Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
জিতে দু’নম্বরে মোহনবাগান

অপ্রতিরোধ্য গঞ্জালেস, কলিনাসের চোটে চিন্তা

সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন শুনে মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনা প্রথমে বললেন, ‘‘ডুরান্ড নকআউট প্রতিযোগিতা। আর এটা লিগ।’’

হুঙ্কার: জোড়া গোল করে জয়ের নায়ক গঞ্জালেস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

হুঙ্কার: জোড়া গোল করে জয়ের নায়ক গঞ্জালেস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে তিনি ছিলেন না। কল্যাণী স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সের কোণায় বসে তাই খেলা দেখছিলেন গোকুলমের সেই ক্যারিবিয়ান ডিফেন্ডার আন্দ্রে এতিয়েন। দেখছিলেন খেলা শেষে মাঠের এক প্রান্তে গিয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের অভিবাদন গ্রহণ করছেন এ দিনের জোড়া গোলদাতা ফ্রান গঞ্জালেস। সঙ্গী ড্যানিয়েল সাইরাস, ফ্রান মোরান্তে ও জোসেবা বেইতিয়া।

সেই দিকে তাকিয়ে এতিয়েন সমালোচকের সুরেই বললেন, ‘‘ডুরান্ডে এই মোহনবাগানকে হারিয়েই ট্রফি জিতেছিলাম। আর আজ রক্ষণের ভুলে হেরে গেলাম। মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোলের সময় গঞ্জালেসকে কেউ নজরেই রাখল না! আর জিততে গেলে তো গোল করতে হবে! সেটা সমতা ফিরিয়ে আর করতে পারলাম না।’’

তা হলে কি ডুরান্ড ফাইনালের হারের বদলা হল? সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন শুনে মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনা প্রথমে বললেন, ‘‘ডুরান্ড নকআউট প্রতিযোগিতা। আর এটা লিগ।’’ পরে বললেন, ‘‘এই ম্যাচটা ডুরান্ডের উল্টো। সে বার আমরা পিছিয়ে গিয়ে গোল শোধ করেও হেরেছিলাম। আজ তার উল্টোটাই হল।’’

চার মাস আগে গোকুলমের যে মার্কাস জোসেফকে আটকাতে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গিয়েছিল মোহনবাগান রক্ষণে, সেই সবুজ-মেরুন শিবিরের রক্ষণ আজ সসম্মানে উত্তীর্ণ। তাঁকে ও হেনরি কিসেক্কাকে ‘ডাবল কভারিং’ করে নির্বিষ করে দিয়েছিলেন কিবু। মার্কাসকে প্রথমে ধরছিলেন সাহিল বা গঞ্জালেস। তাঁকে টপকে বেরোলেই সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন ড্যানিয়েল সাইরাস। কিবু জানতেন, গোকুলম ৪-৪-২ ছকে শুরু করলেও দ্রুত ৩-৪-৩ হয়ে যায়। সেই সময়ে তাদের সাইডব্যাক মাঝমাঠে চলে যাওয়ায় অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় ওই জায়গায়। সেখানেই নিশানা বানিয়ে কেরলের দলটিকে এ দিন শুরু থেকে চেপে ধরেছিল মোহনবাগান।

দুই প্রান্ত থেকে বার বার বিপক্ষ রক্ষণে চাপ দিচ্ছিলেন মোহনবাগানের দুই উইং হাফ নংদম্বা নওরেম ও জুলেন কলিনাস। ২১ মিনিটে ডান দিক থেকে কলিনাসের বাড়ানো বল ধরে প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন সুহের। কিন্তু বক্সের মধ্যেই তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন জাস্টিন জর্জ। রেফারি এ ক্ষেত্রে কেন পেনাল্টি দেননি তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মোহনবাগান শিবিরে। তার পরের মিনিটেই ফের ডান দিক থেকে বল বাড়িয়েছিলেন কলিনাস। মোহনবাগান রাইট ব্যাক আশুতোষ মেহতা বল ধরে এগোনোর সময়ে তাঁকে অবৈধ ভাবে আটকেছিলেন গোকুলম গোলরক্ষক উবেইদ। রেফারি এ বার পেনাল্টি দিলে গোল করেন ফ্রান গঞ্জালেস।

গোল খেয়ে গোকুলম পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার বদলে মাথা গরম করা শুরু করে। আর প্রতি-আক্রমণ ভিত্তিক রণকৌশল নেওয়ায় গোলের দরজা খুলতে পারেননি মার্কাস জোসেফ, হেনরি কিসেক্কারা। আক্রমণে লোক বাড়াতে পারছিলেন না তাঁরা। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে মোহনবাগান বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন ক্ষেত্রিমায়ুম মালেমগানবা মিতেই। তাঁকে ফাউল করেন কলিনাস। রেফারি গোকুলমকে পেনাল্টি দিলে সমতা ফেরান মার্কাস।

দ্বিতীয়ার্ধে ৪৮ মিনিটে জোসেবা বেইতিয়ার কর্নারে দুর্দান্ত হেডে জয়সূচক গোল করেন এ দিন জয়ের নায়ক গঞ্জালেস। চলতি আই লিগে এই নিয়ে পাঁচ গোল হয়ে গেল তাঁর। স্পেনীয় এই ফুটবলারের নাছোড় মনোভাব, মাঝমাঠে নেতৃত্ব দিয়ে খেলা, দুরন্ত মার্কিং ও ট্যাকলের জন্যই এ দিন দাঁড়াতে পারেনি গোকুলম।

এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ৬০ মিনিটে বাঁ হাটুতে চোট পেয়ে জুলেন কলিনাস মাঠ ছাড়েন। আর ডার্বির আগে সেই চোটই চিন্তা বাড়িয়েছে মোহনবাগান শিবিরে। কলিনাসের বদলে চুলোভা নামায় শেষ ৩০ মিনিট রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিল মোহনবাগান। সেই সুযোগেই জাঁকিয়ে বসে গোকুলম। কিন্তু এই সময়ে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠেন মোহনবাগান গোলকিপার শঙ্কর রায়। ম্যাচের সেরাও তিনি। এই সময়ে বিপক্ষের বেশ কিছু গোলের সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। ম্যাচের একদম শেষ লগ্নে মুথু ইরুলান্ডির গোলের প্রয়াস ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন শঙ্কর। মুথু সেই বলেই পাল্টা লাথি মেরে গোল করেছিলেন। রেফারি সেই গোল বাতিল করে দেন। আই লিগে প্রথম বার ম্যাচ সেরা হয়ে সেই পুরস্কার মাকে উৎসর্গ করেন শঙ্কর।

চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট মোহনবাগানের। জিতলেও রক্ষণে ‘মার্কিং’ নিয়ে চিন্তা থাকছে। এ দিন জোড়া হলুদ কার্ড দেখায় ডার্বিতে নেই গুরজিন্দরও। তাই জয়ের মাঝেও চিন্তার আবহ মোহনবাগানে।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তে, ড্যানিয়েল সাইরাস, গুরজিন্দর কুমার, ফ্রান গঞ্জালেস, শেখ সাহিল, জুলেন কলিনাস (লালরাম চুলোভা), জোসেবা বেইতিয়া, নংদাম্বা নওরেম (শুভ ঘোষ), সুহের ভি পি।

গোকুলম এফসি: উবেইদ, নওচা সিংহ (রাহুল কেপি), জাস্টিন জর্জ, হারুন আমিরি, মহম্মদ ইরশাদ, নাথানিয়েল গার্সিয়া, মুথু ইরুলান্ডি, সেবাস্টিয়ান থাংমুয়ানসাং (লালরোমাউইয়া) ক্ষেত্রিমায়ুম মিতেই (মহম্মদ সালাহ), হেনরি কিসেক্কা, মার্কাস জোসেফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football I Legaue 2019 Mohun Bagan Gokulam FC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE