Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জরুরি বৈঠকে স্পিন ভোঁতা করার রণনীতি

বেঙ্গালুরুতে তিনি কি টেস্টের মোড়ই ঘুরিয়ে দিলেন? তৃতীয় দিনের শেষে এমন প্রশ্ন উঠে পড়েছে। তিনি মানে চেতেশ্বর পূজারা।

ভরসা: রবীন্দ্র জাডেজার উপর ভারতের লড়াই অনেকটা নির্ভর করছে।  পিটিআই

ভরসা: রবীন্দ্র জাডেজার উপর ভারতের লড়াই অনেকটা নির্ভর করছে। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩৮
Share: Save:

বেঙ্গালুরুতে তিনি কি টেস্টের মোড়ই ঘুরিয়ে দিলেন? তৃতীয় দিনের শেষে এমন প্রশ্ন উঠে পড়েছে।

তিনি মানে চেতেশ্বর পূজারা। অস্ট্রেলীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার চিত্রনাট্যই শুধু পাল্টে দিলেন না, অজিঙ্ক রাহানে-কে সঙ্গে নিয়ে দুর্দান্ত পার্টনারশিপ করে ভারতকে প্রবল ভাবে ম্যাচেও ফিরিয়ে আনলেন।

কী ভাবে সম্ভব হল এই প্রত্যাবর্তন? ভারতীয় শিবির সূত্রে খবর, বেঙ্গালুরুতে প্রথম ইনিংসের পর কোচ অনিল কুম্বলে ইমার্জেন্সি বৈঠক করেন ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার-ও। দু’জনে মিলে পুরো ব্যাটিং গ্রুপকে নিয়ে বসে ময়নাতদন্ত করেন, কী ভাবে নাথন লায়ন-দের চক্রব্যূহ থেকে বেরনো যায়।

সেই ময়নাতদন্তেই ধরা পড়ে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অস্ট্রেলীয় স্পিনারদের খেলতে গিয়ে খুব দোনোমোনো করছেন। সামনের পায়ে খেলবেন নাকি পিছনে, তা নিয়ে সকলেই খুব দ্বিধায় ভুগছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে স্টেপ আউট করে মারতে যাচ্ছেন। যেমন সোমবার পূজারার সঙ্গে নট আউট থাকা অজিঙ্ক রাহানে। প্রথম ইনিংসে স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে কুৎসিত ভাবে আছাড় খেয়ে পড়ে আউট হয়েছিলেন।

ব্যাটিং কোচ বাঙ্গারকে সঙ্গে নিয়ে কুম্বলে পরামর্শ দেন, সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে এই দোনোমোনো মনোভাব এখনই ত্যাগ করতে হবে। হয় পুরোপুরি ফ্রন্টফুটে যাব নয়তো ব্যাকফুটে আসব। এমনিতে স্পিন খেলার প্রাথমিক মন্ত্র দু’টো। হয় ঘূর্ণি তৈরি হওয়ার আগেই বলটা খেলে দাও। নয়তো অপেক্ষা করে ব্যাকফুটে এসে খেলো ঘূর্ণি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে। সুনীল গাওস্করের মতো স্পিনের বিরুদ্ধে কিংবদন্তি বরাবর ফ্রন্টফুটে সাপ ছোবল মারার আগেই তাকে মেরে ফেলায় বিশ্বাসী ছিলেন।

বেঙ্গালুরুতে প্রায় ধানক্ষেত হয়ে যাওয়া উইকেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৯৬ রানের সেই অমর ইনিংসেও ইকবাল কাশিমদের সামনের পায়েই বেশি খেলেছিলেন গাওস্কর। যা এই টি-টোয়েন্টি প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অবলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছে।

পূজারার সোমবারের ইনিংস গাওস্করের স্টাইলের বিরোধী। তিনি বেশি খেলেছেন ব্যাকফুটেই। তবু সফল হয়েছেন কারণ কুম্বলেদের পরামর্শে দোনোমোনো মনোভাবটা কাটাতে পেরেছেন। রাজকোট থেকে চেতেশ্বরের বাবা অরবিন্দ পূজারা সোমবার বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ওর মধ্যে স্পিন খেলার সবচেয়ে বড় দু’টো গুণ তো ছিলই। ধৈর্য আর মনঃসংযোগ। আমার ছেলের এই দু’টোই তো সেরা অস্ত্র।’’ ক্রিকেটের প্রাথমিক পাঠ তাঁর বাবার হাতেই শিখেছেন পূজারা।

বাবা অরবিন্দই হলেন পূজারার অজিত তেন্ডুলকর। সচিন তেন্ডুলকরের প্রত্যেকটা ইনিংস দেখে দাদা অজিত তাঁর সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে ময়নাতদন্ত করতেন। কখনও সেই আলোচনা হতো সামনা-সামনি বসে, কখনও ফোনে। ওয়াংখেড়েতে সচিন শেষ ইনিংসে স্কোয়ার কাট মারতে গিয়ে আউট হওয়ার পরেও অজিতের ক্লাস থেকে মুক্তি পাননি। চেতেশ্বরের ব্যাটিংও তেমনই কোচের মতো মন দিয়ে দেখেন তাঁর বাবা। ‘‘এই কারণে মাঠেও যাই না আমি খুব একটা,’’ বলেন তিনি, ‘‘নোট নেওয়ার জন্য টিভি-তে দেখাটা অনেক ভাল।’’

কোচ-কাম-বাবার চোখে আর একটি পরিবর্তন ধরা পড়েছে ছেলের বেঙ্গালুরুর অপরাজিত দ্বিতীয় ইনিংসে। ‘‘ইতিবাচক ব্যাট করেছে। মারার বলটা ছাড়েনি। সিঙ্গলস নিয়েছে। বোলারকে যতটুকু সম্মান দেওয়া প্রাপ্য সেটুকুই দিতে হবে। না হলে ঘাড়ে চড়ে বসবে। যেটা প্রথম ইনিংসে হয়েছিল,’’ বললেন তিনি।

চেতেশ্বরের স্পিন খেলার দক্ষতা দেখে যদিও অবাক নন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন বাঙালি কোচ দেবু মিত্র। ঘরোয়া ক্রিকেটে পুরনো ছাত্রকে ঘূর্ণি উইকেটে এমন অনেক ভাল ইনিংসই খেলতে দেখেছেন তিনি। ‘‘কর্নাটকের বিরুদ্ধে ধুলো ওড়া পিচে ৩৭৫ করেছিল। তাও আবার দ্বিতীয় ইনিংসে। ওকে একটাই কথা বলতাম আমি সৌরাষ্ট্রের কোচ থাকার সময়। স্পিন খেলার সময় সংশয়ে ভোগা চলবে না। হয় সামনে যাও নয়তো পিছনে। এর মাঝামাঝি কিছু নেই,’’ বলে দিলেন দেবু।

কলকাতায় দেবু এবং রাজকোটে অরবিন্দ— দুই কোচই মঙ্গলবার প্রার্থনায় থাকবেন চেতেশ্বরের আরও একটা বড় ইনিংসের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ravindra Jadeja 6 wickets India vs Australia Test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE