টিমের তরুণ ফুটবলারদের শ্যুটিং প্র্যাকটিস করাচ্ছেন।
মার্কাস র্যাশফোর্ডকে টিপস দিচ্ছেন কী করে মাঠে আরও ধারালো হয়ে উঠতে হবে।
পল পোগবার সঙ্গে ছবি পোস্ট করে বলছেন, ‘‘আমার জার্সি বিক্রি করে তোমাকে আনা হয়েছে।’’
ফ্রান্স এ সমস্ত কিছুর আগেই সাক্ষী থেকেছে। ইতালি দেখেছে। স্পেনও। এ বার ইংল্যান্ডের পালা।
খুব বেশি দিন হয়নি তাঁর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে আসা। কিন্তু এর মধ্যেই অনায়াসে গ্যালারি ভরিয়ে তুলছেন। বাকি ফুটবলারদের অনেক পিছনে ফেলে তাঁর জার্সি ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে ৭৬ মিলিয়ন। যে হোটেলে উঠছেন পিছনে সেলফির লম্বা লাইন লেগে যাচ্ছে ভক্তদের।
কারণ তাঁর নাম যে, জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ।
যিনি মাঠে যতটা দাপুটে মাঠের বাইরে ঠিক ততটাই বড় এক হেঁয়ালি।
এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে মাত্র দুটো ম্যাচ খেলেছেন ইউনাইটেড জার্সিতে। কিন্তু রেড ডেভিলরা এখনই আক্রান্ত ইব্রা-জ্বরে। আর হবেনই বা না কেন? এরিক কঁতোনা, জর্জ বেস্ট, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, ওয়েন রুনি— অনেক স্মরণীয় নাম গায়ে দিয়েছে ইউনাইটেড জার্সি। কিন্তু ইব্রা যে সবার চেয়ে আলাদা। তিনি শুধু ইউনাইটেডের রাজা হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান না। হতে চান ম্যাঞ্চেস্টারের ঈশ্বর। ‘‘রাজা কেন? আমি ম্যাঞ্চেস্টারের ঈশ্বর হতে চাই,’’ বলেছেন তিনি।
সান সিরো, ন্যু কাম্প। বিশ্ব ফুটবলের প্রায় সব ওপেরা হাউসে খেলেছেন ইব্রা। কিন্তু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের মতো আবেগ আগে কোথাও নাকি পাননি। তাঁর এই মুহূর্তের দুরন্ত ফর্মের পিছনে যা অন্যতম কারণ। ইব্রা বলছেন, ‘‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের আবহাওয়াটাই আলাদা। আপনাআপনি ফুটবলাররা তেতে যায়। এ রকম আমি আগে কোনও মাঠে পাইনি।’’
প্রথম দু’ম্যাচে দুটো জয়। ছয়ে ছয় করে লিগ তালিকায় দুইয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু তাতেও সুইডিশ স্ট্রাইকার খুশি নন। তাঁর মতে ইউনাইটেডের ক্ষমতা আছে আরও বিধ্বংসী হওয়ার। ‘‘হ্যাঁ, আমরা সাউদাম্পটনকে হারিয়েছি। কিন্তু এই দলের ক্ষমতা আছে আরও অনেক ভাল খেলার। এখনও আমাদের দল একটা পাজলের মতো। সব কিছুই নতুন। তাই বোঝাপড়ায় আর একটু সময় লাগবে,’’ বলেন তিনি।
স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন কোচের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে গত কয়েক বছরে ইউনাইটেডের মধ্যে সেই দাপুটে ভাবটাই চলে গিয়েছে। আগে বেশির ভাগ দল ওল্ড ট্র্যাফোর্ড থেকে খালি হাতে ফিরত। কিন্তু বর্তমানে প্রতিপক্ষরা আর ভয় পায় না ইউনাইটেডকে। ইব্রার লক্ষ্য, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে সেই ভয়ের দুর্গে পরিণত করা বিপক্ষের কাছে। যেখানে মাথা নিচু করে প্রবেশ করবে প্রতিপক্ষ। আবার মাথা নিচু করেই তাদের প্রস্থান ঘটবে। ‘‘আমি ইউনাইটেডের মধ্যে সেই দাপুটে মানসিকতা ভরে দিতে চাই। যত বয়স বাড়ে তত বেশি তোমার দায়িত্বও বাড়ে। আমাকে নিয়ে মাঝেমাঝে যা লেখা হয় সেই সব না জেনেই হয়। কিন্তু আমার তাতে কিছু যায়-আসে না,’’ বলেন ইউনাইটেডের বিখ্যাত নয় নম্বর জার্সি।
প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় এক নম্বরে ইব্রা। শনিবার হাল সিটির বিরুদ্ধে গোল করতে পারলে ইউনাইটেডের ৯১ বছরের ইতিহাসে টানা চার ম্যাচে গোল করার রেকর্ড ছোঁবেন। কিন্তু ব্যক্তিগত মাইলফলকের থেকেও তাঁর কাছে বেশি মূল্যবান দলের রেজাল্ট। ‘‘কোচ আমাকে যা বলেন সেটা আমি পালন করার চেষ্টা করি। গোল করে হোক বা গোল করিয়ে, আমি সব সময় চাই দলকে সাহায্য করতে। আমার কাছে দল আগে।’’
মাঠের বাইরে ইব্রা এখন হয়ে উঠেছেন ইউনাইটেডের তরুণ ব্রিগেডের মেন্টর। ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রতিদিন নাকি র্যাশফোর্ড, লিনগার্ডের মতো তরুণ তারকারা সুইডিশ স্ট্রাইকারের থেকে শিখছেন কী করে শ্যুটিং আর ফিনিশিংয়ে উন্নতি করা যায়। রুনির মতো ইব্রাও এখন ড্রেসিংরুমে সমান প্রভাবশালী।
হাল সিটির বিরুদ্ধে ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে দুটো করে ট্রেনিং সেশন করাচ্ছেন মোরিনহো। ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’-এর অধীনে ইব্রার যদি পৌষ মাস হয়, তা হলে ফরাসি ফরোয়ার্ড অ্যান্টনি মার্শালের সর্বনাশ। সুইডিশ স্ট্রাইকার আসায় নিজের পছন্দের নয় নম্বর জার্সি হারিয়েছেন। মাঠে হারিয়েছেন নিজের পজিশনও। ইব্রাকে সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলানো হচ্ছে বলে মার্শালকে উইংয়ে ঠেলে দিয়েছেন মোরিনহো। সঙ্গে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে, ফর্ম ঠিক না হলে তাঁর প্রথম দলে জায়গা হবে না।
কিন্তু ইউনাইটেড ভক্তরা বেশি চিন্তিত নন। কারণ ইব্রা ফর্মে থাকলে আর কীসের চিন্তা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy