Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্লেজিং ছেড়ে আলিঙ্গন, নতুন সংস্কৃতির খোঁজ

স্মিথ, ওয়ার্নার, ব্যানক্রফ্‌টদের সেই শিরিষ কাগজ দিয়ে বল ঘষার ছবি যে দিন দেখে লজ্জিত হয়েছিল তাঁদের দেশ, সে দিন থেকেই পাল্টে গিয়েছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট।

রিকি পন্টিং

রিকি পন্টিং

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ০৪:৩৪
Share: Save:

এই বিশ্বকাপে সব চেয়ে বেশি করে নজর থাকবে কাদের উপরে? না, মোটেও বিরাট কোহালির ভারত নয়। বরং এই প্রশ্নের উত্তর, অস্ট্রেলিয়া। বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির জেরে নির্বাসিত দুই তারকা স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে উত্তাল হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া।

এই দু’জনে ফিরছেন বিশ্বকাপেই। তা-ও আবার সেই ফেরার মঞ্চ হচ্ছে ইংল্যান্ড, যেখানে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা কখনওই খুব বেশি বন্ধু পেয়েছেন বলে শোনা যায়নি। বরং দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা এবং রেষারেষির ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাশেজের লড়াই। শনিবারেই প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে চিরশত্রু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ওয়ার্নার এবং স্মিথ আঁচ পেয়ে গেলেন, তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। সাউদাম্পটনে এই ম্যাচে দু’জনের উদ্দেশেই ধিক্কার ধ্বনি উড়ে এল ইংরেজ দর্শকদের দিক থেকে।

স্মিথ, ওয়ার্নার, ব্যানক্রফ্‌টদের সেই শিরিষ কাগজ দিয়ে বল ঘষার ছবি যে দিন দেখে লজ্জিত হয়েছিল তাঁদের দেশ, সে দিন থেকেই পাল্টে গিয়েছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট। আগে যাঁরা প্রতিপক্ষের দিকে বাছাই করা শব্দ ছুড়ে দিতেন, তাঁরাই এখন চুপচাপ ভদ্রলোকের ক্রিকেট খেলছেন। স্লেজিংয়ের পরিবর্তে কোলাকুলি করছে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। বল-বিকৃতি পর্বের আগে পর্যন্ত বার বার কথা উঠেছে, অস্ট্রেলীয়রা স্লেজিং নিয়ে সীমানা অতিক্রম করে ফেলছে। এখন তা নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করার সময়। তাদের বর্তমান কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের কথাই ধরা যাক। স্টিভ ওয়ের দলের ওপেনার ছিলেন তিনি। সেই দল, যারা স্লেজিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে মানসিক ভাবে চূর্ণ করার ব্রত নিয়েছিল। তাঁকেই এখন কোচ হিসেবে ‘ভদ্রসভ্য’ অস্ট্রেলীয় দল গড়ে তোলার শপথ নিতে হচ্ছে।

এমনকি, ওয়ার্নার, যাঁকে সব চেয়ে আগ্রাসী অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার হিসেবে চিনত বিশ্ব, তাঁর মুখেও ঘুরছে করমর্দন আর আলিঙ্গনের কথা। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহলে জল্পনা, নিজের দেশের মানুষের মন জয় করার লক্ষ্যে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করছেন ওয়ার্নার। ইংল্যান্ডে পৌঁছতেই ল্যাঙ্গারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, স্মিথ এবং ওয়ার্নারকে বিদ্রুপের মুখে পড়তে হলে কী ভাবে সামলাবেন? তিনি বলে দেন, ‘‘ওরাও মানুষ। জীবনে খুব কম ব্যক্তির সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে, যে ধিক্কার শুনে খুব খুশি হয়েছে। আমাদের কাজ হবে ওদের আগলানো। ওদের কাঁধে হাত রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে হবে।’’ ল্যাঙ্গার নিশ্চয়ই দেখে খুশি হয়েছেন যে, ধিকৃত হওয়ার পরেও স্মিথ দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে নিজেকে পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ল্যাঙ্গার এই দুঃসময়ে পাশে পাচ্ছেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থকে। তাঁর উপস্থিতিই অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমের চেহারা ফের পাল্টে দিতে পারে। বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির জেরে ডারেন লেম্যান পদত্যাগ করার পরে তিনি রিকি পন্টিংই গিয়ে বলেন ল্যাঙ্গারকে, ‘‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটকে এক জনই এই অবস্থার মধ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেটা তুমি, বন্ধু।’’ ল্যাঙ্গার দায়িত্ব নেওয়ার পরে পন্টিংকেও দলের সঙ্গে যুক্ত করেন। গত পাঁচটি বিশ্বকাপের চারটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর সেই বিজয়রথের প্রধান চালকই ছিলেন পন্টিং। তিনি নিজে স্বীকারও করেছেন সে কথা। ‘‘আমার মনে হয় সফল বিশ্বকাপ রেকর্ড থাকার জন্যই আমাকে দলের সঙ্গে রাখা হয়েছে।’’ তার পরেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার খুব গর্বের ক্রিকেট ইতিহাস রয়েছে। এখনকার এই দলটাও এই ইতিহাস সম্পর্কে জানে। পাশাপাশি, এই দলের সামনে নিজেদের হাতে ইতিহাস তৈরির সুযোগও থাকছে। বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের গর্ব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে ওদের সকলের সামনে।’’ নির্বোধ না হলে কেউ বিশ্বকাপের ফেভারিট তালিকা থেকে অস্ট্রেলিয়াকে বাদ দিতে চাইবে না। তা সে যতই ধিক্কার ধ্বনী উঠুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Australia Sledging Sandpaper Gate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE