Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বুফোঁ বোঝাল, ওর হাত এখনও যে কাউকে আটকে দিতে পারে

জিয়ানলুইগি বুফোঁ বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দুই মহাতারকার এই লড়াই দেখতে টিভি চালিয়ে বসেছিলাম। দেখতে চাইছিলাম এখনও কি পুরনো বুফোঁর তেজ একই রকম আছে? নাকি রোনাল্ডো দেখিয়ে দেবে এখনও বড় ম্যাচ মানে ও-ই শেষ কথা? প্রথমটার উত্তর সহজেই পেয়ে গেলাম। দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে বুফোঁ প্রমাণ করে দিল বয়স একটা সংখ্যামাত্র। ঘুমোতে যাওয়ার আগেও চোখে ভাসছিল ওর দুর্দান্ত সেভগুলো। দ্বিতীয়টার উত্তর কী হবে ঠিক ভেবে পেলাম না।

মাদ্রিদে বুফোঁর হুঙ্কার। ছবি: এএফপি।

মাদ্রিদে বুফোঁর হুঙ্কার। ছবি: এএফপি।

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

রিয়াল মাদ্রিদ ১
জুভেন্তাস ১

(দু’পর্ব মিলিয়ে জুভেন্তাস ৩-রিয়াল ২)

জিয়ানলুইগি বুফোঁ বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দুই মহাতারকার এই লড়াই দেখতে টিভি চালিয়ে বসেছিলাম। দেখতে চাইছিলাম এখনও কি পুরনো বুফোঁর তেজ একই রকম আছে? নাকি রোনাল্ডো দেখিয়ে দেবে এখনও বড় ম্যাচ মানে ও-ই শেষ কথা?

প্রথমটার উত্তর সহজেই পেয়ে গেলাম। দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে বুফোঁ প্রমাণ করে দিল বয়স একটা সংখ্যামাত্র। ঘুমোতে যাওয়ার আগেও চোখে ভাসছিল ওর দুর্দান্ত সেভগুলো। দ্বিতীয়টার উত্তর কী হবে ঠিক ভেবে পেলাম না। রোনাল্ডোকে কোনও দিন এত অসহায় দেখিনি। সব সময় ওর একটা আলাদা দাপট ছিল। এই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করল। কিন্তু সেই টপ ফর্মের রোনাল্ডো চোখে পড়ল না।

আমি ভেবেছিলাম জুভেন্তাস হয়তো নিজেদের ঘর বাঁচিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। আর রিয়াল বলে বলে গোল দেবে। কিন্তু নক আউট ফুটবলে কোনও কিছুই নিশ্চিত নয়। কী সুন্দর ইতালীয় ডিফেন্সের সঙ্গে পাসিং ফুটবলকে মিশিয়ে দিল জুভেন্তাস। যেমন রক্ষণে চেলিনি-বোনুচ্চি-এভ্রা-লিচস্টাইনার দুর্দান্ত খেলে গেল। তেমনই আক্রমণে মোরাতা-তেভেজ-ভিদালরা ক্রমাগত উপর-নীচ করে রিয়ালের দম বের করে দিল। সব কিছু এক দিকে রেখেও বুফোঁ আবার দেখিয়ে দিল ওর দুটো হাতের এখনও ক্ষমতা আছে যে কোনও বিশ্বসেরা টিমকে চুপ করিয়ে রাখার। গোলের কাছাকাছি ঘেঁষতে না দেওয়ার।

৩৭ বছরেও এত সুন্দর রিফ্লেক্স ভাবাই যায় না। যেমন আত্মবিশ্বাসী ভাবে সেট পিসগুলো থেকে বল গ্রিপ করল, ঠিক তেমন ক্ষিপ্রতাও দেখাল। বেলের দূরপাল্লার গোলার মতো শটটা অসাধারণ বাঁচাল। শরীরটা ভাসিয়ে বলটাকে দু’হাত দিয়ে ফিস্ট করে দিল। ক্রুজের সামনে থেকে নেওয়া শটটাও সুন্দর হ্যান্ডেল করল। বেঞ্জিমার শটটাও প্রথম পোস্টে দারুণ বাঁচাল। সত্যিই কোনও বিশ্বমানের পেশাদার নিজের কাজটাকে কত সহজেই না করতে পারে।

বুফোঁর খেলার আর একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে ওর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। ফুটবলে একটা প্রবাদ আছে, ‘তুমি জার্সির সামনের নামের জন্য খেললে লোকেরা পিছনের নামটা মনে রাখবে।’ বুফোঁ ওই জাতেই পড়ে। দেখলাম পুরো ম্যাচটা চিত্কার করে তাতিয়ে গেল ডিফেন্ডারদের। আসলে একটা গোলকিপারের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাটা বেশি থাকে। গোলকিপাররা বরাবর খুব অ্যাগ্রেসিভ হয়। দল জিতলে যেমন গোলকিপাররা প্রচার নিতে মুখিয়ে থাকে না। আবার হারলেও যাবতীয় কটাক্ষ শোনার সাহসটাও রাখে। স্নায়ু ইস্পাতের না হলে কেউ গোলকিপার হতে পারে না। আমি নিজের কেরিয়ারে যখন অধিনায়কত্ব করেছি তখন ফুটবলারদের তাতাতে অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করতাম। ভুল করলে যেমন বকা দিতাম। আবার কেউ ভাল করলে তার প্রশংসাও করেছি। যাতে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামে।

রিয়াল শুরুর থেকে যেমন আক্রমণ করল সেই আন্দাজে গোল করতে পারল না। উইং থেকে বেশির ভাগ আক্রমণ তৈরি হল। তার উপর আবার রোনাল্ডো ভাল ফর্মে ছিল না। রোনাল্ডোকে সেন্ট্রালি খেলানোয় ওর উপরে অনেক রক্ষণাত্মক দায়িত্ব পড়ে যাচ্ছিল। উইংয়ে থেকে যে গ্রাউন্ড কভার ও করতে পারে, সেটা হচ্ছিল না। ফুটবলারদের স্টেপওভার করতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে। পাস দিতে পারছে না। আগে ফ্রি-কিকটা পারফেক্ট ছিল। এখন ওর সেই অস্ত্রটাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে। রোনাল্ডোর সহজ সুযোগ ছিল দ্বিতীয় গোল করার। বুঝলাম না নিজে শট না নিয়ে কেন বেঞ্জিমাকে পাস দিতে গেল। রোনাল্ডো তাও যা চেষ্টা করল, গ্যারেথ বেলের মধ্যে কিছুই দেখলাম না। দুটো সহজ সুযোগ ফস্কালো। দেখে মনে হল মানসিক ভাবে খুব চাপে রয়েছে। মাঝমাঠে মদ্রিচ না থাকায় পেনিট্রেটিভ পাসগুলো আসেনি। সমতা ফিরিয়ে জুভেন্তাস ডিফেন্স আরও জমাট করে দেওয়ায় দ্বিতীয় গোলটা পায়নি রিয়াল।

রিয়াল খারাপ খেলার থেকেও বলব জুভেন্তাস ভাল খেলেছে। পল পোগবা কেন এত ভাল বক্স-টু-বক্স মিডিও সেটাও দেখলাম। শক্তি আছে। আবার লম্বা লম্বা পা-গুলো দিয়ে ড্রিবলও করতে পারে। মোরাতার গোলটাও পোগবার হেড থেকেই হল। বুদ্ধিমানের মতো আবার মোরাতা শটটা মাটিতে মেরে বাউন্স করাল যাতে কাসিয়াস ধরতে না পারে। তবে ফাইনালে জুভেন্তাসের ফিনিশিংটা ভাল করতে হবে।

গত কয়েক বছরে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ইতালীয় ফুটবল। আমার সময় শুনতাম ইতালীয় লিগ হচ্ছে বিশ্বের সেরা। ফান বাস্তেন, খুলিট, মারাদোনা, রাইকার্ড, মালদিনি, ক্লিন্সম্যান, গাসকোয়েন। তারকার ছড়াছড়ি ছিল। মাঝে মাঝে এখন টিভিতে দেখি সেই লিগের বড় ম্যাচগুলোতেও গ্যালারিতে লোক থাকে না। বুফোঁদের মধ্যে সেই আবেগটাই দেখলাম। আসলে ওরা খেলছিল গোটা ইতালীয় ফুটবলের পুনরুত্থানের লড়াইয়ে। ফাইনালে বার্সেলোনা ফেভারিট হলেও এই আবেগটাই হয়তো চমকে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE