Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

‘হার্দিক জোর দিক নিজের শক্তির ওপর’

বিশ্ব সেরা টেস্ট দল হিসেবে ভারতের হ্যাটট্রিক করার সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। দরকার  কয়েকটি ছোটখাটো সমস্যার সমাধান।

আলোচনা: দক্ষিণ আফ্রিকায় সীমিত ওভারে সফল বোলার হার্দিক। কিন্তু টেস্টে সীমাবদ্ধতা ধরা পড়েছে ব্যাটসম্যান হার্দিকের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেটে সময় দিতে হবে তাঁকে। ফাইল চিত্র

আলোচনা: দক্ষিণ আফ্রিকায় সীমিত ওভারে সফল বোলার হার্দিক। কিন্তু টেস্টে সীমাবদ্ধতা ধরা পড়েছে ব্যাটসম্যান হার্দিকের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নেটে সময় দিতে হবে তাঁকে। ফাইল চিত্র

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

খবরের কাগজে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির টানা দ্বিতীয় বার টেস্টে এক নম্বর হওয়ার স্মারক হাতে ছবিটা দেখে গর্ব হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রত্যাশা। তা হল—বিরাটের দল কি টেস্টে এক নম্বর হওয়ার হ্যাটট্রিক আগামী বছর করতে পারবে?

Advertisement

আমার মতে বিশ্ব সেরা টেস্ট দল হিসেবে ভারতের হ্যাটট্রিক করার সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। দরকার কয়েকটি ছোটখাটো সমস্যার সমাধান।

আগামী এক বছরে ভারতীয় দলকে খেলতে হবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে। যার মধ্যে পাঁচটি টেস্ট ইংল্যান্ডে (অগস্ট-সেপ্টেম্বর)। আর বছরের শেষে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়া যাবে চার টেস্টের সিরিজ খেলতে। এটাই ঠিক করে দেবে ভারতীয় দল আগামী বছরেও ফের এক নম্বরে থাকবে কি না।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সফল হতে গেলে কী করা দরকার তা পর্যালোচনা করতে গেলে এই বিষয়গুলিই সামনে আসছে:

Advertisement

দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলে যাওয়ার সুবিধা: দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে বল যেমন লাফায়, তেমনই নড়াচড়া করে। অর্থাৎ বাউন্সের সঙ্গে সুইংটাও সামলাতে হয়। এ বারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তৃতীয় টেস্টের পর থেকেই এই শর্ট বল ও সুইং বেশ ভালই সামলেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে মুরলী বিজয়, অজিঙ্ক রাহানে-দের। ইংল্যান্ডে বল সুইং করবে। আর অস্ট্রেলিয়ায় শরীর লক্ষ্য করে ধেয়ে আসবে শর্ট বলগুলো। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই দু’টোর মোকাবিলা করে যাওয়ার সুবিধা পাবে ভারত। একই সঙ্গে ওদের মাথায় রাখতে হবে, ইংল্যান্ডে ফ্রন্টফুটে খেলাটা অভ্যাস করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে দরকার হবে ব্যাকফুটে খেলাটা। এই পরিবর্তনটা কিন্তু এ বছরে ওদের অভ্যাস করতেই হবে।

মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে বিরাট কোহালিকে: আমি নিশ্চিত, ইংল্যান্ডে ভারতীয় দল পা রাখলেই ব্রিটিশ মিডিয়া হৈ-হল্লা জুড়বে এর আগে ইংল্যান্ডে বিরাটের রান না পাওয়া নিয়ে। মাঠেও বেন স্টোকস-রা এ সব নিয়ে নানা মন্তব্য করবে। কিন্তু সেই ফাঁদে বিরাটের পা দেওয়া চলবে না। কারণ, ওই সময়ের বিরাট আর এই বিরাটের আকাশ-পাতাল তফাৎ। তখন ও শ্রেষ্ঠত্বের পাহাড়ে উঠছিল। আর এই মুহূর্তে ও বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান। জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রডরা তাদের সেরা সময়ের অনেকটা যেমন পিছনে ফেলে এসেছে, তেমনই বিরাট এখন ফর্মের মধ্যগগনে। বিরাট ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে গেলে অর্ধেক কাজ শেষ।

ছয় নম্বরে কে: এটা সব চেয়ে বড় প্রশ্ন— টেস্টে ছয় নম্বরে ভারতের হয়ে ব্যাট হাতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় কাকে দেখা যাবে? আর. অশ্বিন না হার্দিক পাণ্ড্য? কারণ, মিডল অর্ডারে এই জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ সফরে এই মুহূর্তে ভারতীয় দল এই জায়গায় হার্দিক পাণ্ড্য-কে গুরুত্ব দিচ্ছে। হার্দিক ব্যাটের সামনে বল পড়লে অবলীলায় খেলে দেয়। কিন্তু অসুবিধায় পড়ে শর্ট বলের সামনে। তার জন্য, কংক্রিটের পিচে এখন থেকেই ভেজা ক্যাম্বিস বল ছুড়ে অনুশীলন শুরু করুক এই দুর্বলতা কাটাতে। একই সঙ্গে হার্দিককে ঠিক করতে হবে ও বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে দলে থাকতে চায়, না ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে। ওর হাতে ভাল আউটসুইং আছে। উইকেট টু উইকেট বল করে। চতুর্থ সিমার হিসেবে ভাল। কিন্তু ব্যাটিং অলরাউন্ডার হতে গেলে ওকে নেটে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।

বোলারকে সময় দাও: ইংল্যান্ডে কিন্তু বল নড়াচড়া করবে। অর্থাৎ সুইং ও সিম মুভমেন্টের কথা বলছি। ফলে রোহিত শর্মা-সহ অনেককেই মাথায় রাখতে হবে বোলারকে সম্মান দিয়ে বল ছাড়ার ব্যাপারটা। বলের উপরে শেষ পর্যন্ত নজর রাখার পাশাপাশি, বলের একদম কাছে গিয়ে খেলতে হবে। চেতেশ্বর পূজারা ইংল্যান্ড সফরের আগে ইয়র্কশায়ারের হয়ে কাউন্টি খেলবে। ওখানে বল সব চেয়ে বেশি নড়াচড়া করে। ফলে এর সুবিধা পাবে ভারত। কিন্তু পূজারা-কে মাথায় রাখতে হবে অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হতে গিয়ে স্কোরবোর্ডকে সচল না রাখা ভাল ব্যাটসম্যানের কাজ নয়।

বোলিংয়ের বারুদ: আমাদের সময়ে কপিল। তার পরে শ্রীনাথ, তার পরে জাহির খান। এরাই ছিল অতীতে বোলিং আক্রমণের মুখ। কিন্তু এখন দলে ভুবনেশ্বর, বুমরা, শামি, ইশান্ত, উমেশ-এর মতো একাধিক জোরে বোলার রয়েছে। যারা এক নাগাড়ে ১৪০ কিমির উপরে বল করতে পারে। সঙ্গে কুলদীপের মতো ‘রহস্য’ স্পিনার। কেউ এক রকম নয়। এটা একটা বড় সুবিধা। বোলিংয়ে এই রসদ আছে বলেই রবি শাস্ত্রী ও বিরাট সবসময় পাঁচ বোলার নিয়ে নামতে চায়। সুতরাং, শর্ট বল বা ‘চিন’ মিউজিক শোনাতে এলে সেটা বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের দিকেও ছুড়ে দিতে পারে এই ভারতীয় বোলিং। কাজেই টেস্টে এক নম্বর হওয়ার হ্যাটট্রিক করতে গেলে দায়িত্বটা বেশি নিতে হবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। বিশেষ করে হার্দিক পাণ্ড্য-র মতো তরুণদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.