা আরাতা-কে। তিনি যে সব কথা বললেন তার মধ্যে নতুনত্ব কিছুই নেই। এটিকে কর্তা এবং তাঁর কোচ হাবাস যখন টিমের চোট-কার্ড-অনুপস্থিতি নিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করছেন, তখন জাপান থেকে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়া আরাতা বলে দিলেন, ‘‘আমাদের টিম প্রচণ্ড ব্যালান্সড। কোনও সমস্যা নেই।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘গোয়ায় যে গোলটা করেছি ওটা জীবনের সেরা গোল। কোচ যেখানে খেলাবেন সেখান থেকেই গোল করার চেষ্টা করব।’’ এ বারই প্রথম আইএসএল খেলছেন। ফলে তাঁর কাছে প্রশ্ন হয়েছে আইএসএল ও আই লিগের মধ্যে পার্থক্যটা কী? আরাতা বললেন, ‘‘আইএসএলে কোচের ছক অনেক আলাদা হয়। ছ’জন বিদেশি খেলে যারা ভাল ভাল প্রতিভা। কম সময়ের মধ্যেই দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। তাই আইএসএল ও আই লিগের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।’’
তাঁর কোচ হাবাস কেরল নিয়ে এ দিন কিছু না বলতে চাইলেও আরাতা বলে দিলেন, ‘‘কেরলকে হারানো খুব শক্ত হবে। ফাইনালে হারার জন্য ওদের মধ্যে বদলা নেওয়ার মানসিকতা থাকবে। কিন্তু আমরাও তো চ্যাম্পিয়ন।’’ যুবভারতীর ঘাসের মাঠে খেলা কি সমস্যা হবে? আরাতা বললেন, ‘‘আমরা পেশাদার ফুটবলার। ম্যাচের একদিন আগে যুবভারতীতে ট্রেনিং করার সুযোগ পাবই। কোনও সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy