E-Paper

ইতিহাসে ভরা মাঠে হাতছাড়া ইতিহাস

সৃজেশ, হরমনপ্রীতরা যেখানে জার্মানির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন, সেই স্টেডিয়ামের নাম ইভ্‌স জ়ু মানোয়া। এত ঐতিহাসিক কেন্দ্র এই অলিম্পিক্সে আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০৯
বিধ্বস্ত: হারের পরে বিষণ্ণ ভারতীয় খেলোয়াড়েরা।

বিধ্বস্ত: হারের পরে বিষণ্ণ ভারতীয় খেলোয়াড়েরা। ছবি: সংগৃহীত।

ব্যারন পিয়ের দে কুবার্তিন? ভারত-জার্মানি হকি সেমিফাইনাল দেখতে এসেছেন? কাকে সমর্থন করছেন তিনি?

সেই একই রকম বড়, ঝোলা গোঁফ। সেই প্রফেসরের ভঙ্গিতে স্যুট-টাই পরে স্টেডিয়াম চক্কর দিচ্ছেন। কিন্তু ১৯৩৭-এ মারা যাওয়া একটা লোক। এখন কোথা থেকে হঠাৎ উদয় হবেন?

ধাঁধার উত্তর খোঁজার ফাঁকেই ওদিকে হকি ম্যাচ জমে গেল। সাত মিনিটেই পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে এগিয়ে গেল ভারত। স্টেডিয়াম ‘ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া’ ধ্বনিতে মেতে উঠেছে। জার্মান জাত্যাভিমান বলে একটা কথা খুব চালু আছে খেলার মাঠে। ফুটবলে সেই মনোভাব এই মুহূর্তে ততটা দেখা যাচ্ছে না। ইউরোতে নিজেদের দেশে হেরে গিয়েছে। কিন্তু হকিতে এখনও ধরে রেখেছে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল ২-১ এগিয়ে গেল পেনাল্টি কর্নার ও পেনাল্টি থেকে গোল করে। চাপের মধ্যে ভারত।

এর মধ্যেই গ্যালারির অন্য দিকে আবিষ্কার করা গেল আর এক পুরনো কিংবদন্তিকে। ইনি কি অ্যালিস মিয়া? মেয়েদের অলিম্পিক গেমসের জনক? দেখে তো সে রকমই মনে হচ্ছে। কিন্তু এখানেও বড় খটকা। ১৯৫৭-তে প্রয়াত কেউ এখন কী করে ফিরে আসবেন? কেউ প্ল্যাঞ্চেটে ডাকল নাকি?

কোনওটাই ভুল দেখা নয়। প্যারিস অলিম্পিক্স নানা দিক দিয়েই চমকে দিচ্ছে। যেমন প্রথমবার খোলা আকাশের নীচে স্যেন নদীতে তাক লাগানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। নানা ঐতিহাসিক স্থানে গেমসকে নিয়ে যাওয়া। এ দিন তেমনই ভারত বনাম জার্মানি হকি ম্যাচে ছিল পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনা।

সৃজেশ, হরমনপ্রীতরা যেখানে জার্মানির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন, সেই স্টেডিয়ামের নাম ইভ্‌স জ়ু মানোয়া। এত ঐতিহাসিক কেন্দ্র এই অলিম্পিক্সে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এখানেই ১৯২৪-এ শেষ বার প্যারিসে হওয়া অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেই প্রথম গেমসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল। কুবার্তিন তখনও বেঁচে এবং গেমসের নেতৃত্বে। এ ভাবেই স্টেডিয়ামে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মোটা গোঁফ নিয়ে। তাঁকে স্মরণ করার জন্য কুবার্তিনের মতো সাজিয়ে এক জনকে তাই স্টেডিয়ামে ঘোরানো হল। অনেকে ছবি তুলছেন তাঁর সঙ্গে। ভাগ্য ভাল থাকলে সেই ছবি মাঠের স্ক্রিনে ভেসে উঠতে পারে। এই নকল কুবার্তিনই বললেন, অ্যালিস মিয়াও আজ আছেন স্টেডিয়ামে। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, প্যারিসে একশো বছর আগে হওয়া সেই গেমসেই প্রথম মেয়েরা অংশ নিল। মেয়েদের খেলার অধিকারের জন্য অ্যালিসের লড়াই না থাকলে যা সম্ভব হত না। এ বারের গেমসে প্রথম সমসংখ্যক পুরুষ ও মহিলা প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে। তাই আরও বেশি করে অ্যালিসকে মনে করার দিন। এক জন দেখালেন, একশো বছর আগে এখানেই এই হকি স্টেডিয়ামের গায়েই ছিল গেমস ভিলেজ।

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, চারদিকে ইতিহাসকে ফেরানোর এমন এক আবহ। তার মধ্যে ভারতীয় হকির স্বর্ণযুগ কি ফিরতে পারে না? কিন্তু সোনার লড়াইয়ে আর পৌঁছনো হল না। জার্মানির কাছে ২-৩ হেরে গিয়ে এখন স্পেনের বিরুদ্ধে ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে নামতে হবে সৃজেশ, হরমনপ্রীতদের। ডাচরা চার গোলে হারিয়েছে স্পেনকে, তাই ব্রোঞ্জের ম্যাচও কিন্তু সহজ হবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Paris Olympics 2024 Indian Hockey Team Hockey

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy