Advertisement
E-Paper

জিতেও সিন্ধু বলল আরও ভাল খেলতে হবে আমাকে

সিরি ফোর্ট কমপ্লেক্সে রবিবারের ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনের রিটার্নটা নেটে আছড়ে পড়তেই সিন্ধুর উৎসবে মেতে ওঠার দৃশ্যটা আমায় সাড়ে সাত মাস আগের একটা ছবি মনে পড়িয়ে দিল। যে দিন মারিনের কাছে অলিম্পিক্সের ফাইনালে হেরে গিয়েছিল সিন্ধু।

মধুমিতা বিস্ত

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৪২
সেরা: ইন্ডিয়ান ওপেন ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনকে হারানোর পরে উল্লসিত পিভি সিন্ধু। ছবি: পিটিআই

সেরা: ইন্ডিয়ান ওপেন ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনকে হারানোর পরে উল্লসিত পিভি সিন্ধু। ছবি: পিটিআই

সিরি ফোর্ট কমপ্লেক্সে রবিবারের ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনের রিটার্নটা নেটে আছড়ে পড়তেই সিন্ধুর উৎসবে মেতে ওঠার দৃশ্যটা আমায় সাড়ে সাত মাস আগের একটা ছবি মনে পড়িয়ে দিল। যে দিন মারিনের কাছে অলিম্পিক্সের ফাইনালে হেরে গিয়েছিল সিন্ধু। ওর সে দিনের যন্ত্রণা, হতাশা, কষ্টগুলো ও বুঝতে দেয়নি। হাসিমুখে হারটা মেনে নিয়েছিল। রবিবার মারিনকে হারিয়ে এত দিনে নিজের দেশে তার বদলাটা নিল সিন্ধু। তাও ২১-১৯, ২১-১৬ স্ট্রেট গেমে হারানোর দাপট দেখিয়ে।

অনেকে বলবেন, অলিম্পিক্সের সঙ্গে সুপার সিরিজের তুলনা হয় কি? দুটোই তো আলাদা মঞ্চ। তা ছাড়া গত ডিসেম্বরেই তো সিন্ধু দুবাইয়ে মারিনকে হারিয়েছিল। সেটা ঠিকই অলিম্পিক্স আর সুপার সিরিজ আলাদা জায়গা। তবে অলিম্পিক্সের মতো এখানেও কিন্তু লড়াইটা সোজা নয়। তা ছাড়া মারিনকে দুবাইয়ে অতটা ফিট মনে হয়নি। ওর চোটের সমস্যা ছিল। খুব ভাল ফর্মেও ছিল না। রবিবার ইন্ডিয়ান ওপেনের ফাইনালে মারিন তার তুলনায় টপ ফর্মে ছিল। সেমিফাইনালেই বিশ্বের দু’নম্বর ইয়ামাগুচিকে হারিয়েছিল মারিন। আর অলিম্পিক্সের সেই ঐতিহাসিক ফাইনালের পরে দেশে আন্তর্জাতিক কোনও মঞ্চে দু’জনের এই মুখোমুখি হওয়া। তাই বদলার ব্যাপারটা ভেসে ওঠা স্বাভাবিক। অনেকে তাই সিন্ধুর সঙ্গে তুমুল লড়াই হবে ফাইনালে ভেবেছিলেন। তিন গেম পর্যন্ত লড়াই হতে পারে ধরা হয়েছিল। সিন্ধু কিন্তু অত দূর যেতেই দেয়নি লড়াইটা। তার অনেক আগেই প্রথম ইন্ডিয়ান ওপেন সুপার সিরিজ ট্রফি জেতাটা নিশ্চত করে ফেলেছে।

কেন সিন্ধু রিও অলিম্পিক্সে পারেনি আর কী ভাবে রবিবারের ফাইনালে এত দাপটে মারিনকে হারিয়ে দিল প্রশ্ন উঠতে পারে। আমার মনে হয় ইন্ডিয়ান ওপেন জেতার পিছনে সিন্ধুর দুটো স্ট্র্যাটেজি দারুণ ভাবে কাজে দিয়েছে। এক, মারিনকে বেশি নড়াচড়া করার সুযোগ না দিয়ে সেন্টারলাইন বরাবর খেলে যাওয়া। কেন না মারিন অ্যাঙ্গল শটে দারুণ। ওকে প্লেসিং করার সুযোগ দিলে আর উপায় নেই। ঠিক পয়েন্ট তুলে নেবে। সিন্ধু ওকে সেই সুযোগটাই দেয়নি। বিশেষ করে দ্বিতীয় গেমে।

দুই, সিন্ধু ওর নেট প্লে খুব উন্নতি করেছে। নেট প্লে-তে ভেরিয়েশনও বেড়েছে। ক্রসনেট, ড্রিবলগুলো আরও ধারালো হয়েছে। ক্যারোলিনা তাই ওর বড় অস্ত্র, নেট প্লে-তে সুবিধে করতে পারেনি। কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আবার যখনই কোর্টের পিছনের দিকে খেলাতে গিয়েছে তখনই সিন্ধু ওর উচ্চতার পুরো সুবিধে নিয়ে স্ম্যাশ বা প্লেসিং করে পয়েন্ট তুলে নিয়েছে।

সিন্ধুর আর একটা সুবিধে ছিল। ঘরের মাঠের সমর্থন। সিরি ফোর্ট কমপ্লেক্সে সিন্ধু..সিন্ধু..সিন্ধু... চিৎকারটা ক্যারোলিনাকে আরও চাপে ফেলে দিয়েছিল। তা ছাড়া সিন্ধুর ধারাবাহিকতা এখন অনেক বেড়েছে। বেড়েছে অভিজ্ঞতাও। যে কারণে আগে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে টানা ফর্ম আর ফিটনেস ধরে রাখতে ওকে যে সমস্যায় পড়তে হত সেটা এখন আর দেখা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: রিও-র বদলা দিল্লিতে নিয়ে পাল্টা গর্জন সিন্ধুর

তা ছাড়া রিওর সেই মহাম্যাচের সঙ্গে যদি তুলনা করা হয় তা হলে দেখা যাবে এই ম্যাচটায় কিন্তু অত র‌্যালি হয়নি। কারণ শাটল খুব দ্রুত গতিতে ছুটছিল। স্টেডিয়ামের পরিবেশের উপর মানে কতটা হাওয়া হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে শাটলের গতি। ফাইনালে এই কারণেই সিন্ধু বা মারিন শাটল তুলে খেলার চেষ্টা করলেই আনফোর্সড এরর হচ্ছিল। সিন্ধু ব্যাপারটা খুব ভাল সামলেছে। শাটলকে কোর্টে বেশি তুলে খেলার চেষ্টা করেনি। বেশির ভাগ শট নেটে রেখেছে। পুশ করেছে। ফোরহ্যান্ডে খেলেছে। আর ওর দুর্বল যে জায়গাটা অর্থাৎ, বডিস্ম্যাশ করতে দেয়নি মারিনকে।

ফাইনালের আগেই সিন্ধুর সঙ্গে কথা হয়েছিল। বলেছিলাম, তোর তো হারানোর কিছু নেই। খোলা মনে খেলবি। ওর এটা একটা বিরাট গুণ। কখনও চাপে থাকে না। উপভোগ করে খেলতে পারে যে কোনও পরিস্থিতিতে। প্রত্যাশাক চাপের কোনও প্রভাব তাই ওর খেলায় পড়তে দেয়নি। সিরি ফোর্টেই আমার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি আছে। ফাইনালে জেতার পর ফের দেখা হল, চেঞ্জিং রুমেও কথা হল সিন্ধুর সঙ্গে। ওকে কয়েকটা টেকনিক্যাল পয়েন্ট নিয়ে পরামর্শ দিলাম। বললাম হাফস্ম্যাশটা আরও ভাল করতে হবে। তোর এই একটা জিনিস কিন্তু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। হাসিমুখে বলল, ‘‘চেষ্টা করব দিদি। আমায় আরও ভাল খেলতে হবে।’’ আমার অ্যাকাডেমির বাচ্চাদের সঙ্গে পরে ছবি তুলল। একটা আলাদা স্বস্তি যেন ছুঁয়ে যাচ্ছিল ওর মুখে, অভিব্যক্তিতে।

মনে হল, দেশের কোর্টে অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়নকে হারানো এই সিন্ধু বিশ্বের আর কোনও চ্যালেঞ্জের তোয়াক্কা করে না।

PV Sindhu Carolina Marin badminton India Open Super Series
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy