বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনের সিন্দুকে টান।
গত দশ বছরে যা হয়নি, এ বার তাই হল। বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার নিজের রাজ্যের ক্রিকেট সংস্থাতেই বেনজির আর্থিক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার পরিমাণ নাকি দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। গত বার যে সংস্থার প্রায় ১৪ কোটির উদ্বৃত্ত ছিল, এ বার সেই সংস্থায় এই বিপুল অঙ্কের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন সিএবি কর্তারা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলা দলের উন্নতির জন্য যখন নানা ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, বাংলার ক্রিকেটে সাপ্লাই লাইন তৈরির জন্য যেখানে বিদেশ থেকে কোচ এনে বছরে কোটি টাকা ব্যয়ে ভিশন ২০২০ প্রকল্প চালু করা হয়েছে, সেখানে এখন থেকে বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসকদের ব্যয়সঙ্কোচের ভাবনাও ভাবতে হবে।
বৃহস্পতিবার সিএবি-র ফিনান্স কমিটির বৈঠকে গত আর্থিক বছরের যে রিপোর্ট পেশ করা হয়, তাতেই এই ঘাটতির বিষয়টি উঠে এসেছে বলে সিএবি সূত্রের খবর। বরাবরই বছর শেষে উদ্বৃত্ত নিয়ে চলা সিএবি-তে হঠাৎ এমন বেনজির ঘাটতির কথা এ দিন স্বীকার করে নেন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। কিন্তু হঠাৎ কেন এই ঘাটতি? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিসিসিআই থেকে যে বার্ষিক অনুদান আসে, সেটা এ বার এতটাই কম এসেছে যে, মূলত সেই কারণেই এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা কম পাওয়া গিয়েছে বোর্ড থেকে।’’
আসলে বোর্ডের বার্ষিক আয় কম হওয়ায় এ বার তাদের অনুমোদিত সদস্য সংস্থাগুলি প্রত্যেকেই কম অঙ্কের অনুদান পেয়েছে বলে বোর্ডসূত্রের খবর। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রত্যাশিত আয়ের ক্ষেত্রে এ বার সিএবি-র ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন কোষাধ্যক্ষ। যেমন ২০১৪-র আইপিএলে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা ও ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতিস্বীকার করতে হয়েছে তাদের।
পাশাপাশি গত আর্থিক বছর থেকে অবশ্য সিএবি-র ব্যয়ের বহরও বেড়েছে। যেমন গত বছর থেকে ক্রিকেটার তুলে আনার জন্য চালু হয়েছে ভিশন ২০২০ প্রকল্প। সিএবি সূত্রে খবর, যার জন্য নাকি খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। সেই প্রকল্প থেকে অবশ্য এখন পর্যন্ত রঞ্জি স্তরের ক্রিকেটার উঠে আসেনি। বরং বাংলা দলের জন্য এ বার ভিন রাজ্যের ক্রিকেটার আনতে হচ্ছে সিএবি-কে। যে বাংলা দল গত বার রঞ্জি ট্রফিতে হতাশা ছাড়া কিছুই দেয়নি, তাদের জন্য গত মরসুমে প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে সিএবি সূত্রের খবর।
কল্যাণীতে যে নতুন অ্যাকাডেমি তৈরি করা হয়েছে, তার জন্যও প্রচুর ব্যয় হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই সব ব্যয় এ বার থেকে কমানোর প্রস্তাব উঠেছে এ দিনের বৈঠকে।
কিন্তু তা কী করে সম্ভব? রঞ্জি ট্রফির প্রস্তুতি হিসেবে সেপ্টেম্বরে বাংলা দলকে শ্রীলঙ্কা সফরে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে সিএবি-র। অক্টোবরে বড় মাপের আট দলীয় সর্বভারতীয় আমন্ত্রণী টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে ইডেনে।
শিবপুরে যে নতুন দু’টি মাঠ নেওয়া হয়েছে, তাতে পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। চাকারদের শোধরানোর জন্য সারা বছর ধরে যে প্রকল্প শুরু করেছে সিএবি, তাও চালু রাখা হবে। এ ছাড়া এবার থেকে লিগের নথিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সবার বিমা করতে বছরে সাড়ে তেইশ লক্ষ টাকা খরচ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএবি। ক্রিকেটারদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বাড়তি অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতিও কেনা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
এই খরচগুলি এড়ানো কিছুতেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন সিএবি-র এক শীর্ষকর্তা। কোন কোন জায়গায় ব্যয়সঙ্কোচ করা হবে, এ বার তা নিয়েই আলোচনা শুরু হবে বলে জানালেন তিনি।
আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে এই নিয়ে ঝড় উঠতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। সেই সভাতেই পাস হবে এই রিপোর্ট। তবে যাঁর সংস্থার এই বেহাল আর্থিক দশা, সেই প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াই বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানতেন না না এই বেনজির ঘাটতির খবর। কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য, ‘‘নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি অবগত করার। সেই পদ্ধতি মেনেই তাঁকে তা জানানো হবে।’’
তাঁর সাধের সিএবি-র এই দুর্দিনের খবরে ডালমিয়ার কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটাই এখন দেখার।