Advertisement
E-Paper

ভাল কিপার যদি কার্তিক হয়, পন্থ তবে টেস্টে কেন

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল কার্তিকের। সেই ২০০৪ সালে। তার পরে আবার ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৫
দীনেশ কার্তিক।

দীনেশ কার্তিক।

বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দলে একটা নাম দেখে সত্যি চমকে গিয়েছি। দীনেশ কার্তিক! আমি এখনও ভেবে পাচ্ছি না, কী করে ঋষভ পন্থের জায়গায় দলে নেওয়া হল কার্তিককে।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আগেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল কার্তিকের। সেই ২০০৪ সালে। তার পরে আবার ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে। ধোনি কবে অবসর নেবে, এই নিয়ে তো প্রচুর আলোচনা চলছে।

কিন্তু কার্তিককে নিয়ে সে প্রশ্নটা কেউ করছেন না। শুধু তাই নয়, প্রায় ৩৪ বছর বয়সি এক জন ক্রিকেটারকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাকে কি না বেশির ভাগ ম্যাচই বসে থাকতে হবে মাঠের বাইরে। সত্যিই অবাক হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত বটে।

আরও পড়ুন: রায়ুডু-পন্থ নয়, বিশ্বকাপের বিমানে উঠছেন কার্তিক-শঙ্কর-রাহুল

জাতীয় নির্বাচক হিসেবে অনেক দিন দায়িত্বে ছিলাম বলে জানি, কী ভাবে শেষ মুহূর্তে প্রত্যাশিত দলে অনেক নাটকীয় পরিবর্তন হয়। আমাদের সময়ও হয়েছে। একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ১৯৯৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দল নির্বাচন। তার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম বিদেশ সফরে গিয়েছিল ভিভিএস লক্ষ্মণ। কিন্তু সাফল্য পায়নি। এর পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারে তখন সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়। সেখানে লক্ষ্মণকে জায়গা করে দেওয়া সমস্যা হচ্ছিল। তার সঙ্গে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতা। কিন্তু আমরা জানতাম, লক্ষ্মণ কতটা ভাল ব্যাটসম্যান। তাই চেয়েছিলাম, লক্ষ্মণ যেন দলে থাকে।

দল নির্বাচনের আগের রাতে আমরা, নির্বাচকরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ঠিক করি, লক্ষ্মণকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওপেনার করে পাঠানো হবে। নভজ্যোৎ সিংহ সিঁধুর সঙ্গে ওপেন করবে ও। সেই অঙ্কেই আমরা জাতীয় দলে রেখে দিয়েছিলাম লক্ষ্মণকে। তার পরে বাকিটা ইতিহাস। এ বারের বিশ্বকাপ দলটা দেখে মনে প্রশ্ন জাগছে, পন্থকে কি কোনও ভাবে দলে জায়গা করে দেওয়া যেত না? প্রতিভাকে তো যে কোনও মূল্যে সুযোগ করে দিতে হবে।

আমি জানি না, নির্বাচকমণ্ডলীর ওপর বাইরে থেকে কোনও চাপ ছিল কি না। কার্তিককে দলে রাখার জন্য নির্বাচক প্রধান এম এস কে প্রসাদ যে যুক্তি দিয়েছে, তার চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। প্রসাদ বলেছে, পন্থ ছিটকে গিয়েছে কিপিংয়ের জন্য। আমার প্রশ্ন, কার্তিক যদি এত ভাল কিপারই হয়, তা হলে ওকে কেন টেস্টে কিপিং করানো হচ্ছে না? কেন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় ঋষভ কিপিং করছে?

৫০ ওভারের ম্যাচে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩০০টা বৈধ ডেলিভারি ধরার জন্য তৈরি থাকতে হয় এক জন কিপারকে। টেস্টে প্রতিদিন ৯০ ওভার, অর্থাৎ ৫৪০ ডেলিভারির জন্য তৈরি থাকতে হয় এক জন কিপারকে! যে টেস্টে কিপিং করতে পারে, সে ওয়ান ডে-তে পারে না, এ রকম হাস্যকর যুক্তি কোনও দিন শুনিনি। বরং উল্টোটাই তো শুনে এসেছি। টেস্টে দরকার বিশেষজ্ঞ কিপার আর ওয়ান ডে-তে তাকেই নেওয়া হয়, যে ব্যাটটা একটু ভাল করতে পারে।

তা ছাড়া আমি বলব, কিপার হিসেবে অনেক উন্নতি করেছে পন্থ। ওর পায়ের নড়াচড়া ভাল হচ্ছে। আইপিএলেও দেখলাম, ভাল ক্যাচ ধরছে। এই অবস্থায় ওকে বিশ্বকাপে না নিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। ব্যাটসম্যান হিসেবেও পন্থ যে এগিয়ে থাকবে কার্তিকের চেয়ে, তা বলার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সেঞ্চুরি আছে ছেলেটার। যে কোনও সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। সব মিলিয়ে যে কোনও দিন কার্তিকের চেয়ে এগিয়ে থাকবে পন্থ।

নির্বাচকদের মাথায় রাখতে হয়, কোন পরিস্থিতিতে কোন ক্রিকেটারকে কাজে লাগাতে হবে। একটা উদাহরণ দিই। ১৯৯৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফর। প্রথম টেস্টে দেবাশিস মোহান্তিকে খেলানোর কথা ভেবেছিল তৎকালীন কোচ মদন লাল। আমার সঙ্গে টেস্টের আগের রাতে ফোনে কথা হয় মদনের। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে মদনকে পরামর্শ দিই মোহান্তিকে না খেলানোর। কারণ কলম্বোর প্রেমদাসা স্টেডিয়াম ব্যাটিংয়ের স্বর্গ। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ন’শোর ওপর রান করে। জয়সূর্য ট্রিপল সেঞ্চুরি করে। ও রকম একটা পিচে মোহান্তির অভিষেক হলে ওর আত্মবিশ্বাস শেষ হয়ে যেত। পরের টেস্টে মোহান্তির অভিষেক হয় আর ও জয়সূর্যকে ফিরিয়ে দেয়।

প্রসাদদেরও বোঝা উচিত ছিল, ইংল্যান্ডের জন্য কাকে দলে রাখা প্রয়োজন ছিল, আর কাকে নয়।

Cricket ICC Cricket World Cup 2019 India Dinesh Karthik Rishabh Pant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy