Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সাফল্যের রাতে ডাক আইপিএল ট্রায়ালে

উপেক্ষার যন্ত্রণার থেকেই জন্ম তিনশোর মহাকীর্তির

মহাকীর্তির পরের দিনই তাঁর সামনে খুলে গেল বিশ্বের সেরা ক্রিকেট লিগের দরজা। আইপিএল। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির ললিতা পার্কে টি-টোয়েন্টির প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন মোহিত আহলাওয়াত।

মোহিত আহলাওয়াত

মোহিত আহলাওয়াত

রাজীব ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

মহাকীর্তির পরের দিনই তাঁর সামনে খুলে গেল বিশ্বের সেরা ক্রিকেট লিগের দরজা। আইপিএল।

মঙ্গলবার নয়াদিল্লির ললিতা পার্কে টি-টোয়েন্টির প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন মোহিত আহলাওয়াত। সেই মহাকীর্তির চব্বিশ ঘণ্টা পরই ক্রিকেট জীবনের এক বড় পরীক্ষায় ঢুকে পড়লেন ২১ বছরের বিস্ময় তরুণটি।

মঙ্গলবার ললিতা পার্কে তিনশোর ঝড় তোলার পর মোহিতের মোবাইলে আসা শয়ে শয়ে ফোনের মধ্যে একটা কলের ওপারে ছিলেন সুনীল ওয়ালসন। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডের সদস্য তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘কাল কোটলায় চলে এসো। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ট্রায়াল আছে।’ ললিতা পার্ক থেকে ফিরোজ শাহ কোটলা— এক ঝোড়ো তিনশোই খুলে দিল মাঝের এই রাস্তাটা।

বুধবার নিজের লাকি কিটব্যাগ কাঁধে তুলে নিয়ে মোহিত ছোটেন কোটলায়।

তার পর কী হল?

কোটলার ট্রায়াল ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে এ দিন মোহিত ফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘চার ওভার পার্টনারশিপে ব্যাট করলাম। দশ-বারোটা বল পেয়েছিলাম। চারটে চার আর গোটা তিনেক ছয় মেরেছি। কাল আবার যেতে বলেছেন ওঁরা।’’ যাঁদের নজরদারিতে পরীক্ষা দিলেন, তাঁদের মধ্যে ওয়ালসন ছিলেন কি না, তা জানতে চাইলে মোহিত বললেন, ‘‘এই রে, তা তো জানি না। আমাকে যেতে বলেছিলেন ওঁরা। আমি গিয়ে ব্যাট করে চলে এলাম।’’

তাঁর ব্যাটের গর্জন যে ললিতা পার্কের ৬০ গজের মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সেই হুঙ্কার কোটলার গ্যলারি পর্যন্তও পৌঁছে যেতে পারে, তা বোধহয় এ দিন বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন পানিপথ থেকে আসা কৃষক পরিবারের ছেলেটি। শেষ পর্যন্ত আইপিএলের দরজা দিয়ে তিনি ক্রিকেটের সবচেয়ে ঝকঝকে গ্রহে ঢুকে পড়বেন কি না, আর এক ক্রিকেটজীবনের রূপকথা লেখা হবে কি না, সে তো পরের কথা। কিন্তু ৭২ বলে তিনশোর ইনিংসটা যে সারা বিশ্বের কাছেই এক ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

সারা বিশ্বের ক্রিকেট মিডিয়া এখন মোহিতে মুগ্ধ। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান— ইন্টারনেট ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবারের এই রান বিস্ফোরণের বর্ণনা। সংবাদপত্র থেকে ওয়াবসাইট— দেখা যাচ্ছে মোহিত কীর্তি।

আরও পড়ুন:

ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে হগ

প্রকাশ পাড়ুকোন হয়ে ওঠাই লক্ষ্য বঙ্গ তরুণের

৩৯টা ছয় ও ১৪টা চারের অতিমানবীয় ইনিংসের প্রশংসায় সবাই।

আর নায়ক নিজে বলছেন, ‘‘এটা যে আমার পক্ষে সম্ভব, তা জানতাম। সব ম্যাচেই ব্যাট করতে নেমে মনে হয়, ঝড় বইয়ে দিই। কিন্তু পছন্দের উইকেট আর মারার বল তো আর সব সময় পাওয়া যায় না।’’

‘‘এটাই মোহিতের সবচেয়ে বড় গুণ। ও মারকুটে অথচ ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটসম্যান। মারার বল না পেলে কখনও মারবে না। চালানোর বল পেলে তবেই চালায়’’, দিল্লি থেকে এ দিন ফোনে বলছিলেন মোহিতের কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ। নামটা চেনা চেনা লাগতে পারে। গৌতম গম্ভীর, উন্মুক্ত চন্দরা এই কোচের হাতেই গড়া। তাঁদের পর তাঁর আর এক সুযোগ্য ছাত্র এই মোহিত। তাঁকে নিয়ে সঞ্জয় বললেন, ‘‘এ রকম একজন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানকে একশো শতাংশ কাজে লাগানো উচিত। না হলে ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে।’’ কোটলার কাছে ভরত নগর অ্যাকাডেমিতে মোহিত ও তাঁর পরিবারের থাকার জায়গাও করে দিয়েছেন সঞ্জয়।

দিল্লিতে ফোন করে জানা গেল গত বছর ডিডিসিএ-র ৪০ ওভারের টুর্নামেন্টে একটা ম্যাচে ২২৪-এর ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। অন্য এক স্থানীয় টুর্নামেন্টে শেষ উইকেটে ১৪০-এর টার্গেটে পৌঁছনোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাট করতে নেমে তিনি একাই ১৩৯ তুলে দেন। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে মাত্র এক রান করতে দিয়েছিলেন সে দিন। এমনই সিংহহৃদয় এই ছেলে।

দিল্লির হয়ে তিনটে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচেও খেলেছিলেন মোহিত। কিন্তু তেমন রান না পাওয়ায় সেই যে বসিয়ে দেওয়া হল তাঁকে, তার পর আর আঞ্চলিক পর্বের টি-টোয়েন্টি দলেও ডাক পাননি। কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই কোচ সঞ্জয়ের কাছে। বললেন, ‘‘দিল্লির টিম সিলেকশন নিয়ে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। আপনারা তো অনেক কিছুই জানেন। বেশি কিছু বললে আবার ছেলেটার ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ কিন্তু এই ঐতিহাসিক ইনিংসের পর এ বার বিজয় হাজারে ট্রফিতে তাঁর খেলার সুযোগ আসতে পারে বলে মনে করেন কোচ। হয়তো আইপিএলেও।

দিল্লির টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ না পাওয়াটা মোহিতের কাছে বড় ধাক্কা। বললেন, ‘‘জানি না কেন আমাকে ডাকা হয়নি। আমি তো কম রান করিনি স্থানীয় ক্রিকেটে। কষ্টটা জমা ছিল বুকে। তিনশোর সেই ইনিংসের আগের রাতে আমার সঙ্গে এই নিয়ে একজনের কথাও হয়েছিল। খুব রাগ হয়েছিল তখন। সেটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল সে দিন। এমন একটা ইনিংস খেলতে চাইছিলাম, যাতে সবাই আমাকে নিয়ে আলোচনা করে। তবে বিশ্বাস করুন, সে দিন কোনও প্ল্যান করিনি। মারার বল পেয়ে তুমুল মেরেছি। আমি যা করে থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mohit Ahlawat 300 Runs IPL T20
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE