দুই অস্ত্র কাতসুমি এবং কর্নেলের সঙ্গে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন।
প্রশ্ন: আপনি এবং আপনার টিমের অনেকেরই মাসের পর মাস মাইনে বকেয়া। তাতেও আই লিগ রানার্স, এএফসি-র নক আউট পর্বে পৌঁছে গিয়েছে টিম। ফেড কাপ জিততে চলেছেন। মোটিভেশন পাচ্ছেন কী ভাবে? রসায়নটা কী?
সঞ্জয়: কর্তাদের উপর সবার ভরসা। টিমের একাত্মতা। আর মানিয়ে নেওয়ার গুণ। একটাই মন্ত্র, যত সমস্যাই থাক, খেলায় যেন প্রভাব না পরে। এটাই আসল রসায়ন। আমার কথা বাদ দিন। ফুটবলারদের কথা ভাবুন তো? জানি না ওদের কার কত মাসের বেতন বাকি রয়েছে। আমাকে কয়েক বার এসে যে বলেনি তা নয়। ব্যাস, এই পর্যন্ত। কিন্তু কখনও বেতন পাচ্ছে না বলে সমস্যা তৈরি করেনি। ওদের কাছে কৃতজ্ঞ। অন্য অনেক ক্লাবে হলে এটা নিয়ে হইচই হত। বেঁকে বসত ফুটবলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট টিমের আর্থিক দাবি মানা হয়নি বলে ক্রিকেটাররা তো ট্যুর বাতিল করেই ফিরে গিয়েছিল। গ্লেন, লুসিয়ানোর পরিবার দেশে রয়েছে। কাতসুমি-সনির পরিবার আবার এখানেই থাকে। ফুটবল খেলেই তো ওরা টাকা রোজগার করে। তবে ক্লাব কর্তারা ওদের আশ্বস্ত করেছেন, বেতন দিতে দেরি হলেও টাকা মার যাবে না। স্পনসর নেই। তা সত্ত্বেও টুটু দা-রা তো অনেক করছেন।
প্র: আই লিগ জেতার পরের বছর একটা দলের এরকম আর্থিক সমস্যা হলে বাকিদের কী হবে?
সঞ্জয়: সত্যি কথা বললে তো শাস্তি পেতে হবে। চুপ থাকতেও তো পারি না। আমার তো মনে হয় এ সব একটা চক্রান্ত। ভারতীয় ফুটবলের একটা গোষ্ঠী একটা জায়গায় বাঁধা পড়ে গিয়েছে, সেখান থেকে আর বেরোতে পারছে না। আই লিগ, ফেডারেশন কাপ বা এই যে আমরা এএফসি কাপ খেলছি, এর বিপণন কোথায়! আইএসএলের যা প্রচার হয় তার এক শতাংশও তো হচ্ছে না। চার্চিল ব্রাদার্সের টিমের কী হাল হয়েছে, যারা একটা সময় ভারতীয় ফুটবলের বড় অক্সিজেন ছিল। রাংদাজিয়েদ গত বছর কী ভাল খেলল, এ বছর নাম তুলে নিতে বাধ্য হল। তারও আগে ইউনাইটেড স্পোর্টস হারিয়েই গেল। এ সব ভাবলে হতাশ লাগে।
প্র: যখন ক্লাবগুলো বিদেশি কোচ নিয়ে লাফালাফি করছে, আপনি তখন দেখিয়ে দিয়েছেন সাফল্য পেতে হলে বিদেশি কোচ না হলেও চলে!
সঞ্জয়: বিদেশি বা দেশি কোচ যেই হোন না কেন, একটু সময় তো দিতেই হবে তাঁকে। বিশুদা (ইস্টবেঙ্গলের পদত্যাগী কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য) তো খুব খারাপ রেজাল্ট দেয়নি। ফেডারেশন কাপেও তো প্রমাণ করার সুযোগ ছিল। ও যদি একটু সময় পেত হয়তো অন্য রকম কিছু ঘটতে পারত। যাই হোক অন্য ক্লাব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমার ক্লাবের কর্তারা আমার উপর আস্থা রেখেছেন। আই লিগ অল্পের জন্য পাইনি। এখন যদি ফেডারেশন কাপও না দিতে পারি, তবে সেটা বড় ধাক্কা হবে আমার কোচিং জীবনে।
প্র: সবাই তো ধরেই নিয়েছে, ফেড কাপটা এ বার কলকাতাতেই আসছে!
সঞ্জয়: সবাই কী ধরল সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সবাই তো ভেবেছিল আমরা আই লিগ পাব। পেয়েছি? চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে এখনও সামনে দু’টি বড় হার্ডল টপকাতে হবে। আগে শনিবারের ম্যাচটা জিতি, তার পর তো ফাইনাল। কোন দলকে ফাইনালে পাব সেটাও জানি না। সব কিছু এত সোজা নয়। তবে হ্যাঁ, পুরো টিম ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তেতে রয়েছে। কারণ এই ট্রফি না পেলে গোটা মরসুমে এত লড়াইয়ের নিটফল শেষ পর্যন্ত জিরো হয়েই থাকবে। এখানে তো ট্রফি ছাড়া অন্য কোনও কিছুর কোনও মূল্য নেই। কেউ মনেও রাখবে না। সে টিম যত ভালই ফুটবল খেলুক না কেন! ট্রফি না পেলে ভাল ফুটবলের কোনও দাম থাকে না।
প্র: হোম ম্যাচে ৫-০ এগিয়ে। তা সত্ত্বেও শিলংকে বড় হার্ডল বলছেন?
সঞ্জয়: অবশ্যই। ফুটবলে অনেক অঘটন হয়। আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। শিলং পাহাড়ে সব সময়ই ভাল খেলে। ম্যাচটা আমরা জিততে চাই।
প্র: আপনার টিমের শক্তি কী?
সঞ্জয়: আমার টিমের শক্তি অবশ্যই একতা। টিমগেম খেলে আমার ছেলেরা। ব্যক্তিগত দক্ষতাও রয়েছে। সনি, জেজেরা সেটা করছে। এ বছর কিংশুকও ভাল খেলেছে। দেবজিৎ-ও অসাধারণ। তবে ধারাবাহিক ভাবে সাফল্য পেতে হলে টিমগেম খেলতেই হবে। গত বছর থেকে ধরলে আমাদের ধারাবাহিক সাফল্যের পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য টিমের চেয়ে অনেক ভাল।
প্র: পরের মরসুম নিয়ে কিছু ভাবলেন?
সঞ্জয়: আরে এখনই কী! ফেড কাপ চলছে। এএফসি-র ম্যাচ রয়েছে ২৪ মে। আগে সব ম্যাচ জিতি। শুনেছি, কর্তারা সংবাদমাধ্যম বলেছেন, পরের মরসুমে আমাকেই রাখতে চান। তবে আমার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। অন্য কোনও ক্লাবের প্রস্তাবও আপাতত আমার কাছে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy