Advertisement
E-Paper

পস্টিগা-ধোঁয়াশার মধ্যেই বিকল্প খোঁজা শুরু হাবাসের

মাত্র এক বছর পেরোতে না পেরোতেই যে ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টে যাবে তা কি জানতেন আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস! ভাগ্যের কী নিদারুণ পরিহাস! ঠিক বারো মাস আগে দীপাবলির রাতে গোয়ায় এসে মাস্তানি করে জিকোর দলকে ২-১ হারিয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন আটলেটিকো কোচ। তাও আবার সত্তর মিনিট পর্যন্ত এক গোলে পিছিয়ে থেকে।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০২
গোয়ার সমুদ্রসৈকতে অনুশীলন হিউম-বলজিৎদের।

গোয়ার সমুদ্রসৈকতে অনুশীলন হিউম-বলজিৎদের।

মাত্র এক বছর পেরোতে না পেরোতেই যে ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টে যাবে তা কি জানতেন আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস!
ভাগ্যের কী নিদারুণ পরিহাস!
ঠিক বারো মাস আগে দীপাবলির রাতে গোয়ায় এসে মাস্তানি করে জিকোর দলকে ২-১ হারিয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন আটলেটিকো কোচ। তাও আবার সত্তর মিনিট পর্যন্ত এক গোলে পিছিয়ে থেকে। যে ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ব্রাজিলে আক্রমণাত্মক ফুটবলের অন্যতম বক্স অফিস তেলে সান্তানার ছাত্র জিকোর মন্তব্য ছিল—বিপক্ষ কোচের রুদ্রমূর্তি দেখে দ্বিতীয়ার্ধে আমার ছেলেরা নার্ভাস হয়ে পড়েছিল।
আটলেটিকো শিবির যা শুনে পাল্টা দিয়েছিল—জিকোরও তার মানে একটা ‘তৃতীয় হাত’ (পড়ুন অজুহাত) রয়েছে।
সেমিফাইনালেও গোয়ায় এসে তাঁর সেই সময়ের গোলমেশিন ফিকরুকে মাঠের বাইরে রেখে টাইব্রেকারে ম্যাচ বার করে হাসতে হাসতে ফাইনালে চলে গিয়েছিলেন রাফায়েল বেনিতেজের সহকারী।
আইএসএলে কলকাতা-গোয়া সেই মহাম্যাচের আগে এ বার যেন ফুটবলদেবতা বালিঘড়ির মতোই পরিস্থিতি উল্টে দিয়েছেন।
নেপথ্যে এ বারের আইএসএলে স্প্যানিশ কোচের পর্তুগিজ পাশুপাত পস্টিগার চোট। গোয়ায় পা দিয়ে স্প্যানিশ কোচের মুখ তাই ভার। এ দিন বিকেলে আটলেটিকোর টিম হোটেল ‘প্ল্যানেট হলিউড’-এর সৈকতে অনুশীলনের সময় গত বারের চ্যাম্পিয়ন কোচকে দেখে সেটাই মনে হল। যেন চরম লড়াইয়ের দিনেই তাঁর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার রথের চাকা মাটিতে বসে গিয়েছে।
যিনি পর্তুগালের বিশ্বকাপ দলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর একদা সতীর্থ হেল্ডার পস্টিগা। চলতি আইএসএলে জোড়া গোল দিয়ে দলকে প্রথম ম্যাচ জিতিয়ে এনেও আটলেটিকো শিবিরে বয়ে এনেছেন একরাশ আশঙ্কা!

পস্টিগা কি বুধবারের এই হাইভেল্টোজ ম্যাচে খেলতে পারবেন?

প্রশ্নটা তুললেই আটলেটিকো দে কলকাতার প্রতিটি সদস্যই এমন ভাণ করছেন যেন, তাঁদের বাড়ির গেট-টুগেদারে দাউদ ইব্রাহিমকে দেখা গিয়েছে কি না তা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। সবার মুখে কুলুপ।

একটু আড়ালে গিয়ে আটলেটিকো শিবিরে জাল ফেললেও সাংবাদিকরা শুনতে পাচ্ছেন হাবাসের শেখানো বুলি—গোয়া ম্যাচে হয়তো পারবে না। কিন্তু তার পরের ম্যাচ থেকেই ফিট হয়ে যাবে।পস্টিগা নিজেও নাকি টিমমেটদের কাছে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে থাকার কথা শুনিয়েছেন।

সমর্থকদের সঙ্গে সেলফি তোলায় মজেছেন আটলেটিকো দে কলকাতার বোরহা ফার্নান্দেজ।

যা শুনলে ডমরুর কুমির, ঘনাদার নুড়ি, ব্রজদার ক্রিকেটকে মনে হতে পারে।

এ দিন সন্ধ্যায় আটলেটিকোর ড্রেসিংরুম থেকে পস্টিগা সংক্রান্ত যে তথ্য উঠে আসছে তা আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বই কি! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিমের এক সিনিয়র সদস্য যে প্রশ্ন তুললেন তা আটলেটিকো অনুরাগীদের চিন্তায় ফেলবেই।

প্রশ্ন-১) টিমের মার্কি ফুটবলার যদি এতটাই সুস্থ হয়ে থাকেন যে এক ম্যাচ পরেই টিমে চলে আসবেন তা হলে মিডিয়ার কাছে তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট জানানো হল না কেন?

প্রশ্ন-২) বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলারের হ্যামস্ট্রিং যদি ভাল মতোই জখম (পড়ুন পেশিতন্তু ছিড়েছে কি?)না হয়ে থাকে তা হলে তিনি সে দিন আর উঠে দাঁড়াতে পারলেন না কেন?

পেশিতন্তু ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কাটা আরও জোরদার হচ্ছে এই কারণেই, যে টিমেরই কোনও কোনও সূত্র জানাচ্ছে যে পস্টিগার হ্যামস্ট্রিংয়ে নাকি রক্ত জমে রয়েছে। রক্ত একমাত্র জমতে পারে পেশিতন্তু ছিঁড়লেই।

আর এটাই যদি হয়ে তাকে তা হলে আগামী তিন সপ্তাহ ম্যাচের বাইরে থেকে সুস্থ হতে হবে পস্টিগাকে। আর সেই ‘মাসল টিয়ার’ যদি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে হয়, তা হলে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের ট্রফি ভাগ্যে এ বার যে কালোমেঘের আনাগোনা শুরু হবে, তাও ফিসফিসিয়ে বলছেন টিমেরই কেউ কেউ।

আটলেটিকো শিবির থেকে চুঁইয়ে আসা খবর অনুযায়ী, পস্টিগা নাকি এ দিন জিমে এবং সুইমিং পুলে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন।

এ দিন বিচে সান্ধ্য-ভ্রমণে বেরোনো পর্যটকদের সঙ্গে তাঁর সতীর্থরা যখন গা-ঘসাঘসি করে অনুশীলন করছেন তখন দেখা দিলেন আটলেটিকোর জখম মার্কি। পর্যটকদের মতোই বিচে হাঁটতে হাঁটতে দেখলেন টিমের অনুশীলন। যা দেখে কলকাতার টিমকে দেখতে হামলে পরা নরওয়ের জনৈক অ্যালেক্সের মন্তব্য, ‘‘এ বার জিকোর সঙ্গে ম্যাচটায় পস্টিগা নেই। কলকাতা কোচের কাছে কিন্তু খুব চাপ।’’

গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এরই মধ্যে জাতীয় দলের হয়ে প্রাক-বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে চলে গিয়েছেন হাবাসের স্টপার অর্ণব মণ্ডল এবং রাইট ব্যাক রিনো অ্যান্টো। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে কাবু জুয়েল রাজাও। হাবাসের এই দুর্দিনে তাই জিকোর মুখে চওড়া হাসি। কলকাতার স্প্যানিশ কোচের মুখে যখন কথা নেই, শুভেচ্ছা জানালেও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন, গোয়ার ব্রাজিলীয় কোচ ম্যারিওট হোটেলে বিশ্রাম নেওয়ার ফাঁকে এ দিন নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘‘কলকাতা আসবে আর হারিয়ে চলে যাবে, সেটা এ বার হবে না।’’ লুসিও, আর্নোলিন, জিওফ্রে, মন্দার, রোমিও, লিও মওরা, ডেনসন— এই অষ্টবসুকে নিয়ে এক বছর আগে ‘তৃতীয় হাত’ দেখানো জিকোই আজ আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে। আর ডেনসনদের স্লোগান, ‘‘বিলিভ, ইন্সপায়ার, স্ট্রাইক।’’

ঝানু স্ট্র্যাটেজিস্ট হাবাস তাই প্ল্যান ‘বি’, ‘সি’ ঝালিয়ে নিতে ব্যস্ত। রবিবার চুপিচুপি গিয়ে দেখে এসেছেন জিকোর গোয়াকে। এ দিন মাজোরদা বিচে গোটা টিমকে তিনটে দল গড়ে খেলিয়ে দেখেও নিলেন। অর্ণবের জায়গায় জোসেমি আর রিনোর জায়গায় ডেঞ্জিল ফ্র্যাঙ্কো রয়েছেন কোচের পরিকল্পনায়। সেক্ষেত্রে ব্যাক ফোরে ডেঞ্জিল-টিরি-জোসেমি-অগাস্টিন। কিন্তু জোসেমি প্রথম ম্যাচে দলে ছিলেন না। তাঁরও চোট রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্ন্যান বি তে টিরির সঙ্গে নাতো ঢুকে পড়বেন গোয়ার আক্রমণাত্মক পাওয়ার হাউজ উড়িয়ে দিতে। প্ল্যান সিতে জোসেমি বা নাতোর সঙ্গে অগাস্টিন আর লেফট ব্যাকে রহিম নবি। রক্ষণ নিয়ে এ রকম নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশন কষলেন কলকাতার স্প্যানিশ কোচ।

আর পস্টিগার জায়গায় সুশীল, বলজিৎ, হিউমদের নিয়ে অঙ্ক কষছেন হাবাস। গোপন তাস হিসেবে রেখে দিচ্ছেন ভালদো, জাভি লারা, গাভিলানদের। লক্ষ্য, যেন তেন প্রকারে গোয়া থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে কলকাতায় পা রাখা।

প্রথম ম্যাচ জিতে আলোকজ্জ্বল সূচনার জ্যাকেট পরেও হাবাসের মুখে চিন্তার আঁধার, জিকো তখন খোশমেজাজে। তৃতীয় হাত দেখানোর বদলে এখন তিনি নাকি ছেলেদের বলছেন—উইন, গো, শাইন।

চিরদিন কারও সমান যায় নাকি? উত্তর মিলবে বুধবার রাত ন’টার পর।

—নিজস্ব চিত্র ও ফেসবুক

habas postiga atk postiga substitute postiga confusion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy