Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
লন্ডনে ফিরে অন্য হোটেলে বিরাটরা

পাক বধের পরে এ বার সঙ্গী স্ত্রীরা

আবহাওয়ার দিক থেকে বলতে গেলে, বার্মিংহামে উদ্বেগের কালো মেঘ কেটে গিয়ে উজ্জ্বল ক্রিকেটের রোদ্দুর উঠেছিল। লন্ডনে কিন্তু আতঙ্কের মেঘ ফিরে এসেছে।

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০৫:২২
Share: Save:

পাকিস্তানকে হারানোর সেলিব্রেশন যে লন্ডনের কোনও রেস্তোরাঁয় গিয়ে সারবেন বিরাট কোহালি-রা, তার উপায় নেই। নিরাপত্তারক্ষীদের বিশেষ অনুমতি না নিয়ে তাঁরা আগের মতো ঘুরে বেড়াতে পারবেন না।

আবহাওয়ার দিক থেকে বলতে গেলে, বার্মিংহামে উদ্বেগের কালো মেঘ কেটে গিয়ে উজ্জ্বল ক্রিকেটের রোদ্দুর উঠেছিল। লন্ডনে কিন্তু আতঙ্কের মেঘ ফিরে এসেছে। যেমন আকাশে, তেমন মনের মধ্যেও। বার্মিংহামের মতো মনের জানলা খোলার এখানে উপায় নেই যতক্ষণ না নিরাপত্তা অফিসাররা সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছেন।

কোহালিরা নিশ্চয়ই নিজেদের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলেন সোমবার। এজবাস্টনে পাকিস্তানকে তাঁরা উড়িয়ে দিয়েছেন দুর্ধর্ষ টোটাল ক্রিকেট খেলে, কোনও সন্দেহ নেই। শোয়েব মালিক-রা দাঁড়াতেই পারেননি, খুব সত্যি কথা। সব মিলিয়ে বাহুবলী ক্রিকেট প্রদর্শনী।

কিন্তু ভাগ্যের কথাও বলতে হবে যে, পূর্বাভাস মতো রবিবার খুব বৃষ্টি হল না। সেটা শুরু হল সোমবার সকাল থেকেই। বার্মিংহাম ছাড়ার সময় দেখা গেল আকাশ পুরো কালো হয়ে রয়েছে। মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। এ রকম আবহাওয়া রবিবারে থাকলে ম্যাচ শেষ করা কঠিন হয়ে যেত। বার্মিংহাম থেকে লন্ডন এসে দেখা গেল, একই অবস্থা। কালো করে থাকা আকাশ আর মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি। শোনা গেল, সন্ধে থেকে নাকি সারারাতের বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

আরও পড়ুন: এই হার কষ্টের, বলছেন ইমরান খান

চলতি সপ্তাহটা কোহালিরা থাকবেন লন্ডনেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপের শেষ দু’টি ম্যাচই এখানে। শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু লন্ডনে জঙ্গিহানার প্রেক্ষিতে বার্মিংহামের মতো খোলামেলা পরিবেশ আর ঘোরাঘুরির স্বাধীনতা তাঁরা এখনই পাবেন না। বাইরে রেস্তোরাঁয় দল বেঁধে বেরিয়ে পড়া সাময়িক বন্ধ রেখে হোটেলে খাবার আনিয়ে নেওয়ার প্রথায় ফিরতে হবে। পাবলিক প্লেসে যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আসছে তাঁদের জন্য।

ইংল্যান্ডে এসে প্রথমে লন্ডনেই ঘাঁটি গেড়েছিল ভারতীয় দল। ওভালে তারা দু’টো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। সেই সময় যে হোটেলে বিরাটরা ছিলেন, সেটাও এ বার পাল্টে ফেলা হয়েছে। জানা গেল, সেই হোটেল ছিল জঙ্গিহানার ঘটনাস্থলের কাছাকাছি। ভারতীয় দলের কয়েক জন সদস্য এখানে এসে লন্ডন ব্রিজে ঘুরতে গিয়েছেন প্রায় রোজই। সেই স্বাধীনতা বার্মিংহাম থেকে লন্ডনে ফিরে তাঁরা আর পাবেন না।

এমনিতে সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তার বেষ্টনীতে খুব বেশি বদল ঘটেছে বলে মনে হল না। বার্মিংহাম থেকে ট্রেন বা বাসে করে লন্ডনে আসতে গেলে খুব নিরাপত্তার কড়াকড়ি চোখে পড়বে না। দিব্যি ব্যাগ নিয়ে লোকে বাসে উঠে পড়ছে। কোনও চেকিং নেই। এক্স-রে মেশিনে ব্যাগ দেওয়ার বালাই নেই। বিস্মিত শোনালেও সত্যি। ম্যাঞ্চেস্টার আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে জঙ্গিহানার পরে লন্ডনে সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ঘটল। তার পরেও সাধারণ মানুযের জন্য তেমন কোনও তল্লাশি বা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় কয়েক জনের কাছে এ নিয়ে জানতে চাওয়ায় তাঁরা বললেন, এ দেশে এটাই সিস্টেম। এত কাল ধরে চলে এসেছে। ‘‘তবে এ বার এক্স-রে মেশিন বসবে সব জায়গায়। জনতা দাবি তুলতে শুরু করেছে,’’ বললেন লন্ডনের এক ট্যাক্সিচালিকা।

সাধারণ মানুষদের থেকে ক্রিকেটারদের পরিস্থিতি খুব সাংঘাতিক কিছু আলাদা নয়। লন্ডনে প্রস্তুতি ম্যাচের সময় বা বার্মিংহামেও ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে খুব কাছাকাছি চলে আসা যাচ্ছিল কোহালিদের। তা দেখে দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার এবং ভারতীয় বোর্ডের নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান নীরজ কুমার অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আইসিসি-কে বাড়তি নিরাপত্তার কথা বলা হয়।

ভারত বা উপমহাদেশে খেলা হলে ক্রিকেটারদের আশেপাশে যে রকম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনী তৈরি করা হয়, সে রকম এখানে দেখাই যাবে না। ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভক্তদের অটোগ্রাফ এবং সেলফির আবেদন নিশ্চয়ই মেটানো হবে। কিন্তু তাঁদের নিরাপদ দূরত্বে রাখা হোক।

লন্ডন ব্রিজের কাছে যে রাতে জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটে, সেই সময় ভারতীয় দল ছিল বার্মিংহামে। সেই রাতেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, এখন ক’দিন ইচ্ছে মতো বাইরে বেরনো যাবে না। ক্রিকেটারদের কাছে তাঁদের পরিবার থেকেও উদ্বিগ্ন ফোন-কল আসতে থাকে। যদিও আইসিসি নিরাপত্তা টিম আশ্বস্ত করেছে, তারা নজরদারি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এর মধ্যেই ক্রিকেটারদের মানসিক ভাবে ফুরফুরে রাখতে, স্ত্রী-পরিবারকে আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানকে হারানোর পরের দিনই অনেকের স্ত্রী, পরিবার এসে পড়েছে। লন্ডনে নিজের ফাউন্ডেশনের বিশেষ চ্যারিটি ডিনার দিয়েছিলেন বিরাট কোহালি। সেখানে ক্রিকেটারেরা সবাই সপরিবার আমন্ত্রিত ছিলেন। আশা করা হচ্ছে, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের মধ্যে পাক-বধ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যাত্রা শুরু আর পরিবারের উপস্থিতি রাহানেদের ফুরফুরে রাখবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE