Advertisement
E-Paper

হেডিংলের বাঙ্গারকে দেখে শিখুন রাহুলরা

এজবাস্টন টেস্টে ভারতের হারের পরে যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তা হল, একা কোহালি কত কী করবেন? টপ অর্ডার এত শোচনীয় খেললে হাল ফিরবে না। অতীতের একটা ইংল্যান্ড সফরের কথা মনে পড়ছে।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৭
বিষণ্ণ: একা কুম্ভ হয়েও জিততে পারলেন না বিরাট। ছবি: রয়টার্স।

বিষণ্ণ: একা কুম্ভ হয়েও জিততে পারলেন না বিরাট। ছবি: রয়টার্স।

এজবাস্টনে সবে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হয়েছে। টিভিটা খুলতেই চোখ আটকে গেল গ্যালারির দু’টো পোস্টারে। একটায় লেখা, ‘কোহালি বনাম ইংল্যান্ড’। অন্যটায় লেখা— ‘পরবর্তী প্রজন্মের জন্য টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

এই টেস্ট ম্যাচটা মাথায় রাখলে বলতে হবে, দু’টোই একশো ভাগ খাঁটি কথা। সত্যিই তো, এই টেস্টটা বিরাট কোহালি বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচই হয়ে থাকল। আমাদের বোলাররাও খুব ভাল বল করেছেন। কিন্তু ভারতের জেতা-হারার মধ্যে দাঁড়িয়েছিল ওই একটা ব্যাটই। কোহালি আউট হওয়া মাত্র পরিষ্কার হয়ে যায়, ম্যাচের ভাগ্যে কী হতে চলেছে। তবে ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা এ রকম ম্যাচই তো টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখে।

শনিবার খেলার শুরুতেই দীনেশ কার্তিককে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন জিমি অ্যান্ডারসন। কিন্তু তখনও গ্যালারিতে ভারতীয় পতাকার দাপট কম ছিল না, কারণ ক্রিজে যে কোহালি। সঙ্গে হার্দিক পাণ্ড্য। দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছিল, সকালের ধাক্কাটা সামলে দিতে পেরেছেন। ওই সময় স্টুয়ার্ট ব্রড বনাম হার্দিক দ্বৈরথ ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিল!

না, ব্রডের বলে হার্দিক আউট হননি। বরং ইংল্যান্ড পেসারকে তিনটে চোখ ধাঁধানো বাউন্ডারি মারেন হার্দিক। অন ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ আর কব্জির মোচড়ে মিডউইকেট দিয়ে একটা। হার্দিকের শটগুলো দেখে হঠাৎ মনে হল, এ বার না বোলার বদলে দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ঠিক তাই হল। টিভি-তে ওই সময় জো রুটকে দেখে মনে হল, একটু চাপে পড়ে গিয়েছেন। এরই মাঝে দেখলাম, ইংল্যান্ড কোচ ট্রেভর বেলিস একজন রিজার্ভ ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলছেন। এর পরেই সেই ক্রিকেটার জল নিয়ে মাঠে ঢুকে রুটকে কিছু বলে গেলেন।

হয়তো বার্তাটা ইংল্যান্ড কোচের কাছ থেকেই এসেছিল। যার কাছ থেকেই আসুক, এর পরেই বল তুলে দেওয়া হল বেন স্টোকসের হাতে। তার পরে একটা পাঁচ ওভারের স্পেলে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জিতিয়ে চলে গেলেন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার। স্টোকসকে যত দেখছি, একেবারে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ‘ডুপ্লিকেট’ মনে হচ্ছে। সে রকম গতি। দু’দিকেই সুইং করাতে পারেন। চোরা বাউন্সার আছে একটা। কোহালিকে আউট করলেন ফাঁদে ফেলে। প্রথম দু’টো বল অফস্টাম্পের বাইরে বের করলেন। তিন নম্বরটা বিষাক্ত ইনসুইং। কোহালি আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ। ওখানেই ভারতের ভাগ্যটা পরিষ্কার হয়ে যায়। শেষ তিনটে উইকেটের মধ্যে স্টোকস তুলে নিলেন আরও দু’টি।

এজবাস্টন টেস্টে ভারতের হারের পরে যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তা হল, একা কোহালি কত কী করবেন? টপ অর্ডার এত শোচনীয় খেললে হাল ফিরবে না। অতীতের একটা ইংল্যান্ড সফরের কথা মনে পড়ছে। ২০০২ সালে। সেই সময় সিরিজে ০-১ পিছিয়ে পড়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত। প্রথম দু’টো টেস্টে ওপেনার ওয়াসিম জাফর দ্রুত আউট হওয়ায় মিডল অর্ডার চাপে পড়ে যাচ্ছিল। তৃতীয় টেস্ট, হেডিংলেতে ভারত নতুন একজন ওপেনারকে নামায়। প্রথমে ব্যাট করতে হয়েছিল ওই টেস্টে। পিচ ভিজে ছিল। ম্যাথু হোগার্ড, অ্যান্ডি ক্যাডিক, ফ্লিনটফদের বল বিষাক্ত সুইং করছিল। কিন্তু সব কিছু সামলে ওই ওপেনার ২৩৬ বল খেলে দেন। ৬৮ রান করেন। নতুন বলে উইকেট দেননি। এর পরে ভারতীয় মিডল অর্ডারের ত্রিমূর্তি (সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়) সেঞ্চুরি করে বিশাল রান তুলে দেয় স্কোরবোর্ডে। দুই স্পিনার ছিল সৌরভের হাতে। ভারত ওই টেস্ট ইনিংসে জিতেছিল।

সেই ওপেনারের নাম? সঞ্জয় বাঙ্গার। বিরাট কোহালিদের এখনকার ব্যাটিং কোচ!

বাঙ্গার টেকনিক্যালি দারুণ শক্তিশালী ব্যাটসম্যান ছিলেন না। কিন্তু নাছোড় মনোভাব আর অফস্টাম্পটা ঠিক কোথায়, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা— এই দুইকে অস্ত্র বানিয়ে ইংল্যান্ড বোলারদের সুইং সামলে দিয়েছিলেন। এই দলের ব্যাটসম্যানদেরও তাই করতে হবে। বুঝতে হবে, অফস্টাম্পটা ঠিক কোথায় আর বলটা কী করে ছাড়তে হবে। বাঙ্গার একটা কাজ করলে পারেন। হেডিংলের ওই টেস্টের ভিডিয়ো দেখাতে পারেন মুরলী বিজয়, কে এল রাহুলদের। তুলনামূলক স্বল্পদক্ষতার হয়েও যে কী ভাবে নতুন বলটা সামলে দেওয়া যায়, সেটার একটা উদাহরণ বাঙ্গারের ওই ইনিংসটা।

ভারত এই এজবাস্টন টেস্ট হেরে গেল সুইং আর মুভমেন্টের কাছে, গতির কাছে নয়। এ বার সামনে লর্ডস টেস্ট। দ্বিতীয়বার না ভেবে চেতেশ্বর পূজারাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। শিখর ধওয়নকে বাদ দিয়ে রাহুলকে দিয়ে ওপেন করাতে হবে। আর একটু ঝুঁকি নিয়ে কুলদীপ যাদবকেও খেলিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

শেষে আর একটা কথাই বলব। কোহালির থেকে আর কিছু না হোক, লড়াকু মানসিকতাটা যেন একটু ধার নেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। তা হলেই কিন্তু পাঁচ টেস্টের এই সিরিজ জমে যাবে।

স্কোরকার্ড

ইংল্যান্ড ২৮৭ ও ১৮০

ভারত ২৭৪ ও ১৬২

ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস, আগের দিন ১১০-৫ এর পরে)

কোহালি এলবিডব্লিউ বো স্টোকস ৫১

কার্তিক ক মালান বো অ্যান্ডারসন ২০

হার্দিক পাণ্ড্য ক কুক বো স্টোকস ৩১

মহম্মদ শামি ক বেয়ারস্টো বো স্টোকস ০

ইশান্ত শর্মা এলবিডব্লিউ বো রশিদ ১১

উমেশ যাদব ন. আ. ০

অতিরিক্ত ২

মোট ১৬২

পতন: ১-১৯ (বিজয়, ৫.৫), ২-২২ (ধওয়ন, ৭.৩), ৩-৪৬ (রাহুল, ১৪.৬), ৪-৬৩ (রাহানে, ২১.৪), ৫-৭৮ (অশ্বিন, ২৪.৩), ৬-১১২ (কার্তিক, ৩৬.৬), ৭-১৪১ (কোহালি, ৪৬.৩), ৮-১৪১ (শামি, ৪৬.৬), ৯-১৫৪ (ইশান্ত, ৪৯.৬), ১০-১৬২ (হার্দিক, ৫৪.২)।

বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ১৬-২-৫০-২, স্টুয়ার্ট ব্রড ১৪-২-৪৩-২, বেন স্টোকস ১৪.২-২-৪০-৪ স্যাম কারেন ৬-০-১৮-১, আদিল রশিদ ৪-১-৯-১।

৩১ রানে জয়ী ইংল্যান্ড
ম্যাচের সেরা স্যাম কারেন

Cricket Virat Kohli India-England
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy