Advertisement
০৪ মে ২০২৪
এক দিনে ১৬ উইকেট, ব্যাটিং আতঙ্কের নাম ক্রাইস্টচার্চ
India

অতি আগ্রাসী শটেই বিপর্যয়, বিরল আঁধার বিরাট ব্যাটেও

সোমবার সকালে হনুমা বিহারী আর ঋষভ পন্থ যদি প্রথম আধ ঘণ্টা কাটাতে পারে, তা হলে লড়াইয়ে থাকতে পারে ভারত।

ধাক্কা: দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং ধস। কোহালিকে ফিরিয়ে গ্র্যান্ডহোমের উচ্ছ্বাস। ওয়্যাগনারের শিকার রাহানে। এপি

ধাক্কা: দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং ধস। কোহালিকে ফিরিয়ে গ্র্যান্ডহোমের উচ্ছ্বাস। ওয়্যাগনারের শিকার রাহানে। এপি

লক্ষ্মীরতন শুক্ল
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০ ০৪:৪৬
Share: Save:

ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা মনে রেখেও বলতে হচ্ছে, কিছুটা হলেও অ্যাডভ্যান্টেজ নিউজ়িল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০-৬ হয়ে গিয়ে ভারতীয় দল এগিয়ে ৯৭ রানে। ক্রাইস্টচার্চে যে রকম উইকেট, তাতে ‘লিড’ দু’শোর কাছাকাছি হলে আবার ম্যাচ জমে যেতে পারে। রবিবারই দু’দল মিলিয়ে ১৬টা উইকেট পড়েছে। আইসিসি কি দেখছে?

সোমবার সকালে হনুমা বিহারী আর ঋষভ পন্থ যদি প্রথম আধ ঘণ্টা কাটাতে পারে, তা হলে লড়াইয়ে থাকতে পারে ভারত। হনুমার ব্যাটিং যতটুকু দেখলাম, জেদ আর শৃঙ্খলা রয়েছে। ঋষভের উপরে খুব চাপ রয়েছে, সন্দেহ নেই। আমার মনে হয়, ধোনির ক্রিকেট-বই থেকে শিখুক ঋষভ। খুবই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ধোনি, একই সঙ্গে দারুণ বুদ্ধিমানও। হাতে শট থাকলেই তো আর সব সময় খেলা যায় না। বুঝেশুনে খেলতে হয়। ধোনি বছরের পর বছর ধরে সেটা করে দেখিয়েছে। ঋষভও এই কায়দাটা যত তাড়াতাড়ি শিখতে পারবে, ততই ওর জন্য এবং ভারতীয় দলের মঙ্গল।

ক্রাইস্টচার্চে ভারতীয় লড়াইকে আরও শক্তপোক্ত করতে পারে রবীন্দ্র জাডেজার উপস্থিতি। অশ্বিনকে বসিয়ে ওকে খেলানোর সিদ্ধান্ত একদম ঠিক। জাডেজার মতো উপযোগী ক্রিকেটার খুব কমই পাওয়া যায়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিন বিভাগেই অবদান রাখবে। কী অসাধারণ ক্যাচ নিল রবিবার। দশকের সেরা ক্যাচ কি না, তর্ক উঠে গিয়েছে। সর্বকালের সেরা ক্যাচের তালিকাতেও ঢুকে পড়বে। দু’টো মূল্যবান উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে যদি প্রয়োজনীয় ইনিংস খেলে দেয়, বিদেশে জাডেজাই নিয়মিত ভাবে এক নম্বর স্পিনার হয়ে যাবে বিরাটদের।

ভারতীয় দলের জন্য পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ অন্য রকম হতে পারত, যদি ব্যাটিং ফের ব্যর্থ না হত। সকালে বোলাররা দারুণ প্রত্যাঘাত করেছিল। বুমরা পুরনো ফর্মে ফেরার ঝলক দেখাল, শামি দুর্দান্ত বল করল, উমেশও অবদান রাখল। কিন্তু ব্যাটিং ফের হোঁচট খেল। একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। এমন দুঃসাহসিক সব স্ট্রোক কেন খেলছে আমাদের ব্যাটসম্যানেরা? চেতেশ্বর পুজারাকে দেখলাম প্রথম ইনিংসে অফস্টাম্পের বাইরের শর্ট বল টেনে হুক মারতে যাচ্ছে। এমন শট পুজারার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত। টেস্ট ব্যাটিংয়ে আগ্রাসনের সঙ্গে সাবধানতার সুন্দর মিশেল দরকার হয়। ভারতীয় ব্যাটিংকে দেখে মনে হচ্ছে, অতি আগ্রাসী হয়ে পড়ছে।

পৃথ্বী শ দারুণ প্রতিভাবান বুঝলাম। কিন্তু থিতু হয়ে যাওয়ার পরেও বাজে শটে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসছে। এ দিন শর্ট বলের সামনে বাঁ-হাতে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে কী যেন একটা শট খেলল। বেলুনের মতো উঁচু হয়ে গিয়ে সহজ ক্যাচ। কেউ কি পৃথ্বীকে মনে করিয়ে দেবে ভাই, তুমি টেস্ট ক্রিকেট খেলছ আর দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে নেমেছ! আইপিএল এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মঞ্চে দ্রুত গতিতে ৪০ বা ৫০ হয়তো কাজে দেয়। টেস্ট ক্রিকেটে কিন্তু ওটাকে মাঝারি স্কোর বলে। এই নিউজ়িল্যান্ড সফরে একাধিক বার পৃথ্বীকে শর্ট বলের সামনে বেসামাল দেখাল। বাকি দলগুলিও যা দেখে রাখছে এবং এর পরে তারাও যদি একই নকশায় ওকে আক্রমণ করে, অবাক হওয়ার নেই।

ভারতীয় দলের জন্য সব চেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ অধিনায়ক বিরাট কোহালির ফর্ম, অজিঙ্ক রাহানের শর্ট বলের সামনে অসহায় হয়ে পড়া এবং চেতেশ্বর পুজারার ম্যারাথন ইনিংস বন্ধ হয়ে যাওয়া। এই ত্রয়ীই তো ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। রাহানেকে যে ভাবে বডিলাইন বোলিং করে আউট করল নিউজ়িল্যান্ডের বোলাররা, তা উদ্বেগজনক। কুৎসিত দেখাল ওর আউট হওয়ার ধরন। বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়া সফর রয়েছে। সেখানে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্করাও একই রকম বাউন্সার-বৃষ্টিতে রাহানেকে স্বাগত জানালে অবাক হওয়ার নেই।

অস্ট্রেলিয়াতে সমান বাউন্সের ভাল পিচে খেলা হয়। নিউজ়িল্যান্ডে অবশ্য পেস, বাউন্স, সুইং, সিম— কোনও কিছু বাজে থাকে না। কেন উইলিয়ামসনের দেশে ব্যাটসম্যানদের জন্য কোনও রকম আতিথেয়তা পাওয়ার আশা নেই। বুমরা, শামি, উমেশরাও তাই পাল্টা জবাব দিতে পেরেছিল সকালে। তারই মধ্যে নিউজ়িল্যান্ড শেষ তিন উইকেটে তুলে নিল ৭২ রান। তার মধ্যে জেমিসনই করে গেল ৪৯।

২০১৪-তে ইংল্যান্ডে ভয়াবহ সফর গিয়েছিল কোহালির। বার বার অ্যান্ডারসন, ব্রডের আউটসুইঙ্গারে অফস্টাম্পের বাইরে আউট হচ্ছিল। সারা সিরিজে গড় ছিল কুড়িরও কম। তার পর বিশ্ব দেখেছে এক অন্য বিরাটকে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে দুনিয়ার এক নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে উঠে এসেছে ও। প্রায় ছ’বছর ধরে টানা রাজ করার পরে আবার একটা খারাপ সফর গেল বিরাটের। নিউজ়িল্যান্ডে সব ফর্ম্যাট মিলিয়ে এগারোটি ম্যাচ খেলে এ বার ওর গড় কুড়ির আশেপাশে। একটাও সেঞ্চুরি নেই। গোটা টেস্ট সিরিজে রান পেল না। উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে, ভিতরে আসা বলে আউট হচ্ছে, যেটা কি না ওর শক্তির জায়গা। কব্জির মোচড়ে কত বোলারকে যে ধ্বংস করেছে বিরাট, লিখে শেষ করা যাবে না। ফর্ম এমনই জিনিস যে, রবিবার কলিন ডি’গ্র্যান্ডহোমের মতো অলরাউন্ডারের ভিতরে আসা বলেও আউট হয়ে গেল বিরাট। নিজেও বুঝতে পেরেছিল, পরিষ্কার আউট। তাই পুজারার সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেওয়ার চেষ্টাও করল না।

বিরাট দুর্ধর্ষ ‘ফাইটার’। পাঁচ-ছয় বছর আগে আইপিএলে যখন ওর খারাপ সময় যাচ্ছিল, ইডেনে কথা হয়েছিল। আমি তখন কেকেআরে। একটাই কথা বলেছিল, ‘‘ভাইয়া, জিন্দেগি ইহা পে রুকেগা নহি (জীবন এখানেই থামবে না।) বিরাট বা ধোনির মতো চ্যাম্পিয়নদের জন্যই তো কথাটা তৈরি হয়েছে— ফর্ম সাময়িক, আসলে নৈপুণ্য চিরন্তন।

ব্যাটসম্যান বিরাট নিশ্চয়ই অফ ফর্ম কাটিয়ে ফিরবে। ভারত সিরিজে ফিরবে কি না, বলে দেবে হয়তো সোমবার সকালের প্রথম ঘণ্টা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India New Zealand Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE